ঐতিহাসিক কদলপুর : প্রথম চট্টগ্রাম বিজয়ী মুসলিম সেনাপতি কদল গাজীর স্মৃতি ও অধুনা মুসলিম চৌধুরী

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী | মঙ্গলবার , ১৪ মে, ২০২৪ at ৭:৪৭ পূর্বাহ্ণ

রাউজান থানার কদলপুর একটি প্রসিদ্ধ গ্রাম। রাউজানের পূর্ব প্রান্তে পার্বত্য সন্নিহিত অঞ্চলে এই গ্রামের অবস্থান। প্রায় সাতশো বছরের ইতিহাস স্তুব্ধ হয়ে আছে কদলপুরের মৃত্তিকার গভীরে। কান পাতলে শোনা যায় দূর অতীতের রাজপুরুষ অথবা সৈন্যসামন্তদের ধাবমান অশ্বক্ষুরের ধ্বনি। কোনো ঘুঘু ডাকা নিদাঘ মধ্যাহ্নে কিংবা নির্জন রাতের শূন্যতায় নস্টালজিক স্মৃতি ঘাই মারে কদলপুরের একালের বাসিন্দারের মনের গহীনে। কদলপুরের ইতিহাস তাকে দিয়ে শুরু, তিনি এক ইতিহাসিক পুরুষ। তাঁর নাম কদল খান গাজী বা পীর।

তিনি পীর না সেনাপতি ছিলেন, বাংলার ইতিহাসে তার স্পষ্ট উত্তর মেলে না। তবে তাঁর নামেই যে কদলপুরের নামকরণ, তাতে কোন সন্দেহ নেই।

সুলতান ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম জয় করে এখানে প্রথম মুসলিম অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন বলে প্রসিদ্ধি আছে। এই বিষয়ের প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায় ঔরঙ্গজেবের অন্যতম কর্মচারী শিহাবুদ্দীন তালিশের লেখায়। শিহাবুদ্দীন তালিশ লিখেছেন, “সুদূর অতীতে ফখরুদ্দীন নামে বাংলার একজন সুলতান চট্টগ্রাম সম্পূর্ণভাবে জয় করেন এবং শ্রীপুরের ঘাঁটির সামনে নদীর বিপরীত পাড়ে অবস্থিত চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত একটি বাঁধ তৈরী করেন। চট্টগ্রামে যে সমস্ত মসজিদ ও সমাধি রয়েছে, সেগুলি ফখরুদ্দীনের আমলে নির্মিত হয়েছিল। ধ্বংসাবশেষ থেকে তা প্রমাণ হয়।

কবি মুহম্মদ খানের ‘মক্তুল হোসেন’এর ভূমিকাভাগ থেকে জানা যায় : ফখরুদ্দীনের আমলে চট্টগ্রামের শাসনকর্তা ছিলেন কদর বা কদল খান গাজী। তাঁর নামে একটি গ্রাম আজো কদলপুর বলে পরিচিত। এই কদর খানের আমলেই পীর বদরুদ্দীন আলাম ও কবির পূর্বপুরুষ মাহিআসোয়ার আরব বণিক হাজি খলিলের সঙ্গে চট্টগ্রামে উপনীত হন। (আহমদ শরীফ)

সপ্তদশ শতাব্দীর কবি মোহাম্মদ খান তাঁর মক্তুল হোসেনকাব্যে (রচনাকাল ১৬৪৬ খ্রীঃ) লিখেছেন যে, তাঁর মাতামহ সদর জাঁহার ঊর্ধ্বতন নবম পুরুষ শেখ শরীফুদ্দীনের “মিত্রকদল খান গাজী তাঁর “একাদশ মিত্রনিয়ে চট্টগ্রাম জয় করে সেখানে মুসলমান রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন (সাহিত্য পত্রিকা, বর্ষা সংখ্যা, ১৩৬৬, পৃঃ ৯৯)। সময়ের হিসাবে কদল খান গাজী অনায়াসেই ফখরুদ্দীন মুবারক শাহের সমসাময়িক হতে পারেন। কদল খান সম্ভবত ফখরুদ্দীন মুবারক শাহের সেনাপতি হিসাবে চট্টগ্রাম জয় করেছিলেন। জনশ্রুতি এই ধারণার সমর্থক (বা..সু. ., পূঃ ১৮৬)। মোহাম্মদ খান কদল খানকে পীরবলেছেন, এর থেকেই প্রমাণ হয় না যে কদল খান “সাধক” ছিলেন কারণ বিধর্মীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সাফল্য অর্জন করেছিলেন, এরকম মুসলমান সেনানায়কদের জীবদ্দশায় “গাজী” এবং মৃত্যুর পরে “পীরউপাধিতে ভূষিত হওয়ার বহু দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। যা হোক্‌, ফখরুদ্দীনের সময় এবং কদল খান গাজীর সময় যেহেতু মিলে যাচ্ছে, ফখরুদ্দীন মুবারক শাহের চট্টগ্রাম জয় সম্বন্ধে এর থেকে আর একটি প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।

