হটলাইনে অভিযোগ পেয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সরকারি ওষুধের দোকানে (স্টোরে) অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নাজমুছ সাদাতের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানের শুরুতে বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনে যায় দুদকের তদন্ত টিম।
সেখানে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসানের সাথে কথা বলেন। পরে নিচতলায় ওষুধের দোকানে গিয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন তদন্ত কর্মকর্তারা। হাসপাতালের স্টোর ও ফার্মেসিতে ওষুধ সরবরাহের নথিপত্র যাচাইয়ের পাশাপাশি অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীদের সঙ্গেও কথা বলেন তারা। অভিযান শেষে বিকেল তিনটার দিকে দুদকের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। হাসপাতালের স্টোর থেকে ফার্মেসিতে ওষুধ সরবরাহ এবং সেগুলো রোগীদের মাঝে বণ্টনের ক্ষেত্রে কিছুটা গরমিল পাওয়ার তথ্য জানান তারা। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলেছেন, যত রোগীকে বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে তার চেয়ে বেশি ওষুধ স্টোর থেকে ফার্মেসিতে নেওয়া হচ্ছে।
ব্রিফিংয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর উপ-পরিচালক মো. নাজমুছ সাদাত বলেন, রোগীদের সরবরাহের জন্য ওষুধ কিনে হাসপাতালের স্টোরে রাখা হয়। সেখান থেকে ফার্মেসিতে নেওয়া হয়। এরপর ওয়ার্ডে রোগীদের জন্য সরবরাহ করা হয়। আমরা ফার্মেসি আর অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে গিয়েছিলাম। ওষুধ সরবরাহ ও বণ্টনের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রারে কিছুটা গরমিল পেয়েছি। তাও কয়েকটি ওষুধের ক্ষেত্রে। এটা প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে। সেগুলো আমরা আরও যাচাই-বাছাই করব। এরপর কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন দেব। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, সেভাবে পরবর্তী কার্যক্রম চলবে।
গরমিলের বিষয়ে তিনি বলেন, স্টোরের স্টক থেকে ফার্মেসি ওষুধ নেয়। সেই ওষুধ নেওয়া এবং পরবর্তীতে রোগীদের মাঝে বণ্টন- এই হিসাবটা আমরা সন্তোষজনকভাবে পাইনি। ধরেন, প্রতিদিন ১০০ রোগীর জন্য চাহিদা দেওয়া হচ্ছে, অথচ রোগী এর চেয়ে ৩০ জন কম বা বেশি। তাহলে কম হলে বাকি ওষুধের হিসাব বা বেশি হলে কিভাবে বণ্টন হচ্ছে- সেই হিসাবটা অস্পষ্ট। যতজনকে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি ওষুধ স্টোর থেকে যাচ্ছে। গরমিলের বিষয়ে স্টোর ও ফার্মেসি সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে জানিয়ে দুদুকের এ কর্মকর্তা বলেন, তারা লোকবল স্বল্পতার কারণে হিসাবটা আপডেট রাখতে পারেন না মর্মে জবাব দিয়েছেন। তবে বরাদ্দ ও বণ্টনের ক্ষেত্রে কোনো গরমিল নেই বলে তারা দাবি করেছেন। অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে সরকারিভাবে যেসব ওষুধ বরাদ্দ আছে সেগুলো পাওয়ার ক্ষেত্রে রোগীরা কোনো অভিযোগ করেননি জানিয়ে দুদক কর্মকর্তা মো. নাজমুছ সাদাত বলেন, তবে কয়েকটি ওষুধের নাম দিয়ে সেগুলো তাদের না দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও নাম উল্লেখ করা এসব ওষুধের সরকারি বরাদ্দ নেই বলে স্টোর ও ফার্মেসি সংশ্লিষ্টরা আমাদের জানিয়েছেন।
চমেক হাসপাতালের ওষুধ স্টোর শাখার ইনচার্জ ডা. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘নিয়মিত চাহিদাপত্র জমা দিয়ে স্টোর থেকে ফার্মেসিতে ওষুধ আনা হয়। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, রোগী বেশি হয়ে গেছে। তখন স্টোর থেকে আবারও এনে ওষুধ দেওয়া হয়। পরদিন সমপরিমাণ ওষুধ কম দিয়ে হিসাব ঠিক রাখা হয়। এটি আরও স্বচ্ছ করার জন্য দুদকের কর্মকর্তারা বলেছেন। ওষুধ চুরি ঠেকাতে আমরা নতুন নিয়ম করেছি। এখন ওয়ার্ডের ইনচার্জদের সরাসরি এসে তাদের চাহিদামতো ওষুধ নিয়ে যেতে হয়। স্টোর থেকে সরাসরি ওষুধ সরবরাহ করা হয় না।
উল্লেখ্য, হাসপাতালে রোগীদের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত বিনামূল্যের ওষুধ বিভিন্ন সময়ে বাইরে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বিনামূল্যের এসব ওষুধ রোগীরা পান না বলেও অভিযোগ বিস্তর। এর মাঝে গত ৭ ফেব্রুয়ারি সরকারি বিপুল পরিমাণ ওষুধ হাসপাতালের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় চমেক হাসপাতালের এক কর্মচারীসহ দুইজনকে আটক করে হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা। পরে তাদের পুলিশের হাতে সোর্পদ করা হয়। আটক হাসপাতালের সরকারি কর্মচারী আশু চক্রবর্তীর বাসায় অভিযান চালিয়ে আরো বিপুল পরিমান ওষুধ জব্দ করে পুলিশ। হটলাইনে ভুক্তভোগী রোগীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে তা তদন্ত করতেই এ অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিযানে অংশ নেওয়া দুদক চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক আবু সাইদ।