ঐকমত্য হয়েছে ১২টি সংস্কার প্রশ্নে : আলী রীয়াজ

প্রধানমন্ত্রী পদে ১০ বছরের বেশি নয় ।। জাতীয় সনদের খসড়া দলগুলোর হাতে যাবে আজ

| সোমবার , ২৮ জুলাই, ২০২৫ at ৪:২৬ পূর্বাহ্ণ

রাষ্ট্রের মূলনীতি পরিবর্তনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হতে না পারলেও এ পর্যন্ত মোট ১২টি সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য হওয়ার কথা বলেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

গতকাল রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দফার ঊনবিংশতম দিনের বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন। খবর বিডিনিউজের।

আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে দ্বিতীয় পর্যায়ের অব্যাহত আলোচনায় এ পর্যন্ত ১২টি বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা সমাপ্ত হবে বলে আশা করছি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাবে সেগুলো নিয়ে ‘জুলাই সনদ’ বা ‘জাতীয় সনদ’ চূড়ান্ত করা হবে। এর মধ্যে জাতীয় সনদের প্রাথমিক খসড়া আজ সোমবার রাজনৈতিক দলগুলোকে মতামত দেওয়ার জন্য পাঠানো হবে বলে কমিশনের সহসভাপতি জানিয়েছেন।

সকালে বৈঠক শুরুর আগে তিনি বলেছিলেন, ওই খসড়া নিয়ে সংলাপে আলাদা করে আলোচনা করা হবে না। যদি বড় রকমের মৌলিক আপত্তি ওঠে, তাহলে আলোচনায় আনব, না হলে আনব না। আপনাদের পক্ষ থেকে মতামত দেওয়া হলে তা সন্নিবেশিত করে প্রাথমিক সনদেসেখানে ভূমিকা পটভূমি থাকবে এবং কমিটমেন্টের জায়গা থাকবে। জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের জন্য সংলাপে একটি দিন বরাদ্দ করা হবে বলেও আলী রীয়াজ জানিয়েছেন।

যে ১২ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে : সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন; সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব; নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ; রাষ্ট্রপতির ক্ষমাসম্পর্কিত বিধান; উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ; পর্যায়ক্রমে উপজেলায় পর্যায়ে নিম্ন আদালত স্থানান্তর; জরুরি অবস্থা জারির ক্ষমতা; প্রধান বিচারপতি নিয়োগ; নির্বাচন কমিশন গঠন পদ্ধতি; প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান সংস্কার; প্রধানমন্ত্রী পদে ১০ বছরের বেশি নয়; স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন।

মূলনীতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি : আলী রীয়াজ বলেন, রাষ্ট্রের মূলনীতি বিষয়ে যে আলোচনা, এটি আজকে চতুর্থ দিনের মত ছিল। এই চার দিনের আলোচনায় আমরা দেখেছি, সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে বর্ণিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে যেসমস্ত প্রস্তাব কমিশনের পক্ষ থেকে সংশোধিতভাবে উপস্থাপিত হয়েছিল (সাম্য ও মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সমপ্রীতি) এগুলো কীভাবে সংবিধানে উল্লেখিত হবে তা নিয়ে ঐকমত্যে আসা যাচ্ছে না।

বর্তমান বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’ রয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এর বদলে পাঁচটি মূলনীতি সুপারিশ করছে। সেগুলো হলুসাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সমপ্রীতি। সিপিবি, বাসদ, বাসদমার্কসবাদী ও বাংলাদেশ জাসদুএই চার বামপন্থি দল বলছে, বিদ্যমান মূলনীতিগুলো বাদ দেওয়া যাবে না। বরং কমিশন প্রস্তাবিত নতুন মূলনীতি এর সঙ্গে যোগ করা যেতে পারে। বিদ্যমান মূলনীতিগুলো বাদ দিলে তারা আলোচনা বয়কট করবে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত হওয়া ‘আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ রাখার কথা বলে আসছিল। তবে কমিশন এখন যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে তাদের আপত্তি নেই। আর জাতীয় নাগরিক পার্টিএনসিপি বলেছে, কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে তারা একমত।

আলী রীয়াজ বলেন, আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি, এ বিষয়ে ঐকমত্যে আসা যাচ্ছে না। কমিশন এখন এটাকে পুনর্বিবেচনার জন্য নিয়েছে। কমিশনকে এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্তে আসতে হবে। আমরা আশা করছি, ৩১ জুলাইয়ের আগেই আমরা এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত দেব।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে গতকালের আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, বাসদ মার্কসবাদীসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅন্যের হয়ে আত্মসমর্পণ, গেলেন কারাগারে
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে হেপাটাইটিস ‘বি’ সংক্রমণের হার ৪ শতাংশ