কদল খান গাজীর সময়কাল অতিবাহিত হওয়ার পর কদলপুরে ইতিহাস থেমে থাকেনি। কদলপুর এমন এক ঐতিহাসিক জনপদ, যেখানে মাঝে মাঝেই ঐতিহাসিক পুরুষের আবির্ভাব ঘটেছিলো, যারা নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে কদলপুরের ইতিহাসের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন। এমনি ঐতিহাসিক পুরুষ ফতে আলী শাহ, কামদর আলী শাহ, রমজান আলী চৌধুরী; এদের নামে পুকুর, দিঘি, হাটবাজার, মসজিদ ইত্যাদির অবস্থিতি প্রমাণ করে যে, তাঁরা ইতিহাসের কোন এক কালপর্বে কদলপুরে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করে কদলপুরকে গৌরবান্বিত করেছেন। ফতেহ আলী চৌধুরী এবং রমজান আলী চৌধুরী অষ্টাদশ শতাব্দীতে কদলপুরে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী জমিদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। রমজান আলী চৌধুরী একটি সুন্দর মসজিদ নির্মাণ করেন। ইন্দোইরানিয়ান স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শনের স্বাক্ষর বহন করে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী চৌধুরী বাড়ী জামে মসজিদ। ১৭৪৯ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন চট্টগ্রামের প্রখ্যাত জমিদার ফতেহ্‌ আলী চৌধুরীর ‘তরফ’ এর অধিভুক্ত জায়গায় বিখ্যাত জমিদার রমজান আলী চৌধুরী এই মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। মসজিদটি মূলতঃ চুন ও সুরকীর তৈরি। জনশ্রুতি আছে যে মসজিদ নির্মাণের সময় উপকরণের মধ্যে ছিল তেঁতুল ও ডিম। ছাদের উপর বিশাল আকারের গম্বুজ এর চারপাশে রয়েছে চারটি মিনার; প্রবেশের জন্য ছোট আকারের দুটি পথ মসজিদের অভ্যন্তরে প্রবেশের পর কম বেশি সকলের মনে ভাবগাম্ভীর্য সৃষ্টি করে। এ মসজিদ নির্মাণের পর শুধুমাত্র ১৯৪৭ সালে একবার মেরামত করা হয়েছিল। রমজান আলী চৌধুরী হাট তার নামে নামকরণ করা হয়।

রমজান আলী চৌধুরীর চারপুত্র ছিল : . সরাফত আলী চৌধুরী, . হায়দর আলী চৌধুরী, . নুর আলী চৌধুরী, . জান আলী চৌধুরী। ব্রিটিশ শাসনের প্রথম পর্যায়ে সরাফত আলী চট্টগ্রাম জেলার কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান। হায়দর আলী চৌধুরী তৎকালীন থানাদার হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

ফতেহ্‌ আলীর তিনজন পুত্র ছিলেন : রুস্তম আলী, শমসের আলী ও রোসন আলী। শমসের আলী চৌধুরীর একমাত্র পুত্র আবদুল আলী চৌধুরী ছিলেন একজন সুফি সাধক, তার প্রচুর ভক্ত ও মুরিদ ছিলেন। আবদুল আলী চৌধুরীর দুই পুত্র এবং পাঁচজন কন্যা ছিলেন। তার প্রথম পুত্র আশরাফ আলী চৌধুরী পরবর্তীতে মৌরশী সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি এবং নিজ খরিদ মূলে প্রখ্যাত জমিদার রূপে আবির্ভূত হন। বর্তমানে আশরাফ আলী চৌধুরীহাট তার নামে নামকরণ করা হয়। তিনি বার আউলিয়ার অন্তর্ভুক্ত হযরত মোল্লা মিছকিন শাহ্‌ (.) এর ওয়ারিশ মোছাম্মৎ হাকিমুন্নেছাকে বিয়ে করেন। তার চারজন স্ত্রী ছিলেন। তিনি সুলতান আহম্মদ, ফজল হক, সিরাজুল হক, কায়কোব্বাত, উমা খাতুনসহ ছয় পুত্র এবং চার কন্যা ওয়ারিশ রেখে ১৯১৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

