ওয়াকফ, একটি ইসলামী সামাজিক আর্থিক (Islamic social finance) প্রতিষ্ঠান, যার গৌরবময় ঐতিহ্য মুসলিম দেশগুলোতে হারিয়ে যেতে বসেছে। কোনো সম্পদ (জায়গা-জমি, নগদ অর্থ সহ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি) নিজের মালিকানা থেকে মুক্ত করে স্থায়ীভাবে আল্লাহর মালিকানায় অর্পণ করা এবং তা থেকে প্রাপ্ত আয় অন্য কারো অনুকূলে দান করাকে ওয়াকফ বলা হয়ে থাকে। সাধারণত তিন ধরনের ওয়াকফ দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণ ওয়াকফ যার কোন সুনির্দিষ্ট খাত নির্ধারিত নাই, যেকোন আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন খাতে ব্যয় করা যায়। সুনির্দিষ্ট ওয়াকফ, ওয়াকিফ তথা ওয়াকফ প্রতিষ্ঠাতা, কোন খাতে ওয়াকফের আয় ব্যয় করা যাবে তা নির্ধারণ করে দেন। দুই পদ্ধতির সমন্বয়ে মিশ্র ওয়াকফ ও দেখা যায়।
জাকাতের মত ওয়াকফের আয়ের কোন সুনির্দিষ্ট খাত নির্ধারিত নয়। ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে অর্জিত অর্থ তাই সমাজের সকল স্তরের মানুষের, মুসলিম ও অমুসলিম, কল্যাণে ব্যয় করা যায়। শুধু যে মানুষ তাই নয়, পশু-পাখি পর্যন্ত ওয়াকফের সুবিধা ভোগ করতে পারে। তৃষ্ণার্ত পাখিকে পানি পান করানোর জন্যও ওয়াকফের উদাহরণ আছে। এক কথায়, একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমস্ত কর্মকাণ্ডকে ওয়াকফের আওতায় আনা সম্ভব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় থেকে শুরু করে ওসমানীয় সাম্রাজ্য পর্যন্ত মুসলিম দেশগুলোতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ওয়াকফ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ভারতীয় উপমহাদেশে দুই শত বছরের ব্রিটিশ রাজ শক্তিশালী এই ইসলামী সামাজিক প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের শেষ পর্যায়ে নিয়ে যায়। পঞ্চাশের দশকে ইসলামী অর্থনীতির পুনর্জাগরণের সাথে সাথে মুসলিম দেশগুলো ওয়াকফের হারানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হয়।
বাংলাদেশেও রয়েছে ওয়াকফের এক গৌরবময় ইতিহাস। ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসন অনেক সফল ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। দাতা হাজি মহসিন যে বিশাল সম্পত্তি এই দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণে দান করে গেছেন তার সুফল আজও এই দেশের আপামর জনতা পাচ্ছে। আমাদের অনেকের কাছেই অজানা যে দেশের তিনটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ওয়াকফের সম্পত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে স্বাধীনতার পর থেকে বিশাল ওয়াকফ সম্পত্তির হরিলুট হয়েছে। একদিকে অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্ম্য, অন্যদিকে মুতাওয়াল্লিদের অদক্ষতা, দুর্নীতি ও উদাসীনতা বাংলাদেশের ওয়াকফ ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে রেখেছে। অপর্যাপ্ত জনবল নিয়ে ওয়াকফ প্রশাসন কতটুকু ভূমিকা পালন করতে পারবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এখনও অধিকাংশ ওয়াকফ অনিবন্ধিত রয়ে গেছে। নিবন্ধিত ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানসমূহ ও সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। দুঃখের বিষয় দেশের অধিকাংশ মানুষের ধারণা ওয়াকফ মানে শুধু মসজিদ, মাদ্রাসা, ও এতিমখানার জন্য জায়গা দান করা। সাধারণত মসজিদের নামে বিঘার পর বিঘা জমি ওয়াকফ করা। তারপরও প্রতি শুক্রবার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তুলে ইমাম সাহেব ও মুয়াজ্জিনের বেতন-ভাতা দিতে হয়। যা মুসলিম হিসেবে আমাদের ব্যথিত করে।
উচ্চ শিক্ষা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে ৪৫ লক্ষেরও বেশি শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষায় নিয়োজিত। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ শুধু জ্ঞান বিতরণের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। গবেষণা, উদ্ভাবন ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় আমরা অনেকটাই পিছিয়ে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সরকারি তহবিলের উপর অতি মাত্রায় নির্ভরশীল। সরকারি বরাদ্দের অধিকাংশ চলে যায় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়। গবেষণা ও প্রকাশনা উপেক্ষিত থাকে যুগের পর যুগ। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই অর্থ বছরে ৮৬৯ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করে যাতে গবেষণা খাতে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে মাত্র ১.০৯ শতাংশ। আরেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেট ছিল ৩৪০ কোটি টাকা। তার মধ্যে গবেষণা ও প্রকাশনা পেয়েছে মাত্র ১.২৪ শতাংশ। দেশের ৪৯ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থা কম বেশি একই রকম।
