মিয়ানমারে আরাকান আর্মি ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে চলমান যুদ্ধের ভয়ে দিনাতিপাত করছে টেকনাফের মানুষ। দুই পক্ষের সংঘর্ষে মর্টার শেল ও ভারী গোলার শব্দে কাঁপছে এই সীমান্ত উপজেলা। এবার দেশটির সীমান্ত এলাকার কয়েকটি পয়েন্টে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। এদিকে যুদ্ধে প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশসহ (বিজিপি) দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য নাফ নদ হয়ে দুটি কাঠের ট্রলারে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বর্তমানে এই দুইটি ট্রলার নাফ নদে ভাসছে।
গতকাল ১৪ জুলাই সকাল থেকে দুপুর অবধি টেকনাফের নাইট্যং পাড়া, পৌরসভার জালিয়া পাড়া, সদরের নাজির পাড়া ও সাবরাং শাহপরীর দ্বীপের ওপারে মিয়ানমার সীমান্তের গ্রামগুলোতে আগুনের কুণ্ডলী দেখতে পায় স্থানীয়রা। এছাড়া বিকালে টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ার টেকনাফ–মিয়ানমার ট্রানজিট ঘাটের নাফ নদে মিয়ানমারের দুটি কাঠের ট্রলার ভাসছে। ট্রলার দুটিতে সেদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অর্ধশতাধিক সদস্য রয়েছেন বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা জানান, শনিবার রাত থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। ফলে টেকনাফের নাইট্যং পাড়া, পৌরসভার জালিয়া পাড়া, সদরের নাজির পাড়া ও সাবরাংয়ের শাহপরীর দ্বীপের ওপারে আশিক্কা পাড়া, সুদাপড়া, পাতংজা, পেরাংপুলে আগুনের ধোঁয়া দেখা গেছে।
টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান আজাদীকে বলেন, শনিবার রাত থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত সীমান্তে ওপারের বিকট গোলার শব্দে এপারের সীমান্তবর্তী মানুষের মাঝে আতঙ্ক বেড়েছে। পাশাপাশি নাফ নদের ওপারে কয়েকটি স্পটে আগুনের কুণ্ডলী দেখা গেছে। এছাড়া সীমান্তে যাতে অনুপ্রবেশ না ঘটে সেজন্য টহল জোরদার করেছে বিজিবি।
সীমান্তের বাসিন্দা সৈয়দ হোছাইন বলেন, রাতভর সীমান্তজুড়ে গোলা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ পাওয়া গেছে। এতে এখানকার বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক বাড়ছে। এ ছাড়া সকাল থেকে সীমান্তের ওপারে আগুন জ্বলছে। এভাবে চলতে থাকলে আবার রোহিঙ্গাদের ঢল নামতে পারে।
জানা গেছে, মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার নাফ নদে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা দিনরাত টহল দিচ্ছেন। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবসময় প্রস্তুত সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
এ বিষয়ে টেকনাফ–২ বিজিবির ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ আজাদীকে বলেন, ‘সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। তবে নতুন করে যাতে কেউ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থানে রয়েছি।’
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, সীমান্তের বাসিন্দারা রোববারও ওপার থেকে গোলা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ পাচ্ছিলেন। নাফ নদের ওপারে আগুনের কুণ্ডলী দেখা গেছে। তবে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত আছেন।