অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কমিশনগুলো যেসব সুপারিশ তুলে ধরছে সেখানে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অক্ষুণ্ন রেখে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। আলাপ–আলোচনার মাধ্যমেই সেই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, শুধু কাগজ, বই একটা দিলাম, এতে আমাদের কাজ পূর্ণ হল না। আমাদের দায়িত্ব হল এটাকে মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া। আপনারা (সংস্কার কমিশন) যেটা বলছেন, তা মানুষ চাচ্ছে না, তা তো নয়। কাজেই এটা মানুষেরই ভাষ্য। ফলে এমন সুন্দরভাবে বলা, যাতে মানুষ এটার মধ্যে এসে যেতে পারে। কেউ নির্বাচনের আগে এসে যাবে, কেউ নির্বাচনের পরে আসবে।
ইউনূস বলেন, সব জিনিস যেহেতু নির্বাচনের আগে সম্ভব হবে না, কাজেই কিছু জিনিস থেকে যাবে। সেটা চার্টারের (গণঅভ্যুত্থান সনদ) আঙ্গিকে যেন আমরা এগিয়ে যেতে পারি। এটাকে সামনে রেখে আমাদের এগোতে হবে। ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কাজে এগুলোকে নতুন করে পরিশীলিত করে জাতির সামনে উপস্থাপন করতে হবে, যাতে সবাই একমত হতে পারি।
কমিশনের সুপারিশের পর ঐকমত্য না হওয়ার বিষয়গুলো ডকুমেন্ট হিসেবে রেখে ঐক্যমত্যের বিষয়গুলো নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, গো ধরে বসে রইলাম, কেউ মানল, কেউ মানল না, এটা হয়ত কাজে লাগাতে পারব না। কাজেই যেটা করতে পারলাম না, সেটারও একটা ডকুমেন্ট থাকবে। কিন্তু যেটা পারছি, ঐকমত্য করেছি, এটা নিয়ে যেন আমরা এগিয়ে যেতে পারি। এগিয়ে যাওয়াটা আমাদের জন্য খুব জরুরি। ঐক্যের ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়া। পুরো ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি যার পুনরুত্থান হল। আমরা এখন এ উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা একটা রাস্তা তৈরি করছি। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারে গঠিত কমিশন তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয় সেখানে। বৈঠকের শেষে চার কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই আলোচনার পর থেকে কতগুলো কাজ এসে যাবে। সুপারিশের ক্ষেত্রে ওভারল্যাপ রয়েছে, আপনারা উল্লেখ করেছেন। সেগুলো মীমাংসা করতে হবে, যাতে একটা ক্লিন ভার্সন পাওয়া যায়। রিপিটেশন রয়েছে। সাংঘর্ষিক বিষয় থাকলে নিষ্পত্তি করা যায় কিনা, তাহলে আমরা পরিচ্ছন্ন একটা রিপোর্ট জাতির সামনে পেশ করতে পারব।
গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অক্ষুণ্ন রেখে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের যে সুরটা, সেই সুরটা যেন আমাদের অক্ষুণ্ন থাকে। কারণ সেখান থেকে আমাদের উৎপত্তি। আমাদের পুরো জাস্টিফিকেশন হচ্ছে, আমরা ওটার একটা অংশ, সেটাকে যেন আমরা ভুলে না যাই। এটা প্রতিষ্ঠিত করি, এটা জাতির আকাঙ্ক্ষা। ৫ আগস্টে যেটা হয়েছে, সেটা সমগ্র জাতির আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতেই হয়েছে। সে আকাঙ্ক্ষাকে যেন ধরে রাখতে পারি। কারণ, এটার সঙ্গে কারও দ্বন্দ্ব নেই। আমরা একমত ছিলাম, এখনও একমত আছি। নানারকম খুঁটিনাটি বিষয়ে আলাপ–আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আবার আমরা ঐক্যে ফিরে যেতে চাই। আমাদের পুরো প্রচেষ্টাটাই হল জাতির ঐক্যকে এক জায়গায় নিয়ে আসা। সেটাই আমি রেফার করছিলাম একটা চার্টার তৈরি হবে। গণঅভ্যুত্থান চার্টার। এটাকে আমরা ইতিহাসে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
তিনি বলেন, এ চার্টারের ভঙ্গিতে যে যাই করি না কেন, চার্টারের মধ্যে আমরা বিচার করব কোথাও মিল হল, অমিল হল। আমরা ঘুরে ফিরে যেন চার্টারে ফিরে আসতে পারি। এরকম ঐকমত্যের একটা চার্টার যেন নিয়ে আসতে পারি সে প্রক্রিয়াটা আমাদের শুরু হবে। সেটি শুরু করার জন্য যে ব্যবস্থা নিতে হবে, সেটা আমরা আলোচনা করেই করব।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, ইতোমধ্যে একটা ঐকমত্য কমিশনের কথা বলেছি। সেটিকে সচল করব আমরা। এটি দিয়ে ঐক্যের দিকে যাওয়া এবং সামনে যে নির্বাচন হবে সেটাও যেন ঐক্যের ভিত্তিতে হতে পারে, সে চার্টার সামনে রেখে ঐক্যের ভিত্তিকে যেন নির্বাচন করতে পারি। ঐকমত্যের জন্য সবার অংশগ্রহণ দরকার। এটা খুব কঠিন কাজ, সহজ কাজ না। মন যদি পরিষ্কার থাকে, আমার নিশ্চিত বিশ্বাস সেটা অর্জন করতে পারব।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামানসহ কমিশন সদস্যরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।