ব্রিটিশরা উক্ত পরিবারের গুরুত্ব ও মর্যাদার স্বীকৃতি দিয়ে এর প্রতিটি সদস্যকে ‘তরফ’ উপাধি প্রদান করেন। প্রকৃতপক্ষে, ব্রিটিশরাই এই পরিবারের প্রভূত্ব ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয়। তার ভ্রাতা মোহাম্মদ নুরুল হক চৌধুরী তার বড় ভাইয়ের সমমানের কর্মকাণ্ডের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। নুরুল হক চৌধুরীর একমাত্র পুত্র আমিনুল হক চৌধুরীও তার পূর্ব পুরুষের দৃঢ়তায় অটল ছিলেন। বর্তমানে কদলপুর হামিদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা এবং আমিনুল হক চৌধুরী এতিমখানা তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন। তৎকালীন অত্র এলাকায় বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি একটি তাঁত মিল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রুস্তম আলীর প্রপৌত্র অপ্রাপ্ত বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তার একমাত্র পুত্র নবাব মিয়া বার্মায় বিকাশমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেন।

নবাব মিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র মুহাম্মদ সফদার হুসেন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও বম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন এবং আয়কর কমিশনার ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ আমলে দিনাজপুর ও মালদায় বদলি হন। তিনি সাবেক এমএনএ ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের ভগ্নির পাণি গ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে কর্মরত অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার দ্বিতীয় পুত্র এমদাদ হোসেন (প্রকাশ মাইজ্যা মিয়া) ১৯৪১ সনে ঋণ সালিশী বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৫০ সনে কদলপুর ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি সমাজসেবামূলক কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন। রাউজানের তৎকালীন সার্কেল অফিসারের নাম অনুসারে উপজেলা সদরে রাউজানরাঙ্গুনিয়া নিজামউদ্দিন পাবলিক হল প্রতিষ্ঠায় তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল। বর্তমানে কদলপুর ইউনিয়ন পরিষদ এবং কদলপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র তারই স্মৃতি বহন করছে। তিনি ১৯৭৬ সনে মৃত্যুবরণ করেন।

এমনি করে আমরা সফদর হোসেন, কায়রো বিমান দুর্ঘটনার নিহত তাঁর পুত্র সাংবাদিক ফরিদ আহমদ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা জালালউদ্দিন আহমদকে। তাঁরাই শেষ নন, কদলপুরের সন্তানরা যুগে যুগে নতুন নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে চলেছেন।

সফদর হোসেন চৌধুরীর প্রথম পুত্র মোহাম্মদ ফরিদউদ্দিন চৌধুরী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংবাদিক ছিলেন। ১৯৬৫ সালে মিশরের রাজধানী কায়রোতে গমন কালে অন্যান্য বিশিষ্ট সাংবাদিক সহ অকস্মাৎ বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে এই পরিবারের সদস্যরা বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। সফদর হোসেন চৌধুরীর পুত্র মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন চৌধুরী ১৯৬৯৭০৭১ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি এবং সে সময় চট্টগ্রামের ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে তিনি ১নং সেক্টরের ইন্ডাকশনইনচার্জ ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি ১৯৮৮১৯৯০ পর্যন্ত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রিয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন।

চাকরি জীবনে প্রবেশ করা এই পরিবারের তৃতীয় মানুষটি হলেন বদিউল আলম চৌধুরী তিনি পূর্ব পাকিস্তানের মহা হিসাব রক্ষকের কার্যালয়ে (বর্তমান হিসাব মহানিয়ন্ত্রক) এর কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। তিনি হচ্ছেন মৌলভী সুলতান আহমদের পুত্র।

বর্তমানে এই পরিবারের বেশ কয়েকজন আলো ছড়ানো ত্রিরত্ন হলেন মরহুম নুরুল আলম চৌধুরীর পুত্র জনাব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, মোহাম্মদ মহসিন চৌধুরী এবং মোহাম্মদ মোজাহিদুল ইসলাম চৌধুরী ভ্রাতাত্রয় অন্যতম।

বদিউল আলম চৌধুরীর ভাই নুরুল আলম চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল পদে অধিষ্ঠিত হন। এটি একটি সাংবিধানিক পদ। চট্টগ্রামের আর কোন লোক কখনো এত উঁচু পদে পৌঁছুতে পেরেছিলেন কিনা জানি না। অবশ্য মনীষী আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের বংশেরও একজন অধস্তন পুরুষ, আহমদ কায়কাউস সিনিয়র সচিব এবং মুখ্য সচিব ছিলেন।