ইউজিসি তথ্য মতে, বর্তমানে ১০০ এর অধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে তিন লাখ ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছে। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চাপের মধ্যে আছে। ক্রমহ্রাসমান আর্থিক অবস্থার মধ্যে শিক্ষার গুণগত মান বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। হাতে গোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া গবেষণা ও প্রকাশনা তেমন অগ্রাধিকার পাই না বললেই চলে। ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনেও এই করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, কিছু প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ২০ বছর পরেও তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফির উপর নির্ভর করে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পাওয়ায় সামপ্রতিক সময়ে আমরা দেখেছি যে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিক্রির কথা সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। দুর্বল ব্যবস্থাপনা, তহবিলের অপব্যবহার, আয়ের বিকল্প উৎস না থাকা এবং ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে শিক্ষা খাতে যেখানে বরাদ্দ রাখা উচিত জিডিপির ৫-৬ শতাংশ বা জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ সেখানে আমাদের বরাদ্দ অর্ধেকের একটু বেশি। সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে শিক্ষাকে অন্যান্য উন্নয়ন খাতের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও উন্নত দেশগুলোতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ তাদের মোট তহবিলের পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত সরকার থেকে পেয়ে থাকে। একথা অনস্বীকার্য যে, টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে উচ্চ শিক্ষা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। মানব সম্পদ উন্নয়ন ও সৃজনশীল উদ্যোগকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষা উৎপাদনশীলতার গতিকে ত্বরান্বিত করে। যে দেশ মানব সম্পদ উন্নয়নে যত বেশি উন্নত সে দেশ তত দীর্ঘমেয়াদে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উপভোগ করে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেলেও কোভিড-১৯ আমাদের দুর্বলতা গুলো আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক বেকার হয়ে পড়ুয়া স্কুল-কলেজের মত বিশ্ববিদ্যালয়েও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই সঙ্কটকালীন সময়ে বৃত্তি এবং উপবৃত্তি দ্বারা উদার সহায়তা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল নেই। সরকারের একার পক্ষে বিশাল অর্থায়নের ব্যবস্থা করা এক কথায় অসম্ভব। বিশাল অর্থায়নের এই ঘাটতি মেটাতে বিকল্প উৎস খোঁজার কোন বিকল্প নাই।
বেসরকারি ও সরকারি উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক মডেল সম্পর্কে আমাদের গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করা এখন সময়ের দাবি। উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেবলমাত্র সরকারি অর্থায়নের উপর নির্ভর করে না তাদের অর্থের বিভিন্ন বিকল্প উৎস রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের শিক্ষা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সামাজিক সুরক্ষা, ও দারিদ্র্য বিমোচনে ওয়াকফ কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মালয়েশিয়ার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য সরকারি তহবিল সামপ্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং তাদেরকে ওয়াকফ তহবিল সহ অর্থের অন্যান্য বিকল্প উৎস সন্ধান করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
ইসলামের শুরু থেকেই ওয়াকফ শিক্ষা ও সামাজিক বিকাশসহ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ইসলামী ইতিহাসের প্রথম ওয়াকফ প্রতিষ্ঠান ছিল কুবা মসজিদ এবং মসজিদে নববী। ওসমানীয় ও মামলুক শাসন আমলে ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বাধিক বিকাশ লাভ করে। ৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে মিশরে প্রথম ওয়াকফ বিশ্ববিদ্যালয় – আল-আজহার প্রতিষ্ঠা লাভ করে যা আজও মাথা উঁচু করে ঠিকে আছে। ১২০০ খ্রিস্টাব্দে মরোক্কোর ফেজে প্রতিষ্ঠিত হয় আল-কুরাভিনিন নামে আরেকটি ওয়াকফ বিশ্ববিদ্যালয়। জেনে আশ্চর্য হবেন যে, অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন অঙফোর্ড এবং কেমব্রিজের মত শীর্ষস্থানীয় পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ওয়াকফের ধারণা থেকে। অনেকেই মনে করেন ইংলিশ ট্রাস্ট আইনটি এসেছে ইসলামী ওয়াকফের উপর ভিত্তি করে।
