‘ওর চিকিৎসা কীভাবে চালাব এই চিন্তায় ঘুমাতে পারি না’

টাকার অভাবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ সায়েমের চিকিৎসা হচ্ছে না, আছেন বাড়িতে

হাটহাজারী প্রতিনিধি | সোমবার , ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৭:৪৪ পূর্বাহ্ণ

হাটহাজারীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া সায়েমের (২০) গুলি লাগা পায়ের ক্ষতস্থানে এখনো ব্যান্ডেজ আছে। ডান হাঁটুর উপরের ক্ষতটা অনেক বড়। ব্যথায় কাতরাচ্ছেন তিনি। নগরীর একটি হাসপাতালে গুলি বের করার পর চিকিৎসকরা জানান, পায়ের ক্ষত সারতে অপারেশন করতে হবে; যার জন্য প্রয়োজন প্রায় ৩ লাখ টাকা। কিন্তু এত টাকা যোগাড় করার সামর্থ্য নেই তার পরিবারের। ফলে বিনা চিকিৎসায় বাড়িতেই অবস্থান করছেন।

১৭ আগস্ট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করেছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যেসব ছাত্রজনতা আহত হয়েছেন সরকারি হাসপাতালে তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসহ যাবতীয় চিকিৎসা ব্যয় সরকার বহন করবে এবং বেসরকারি প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহকে আন্দোলনে আহত ছাত্রজনতার চিকিৎসার বিল গ্রহণ না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। প্রয়োজনে এ সকল বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্রজনতার সকল বিল সরকার বহন করবে মর্মেও জানানো হয়েছিল।

উপজেলার মেখল ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামের রুহুল্লাপুর এলাকার বুধা গাজী বাড়ির দরিদ্র মো. সিরাজ ও গৃহিণী রাশেদা আকতার দম্পতির সন্তান আহত সায়েম কান্নাজড়িত কণ্ঠে ছাত্র আন্দোলনে যোগদান থেকে তার বর্তমান শারীরিক অবস্থার কথা জানান। ৫ আগস্ট হাটহাজারী বাজারে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। তিনি জানান, পরিবারের সহায়সম্বল বলতে বসতঘরের জায়গাটুকু ছাড়া তেমন কিছু নেই। বাবার আয়ও অল্প। আমি হাটহাজারী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছি। তবে টাকার অভাবে অনার্সে ভর্তি হতে পারিনি। সংসারে আয়ের জোগান দিতে বাজারে একটি দোকানে চাকরি করছিলাম। আমি হৃদয়ের টানে ওইদিন ছাত্র আন্দোলনে বন্ধুদের সাথে বের হই। গুলিটা আমার পকেটে থাকা মোবাইল ফোন ছিদ্র হয়ে হাঁটুর উপরে ঢুকে হাড় ভেঙে মাংস নিয়ে অপর পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। গুলি লাগার পর আমি সড়কে পড়ে যাই। সাথে থাকা বন্ধুরা আমাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ২৫ দিন চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। বলেন, পরবর্তীতে গিয়ে আবার দেখাতে। কিছুদিন আগে হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক বলেন, পায়ে আবার অপারেশন করাতে হবে।

সায়েম বলেন, স্বপ্ন ছিল অনার্সে ভর্তি হব, লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করে বাবামা ও বোনের মুখে হাসি ফোটাব। কিন্তু আমার সে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। তবে এখনো আমি স্বপ্ন দেখি, আবার সুস্থ হয়ে দুই পায়ে উঠে দাঁড়াব, হাঁটব। কিন্তু টাকার অভাবে আমার চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না। আমি আমার স্বপ্ন পূরণে সরকারের সহযোগিতা চাই। আমি সুস্থ জীবনে ফিরে যেতে চাই। পঙ্গু হয়ে গেলে কেমনে চলব?

সায়েমের বাবা পৌরসভার একটি প্রাইভেট ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ড মো. সিরাজ বলেন, আমার দুইটা মেয়ে, একটা ছেলে। চাকরির টাকায় কষ্ট করে কোনো রকমে সংসার চালাই। অনেক কষ্ট করে এই পর্যন্ত এসেছি। একমাত্র ছেলে সায়েমের স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে একটা চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু হঠাৎ একটা ঝড় সব স্বপ্ন ভেঙে দিল। এখন ওর চিকিৎসা চালাব কীভাবে এই চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারি না। তার উপযুক্ত চিকিৎসা করানোর মতো টাকা নেই। সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস স্যারের প্রতি আবেদন, তিনি যেন আমার ছেলেটারে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে ৩৫ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশ কনস্টেবল আটক
পরবর্তী নিবন্ধরেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে বড় ধরনের রদবদল