মুসলিম চৌধুরী সিএজি পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতির সদস্যরা তাঁকে সমিতির সভাপতি পদে বরণ করে নিয়েছেন। মুসলিম চৌধুরী অসাধারণ কৃতিত্বপূর্ণ পেশা জীবনের অধিকারী। তিনি চাকরি জীবনে যে সাফল্য ও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন, তাতে তাঁর উচ্চ মেধারই পরিচয় ফুটে উঠেছে। তিনি একজন উচ্চ কোটির প্রতিভাবান মানুষ। কিন্তু সেজন্য তাঁর মধ্যে বিন্দুমাত্র অহংকার নেই। বড় প্রতিভা যে মানুষকে বিনয়ী করে মুসলিম চৌধুরী তার জ্বলন্ত প্রমাণ। তিনি বিনয়ী, নম্র, ভদ্র, সৌজন্য ও শিষ্টাচারের চূড়ান্ত প্রতীক। একটি প্রাচীন বনেদী বংশের অভিজাত রুচি ও বৈদগ্ধ্য তাঁর রক্তে ফল্গুর মত প্রবহমান।

মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীর জন্ম রাউজানের কদলপুর গ্রামে ১৯৫৯ সালের ২৪ অক্টোবর। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে বিকম (সম্মান) ও এমকম এবং যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিংয়ে ডিসটিংশনসহ এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি আইএমএফ ইনস্টিটিউট এবং বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা, ঋণ ব্যবস্থাপনা ও সামষ্টিক অর্থনীতি বিষয়ে পেশাগত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

তিনি ১৯৮৪ সালে বিসিএস অডিট এন্ড একাউন্টস ক্যাডারে সরকারি চাকরিতে যোগদান করে কন্ট্রোলার জেনারেল অব অ্যাকাউন্টস, কন্ট্রোলার জেনারেল ডিফেন্স ফাইন্যান্স এবং অর্থ বিভাগের উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী সরকারের আর্থিক সংস্কার কর্মসূচি, সরকার পদ্ধতি, বাজেট, আর্থিক হিসাব এবং অডিট ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন এবং বাংলাদেশে প্রথম পিপিপি নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পাবলিক ফাইন্যানশিয়াল ম্যানেজমেন্ট (পিএফএম) সংস্কার কর্মসূচির পরামর্শক হিসেবে বিশ্বব্যাংক ও ডিএফআইডি প্রকল্পেও কাজ করেছেন তিনি। জনাব চৌধুরী অতিরিক্ত সচিব থাকাকালীন অনলাইন বেতন নির্ধারণ এবং সরকারি কর্মচারী ও পেনশনার ডাটাবেইজ তৈরির জন্য ‘জনপ্রশাসন স্বর্ণপদক ২০১৭’ লাভ করেন।

তিনি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক, সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড এবং ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেডের সরকার মনোনীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সার্ক ডেভলাপমেন্ট ফান্ড এর পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন, যার হেড কোয়ার্টার ভুটানের থিম্পুতে অবস্থিত।

এছাড়া আইসিএমএবি এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের কাউন্সিল মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সরকারি মালিকানাধীন বৃহত্তম অবকাঠামো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিআইএএফএলের প্রথম এমডি এবং সিইও ছিলেন।

মুসলিম চৌধুরীর স্ত্রী সাবিনা হক একজন শিক্ষিকা। তিনি দুই সন্তানের গর্বিত পিতা।

জনাব মুসলিম চৌধুরী একা নন, তাঁর দু’ভাই সাবেক সচিব মহসিন চৌধুরী ও চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোজাহিদুল ইসলাম চৌধুরী। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের সুমহান ঐতিহ্য নির্মিত হয়েছে রায় বাহাদুর পদ্মিনী রুদ্র, আবু হেনা, মুজফফর আহমদ প্রভৃতি কিংবদন্তী অধ্যক্ষদের কঠোর শাসন ও শৃঙ্খলায়। মোজাহিদও একজন সৃজনশীল অধ্যক্ষ; তিনিও তিনি নানামুখী উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডে চট্টগ্রাম কলেজকে চঞ্চল ও গতিশীল রেখেছেন।

লেখক : সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা, সংস্কৃতি সংগঠক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরুগ্‌ণ ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা প্রসঙ্গে
পরবর্তী নিবন্ধআনোয়ারায় শাহসুফী সৈয়দ আবদুচ ছমদ শাহের ওরশ