ওয়াসার পানির ব্যবহার বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ

আনোয়ারায় শিল্প কারখানা পরিদর্শনে ওয়াসা টিম ভান্ডালঝুড়ি প্রকল্প পুরোপুরি প্রস্তুত, অনুমোদন ছাড়া ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার না করতে সতর্কতা

এম নুরুল ইসলাম, আনোয়ারা | বৃহস্পতিবার , ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৭:০৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির ব্যবহার বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিশেষত শিল্প কারখানায় ভূগর্ভস্থ পানির পরিবর্তে নতুন ভান্ডালঝুড়ি প্রকল্পের পানির ব্যবহার যাতে বাড়ানো যায় সেভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি টিম আনোয়ারার কেইপিজেড, কাফকো, সিইউএফএল ও টানেল মোড় সংলগ্ন একটি কম্পোজিট শিল্প কারখানা পরিদর্শন করে এ বিষয়ে পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছেন।

ওয়াসা সূত্র জানায়, কাফকো ও সিইউএফএল ২টি সার কারখানায় দৈনিক উৎপাদনের জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে সিইউএফএল কালুরঘাট থেকে নিজস্ব পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি আনলেও কাফকো গভীর নলকূপ স্থাপন করে ভূগর্ভস্থ পানির মাধ্যমে উৎপাদন চালিয়ে আসছিল। কেইপিজেড ও অন্যান্য শিল্প কারখানাতে ব্যবহৃত হয় ভূগর্ভস্থ পানি। বর্তমানে আনোয়ারা পর্যন্ত ওয়াসার ভান্ডালঝুড়ি প্রকল্পে পানির লাইন সম্প্রসারিত হওয়ায় বিনামূল্যে গভীর নলকূপের পানি ব্যবহারের সুযোগ নেই। এখন থেকে যথাযথ ফি প্রদান সাপেক্ষে ওয়াসার কাছ থেকে গভীর নলকূপের অনুমোদন নিতে হবে।

বহুজাতিক সার কারখানা কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডে (কাফকো) উৎপাদন চালু রাখতে প্রতি ঘণ্টায় ৮০০ টন মিঠাপানির প্রয়োজন হয়। এসব পানি পাশের কর্ণফুলী নদী থেকে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নদীর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেশি হওয়ায় কারণে কারখানাটি ৭টি গভীর নলকূপ বসিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে উৎপাদন চালাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে বিপুল এই চাহিদা মেটাতে গিয়ে আনোয়ারাকর্ণফুলী উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের অগভীর নলকূপে পানি মিলছে না।

সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সিইউএফএল কর্ণফুলী নদীর উজানের কালুরঘাট থেকে নিজস্ব লাইনের মাধ্যমে পানি এনে উৎপাদন চালাচ্ছে। বর্তমানে জরুরি প্রয়োজন মেটাতে চট্টগ্রাম ওয়াসা থেকে পানি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নিজস্ব লাইন ছাড়াও গত মাসে ওয়াসার ভান্ডালঝুড়ি প্রকল্প থেকে দুই দফায় ১০ হাজার মেট্রিক টন পানি নেওয়া হয়েছে। তবে পানি সরবরাহ সংক্রান্ত কোন বাণিজ্যিক চুক্তি ওয়াসার সাথে হয়নি বলে তিনি জানান। ওয়াসা সূত্র জানায়, ভান্ডালঝুড়ি প্রকল্পে প্রতিদিন উৎপাদিত ৬ কোটি লিটার পানির মধ্যে সিইউএফএলে দৈনিক ২ কোটি লিটার, কাফকোতে দেড় কোটি লিটার, ডিএপি ফার্টিলাইজার কারখানার ১ কোটি ২০ লাখ লিটার, কেইপিজেড ও প্রস্তাবিত চীনা ইকোনমিক জোনে ৫০ লাখ লিটার পানি সরবরাহের টার্গেট রয়েছে। শিল্প ও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে। এর অংশ হিসাবে গতকাল বুধবার পরিদর্শন করেছে ওয়াসার একটি বিশেষ টিম।

ভান্ডালঝুড়ি প্রকল্পের ওয়াসার পাইপলাইন বোয়ালখালী মিলিটারি পুল হয়ে শিকলবাহা মইজ্যারটেক হয়ে আনোয়ারা পর্যন্ত লাইন স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ। কর্ণফুলী ও আনোয়ারায় থাকছে আবাসিক সংযোগ। এজন্য কোরিয়ান ইপিজেড এলাকায় ২ দশমিক ৯৪ একর জায়গায় নির্মাণ হচ্ছে ১ কোটি লিটার পানি ধারণক্ষমতার একটি জলাধার। সেখান থেকে আনোয়ারা এলাকায় পানি সরবরাহ করা হবে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিরীন আক্তার আজাদীকে বলেন, ওয়াসার ভান্ডালঝুড়ি প্রকল্প এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। আনোয়ারা এলাকার কাফকো, সিইউএফএল, কেইপিজেডসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা পরিদর্শন করে ওয়াসার পানির ব্যবহার ও অনুমোদন ছাড়া ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার না করতে সতর্ক করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্ব অনুধাবন করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনসিসি কর্ণফুলী রেজিমেন্টের ক্যাম্পিং উদ্বোধন
পরবর্তী নিবন্ধব্রিটিশ দম্পতির পাসপোর্টসহ ফেলে যাওয়া ব্যাগ উদ্ধার করে দিল পুলিশ