ওরা ৫৪ জন পাড়ি দিলেন বাংলা চ্যানেল

আছেন চবির চার শিক্ষার্থী, মাঝ পথেই থেমে গেল ১০ বছরের লারিসা

চবি ও টেকনাফ প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ২১ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারজন শিক্ষার্থী বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজন বর্তমান ও একজন সাবেক শিক্ষার্থী। গতকাল সোমবার টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত (বাংলা চ্যানেল) ১৬.১ কিলোমিটার সাঁতার কেটে পাড়ি দেন তারা। এবার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন ৭৯ সাঁতারু। তবে পার হতে পেরেছেন ৫৪ জন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিল লারিসা রোজেন (১০) নামে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তবে লারিসা অংশ নিলেও মাঝ পথে সমুদ্রে অতিরিক্ত ঢেউয়ের কারণে পাড়ি দিতে পারেনি। এ সময় লারিসার সাথে তার বড় ভাই ও বাবাও অংশগ্রহণ করেছিল।
বাংলা চ্যানেলজয়ী চবির চার শিক্ষার্থী হলেন ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সালাহ উদ্দিন, একই বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শফিউল হাসান, পালি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের উজ্জ্বল চৌধুরী মারমা এবং পরিসংখ্যান বিভাগের ১৯৯২-৯৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আজাদ। এর মধ্যে উজ্জ্বল চৌধুরী মারমা পাহাড়িদের মধ্যে সর্বপ্রথম বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন।
আয়োজক ও দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, বেলা পৌনে ১১টায় সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে বাংলা চ্যানেলে সাঁতার শুরু করেন ৭৯ সাঁতারু। এর আগে সবাই দেশের পতাকা দেখিয়ে উল্লাস করেন। বিকেল ২ টা ৩০ মিনিটে (৪ ঘণ্টা ৯ মি.) বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে দ্বীপে প্রথম পৌঁছেন সাইফুল ইসলাম রাসেল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এদিন তিনি সবচেয়ে কম সময়ে পাড়ি দিয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন। এর আগে গত বছর সাইফুল ইসলাম রাসেল ৩ ঘণ্টা ২১ মিনিটে পাড়ি দিয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। সূর্য ডুবির সঙ্গে সঙ্গেই ধাপে ধাপে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সব সাঁতারু দ্বীপে পৌঁছান। তবে মাঝপথে সাঁতারে ব্যর্থ হলে কয়েকজন সাঁতারুকে উদ্ধারকারীরা তুলে নেয়।

২০০৬ সাল থেকে ষড়জ এডভেঞ্চার নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার এ আয়োজন করে আসছেন। আয়োজক সহযোগী ছিলেন ‘এঙট্রিম বাংলা’। ষড়জ এডভেঞ্চারের নির্বাহী পরিচালক লিপটন সরকার আজাদীকে বলেন, ২০০৬ সাল থেকে আমরা বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার এ আয়োজন করে আসছি। গত বছর ৪৩ জন এ আয়োজনে অংশ নিয়ে ৩৯ জন সফলভাবে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছে। এবারে ১৬ তম আসরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৭৯ জন সাঁতারু অংশ নিয়েছে। তিনি বলেন, সাঁতারের এই আয়োজন আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে করা হয়েছে। সাঁতারুরা ফ্রি হ্যান্ড সুইমিং করেছে। নিরাপত্তার জন্য প্রত্যেক সাঁতারুর সঙ্গে একজন করে উদ্ধারকারী ছিল।
দ্বীপে পৌঁছে চবি শিক্ষার্থী সালাহ উদ্দিন বলেন, মহান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এবার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে, মনে হচ্ছে আমি ‘বিশ্ব জয়’ করেছি। আমার টার্গেট ছিল যে কোনো মূল্যে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে জয়ের স্বাদ নেওয়ার। আল্লাহ্‌ আমার সেই আশা পূরণ করেছেন। আমি সূর্য ডুবির অনেক আগে দ্বীপে পৌঁছেছি। এছাড়া অনেক সহকর্মী সূর্য ডুবির সঙ্গে সঙ্গেই পৌঁছেন। আগামীতে আরও বড় বড় অ্যাডভেঞ্চারে অংশ নিতে চাই। এজন্য সরকার ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের সহযোগিতা কামনা করছি।
আনন্দ প্রকাশ করে চবি শিক্ষার্থী উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, স্কুল থেকেই সাঁতারের প্রতি ঝোঁক ছিল। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়ও অংশ নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে প্রতিযোগিতা করেছি। এ জয় অনেক কঠিন ছিল। ঢেউয়ের কারণে সময় লেগেছে। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে হাল ছেড়ে দেই, কিন্তু বিশ্বাস হারাইনি। এই জয়ে অনেকের অবদান রয়েছে। সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, সাইফুল ইসলাম রাসেল নামে একজন বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে প্রথম দ্বীপে পৌঁছেছেন। এরপর বিকেলে দিকে আস্তে আস্তে আরো বেশ কয়েকজন সাঁতারু পৌঁছেন। এ সময় দ্বীপের বাসিন্দারা তাদেরকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবস্তায় লিখতে হবে কোন ধানের চাল
পরবর্তী নিবন্ধঅভয়ারণ্যে তিন হাতিকে ফেরাতে বিশেষ উদ্যোগ