বর্তমানে ওয়াকফ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাটি মুসলিম বিশ্বজুড়ে প্রসার লাভ করেছে। তুরস্ক, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া এই ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তুরস্কে বর্তমানে ৭৬ টি ওয়াকফ বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তার মধ্যে ইস্তাম্বুলে রয়েছে ৩৮ টি বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিমধ্যে অনেক ওয়াকফ বিশ্ববিদ্যালয় সুনাম ও সুখ্যাতি ছড়িয়েছে। এর মধ্যে সাবানছি বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। মালয়েশিয়ায় এমন কিছু বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যা ইতিমধ্যে তাদের উচ্চ শিক্ষার কার্যক্রমে নিজস্ব ওয়াকফ ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় ধারণাটি প্রতিষ্ঠা করেছে; এর মধ্যে রয়েছে কল্যাণ পরিষেবা এবং একাডেমিক বা পেশাদার প্রোগ্রামস। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো ইউপিএম (মালয়েশিয়ার পুত্র বিশ্ববিদ্যালয়), ইউকেএম (মালয়েশিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়), আইআইইউএম (মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়), আইইউএম (মালয়েশিয়ার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়)।
মালয়েশিয়া এবং তুরস্কে সফলভাবে গৃহীত বিভিন্ন ওয়াকফ বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল রয়েছে। ব্যবহারিক মডেলগুলোর মধ্যে একটি হল কর্পোরেট ওয়াকফ বিশ্ববিদ্যালয়। সফল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হচ্ছে। সফল কর্পোরেট ওয়াকফ হামদার্দ ইতোমধ্যে বাংলাদেশে প্রথম ওয়াকফ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। অন্যান্য উদ্ভাবনী ওয়াকফ মডেল সমূহের মধ্যে নগদ ওয়াকফ, প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অর্থায়িত ওয়াকফ এবং ফিনটেক ভিত্তিক ওয়াকফকে ওয়াকফ বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেলে একীভূত করা যেতে পারে। বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক কাঠামো বিবেচনা করলে হাইব্রিড ওয়াকফ বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেলটি ভালভাবে কাজ করবে বলে ধারণা করা যায় যা পশ্চিম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনিয়োগ তহবিলের মতো একটি ঘূর্ণায়মান বিনিয়োগ ব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম হবে। ওয়াকফ কাঠামোর আওতায় থাকা সম্পদগুলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অধিক সংখ্যক স্কলারশিপ, প্রফেসরশিপ, গবেষণা অনুদান, ল্যাব প্রতিষ্ঠা এবং অন্যান্য উন্নয়ন খাতে ব্যয় করতে সাহায্য করবে।
উপসংহারে, আমরা বলতে পারি যে সরকার একা উচ্চ শিক্ষার জন্য অর্থায়নের টেকসই উৎস নিশ্চিত করতে পারবে না এবং বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য তা আরো কষ্টসাধ্য। ওয়াকফের পুনরুজ্জীবন বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার অর্থায়নের ক্ষেত্রে সত্যিকারের গেম চেঞ্জার হতে পারে। তবে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ওয়াকফের নিবন্ধন একটি জটিল প্রক্রিয়া। ওয়াকফ ব্যবস্থাপনাকে বিকেন্দ্রীকরণের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংস্কার প্রয়োজন। বাংলাদেশ ওয়াকফ অধ্যাদেশ ১৯৬২ এর আধুনিকিকরণ এখন সময়ের দাবি। ওয়াকফ তহবিল বিনিয়োগ ও বিকাশের জন্য মুতাওয়াল্লি / ট্রাস্টির বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন থাকা জরুরি। ওয়াকফ হিসাবরক্ষণ ও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ বার্ষিক প্রতিবেদন সমূহ অভিজ্ঞ নিরীক্ষক দ্বারা নিরীক্ষিত ও অনুমোদিত হওয়া দরকার। সমাজের বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়াকফ তহবিল গড়ে তোলা সম্ভব। এর পাশাপাশি সফল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব অর্থায়নে ওয়াকফ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসে পারে। আমরা যদি ওয়াকফের হারানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে পারি, তাহলেই আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, উদ্ভাবনী এবং টেকসই শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক। সহকারী অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি অফ ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চট্টগ্রাম (ইউসিটিসি)।