আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সাধারণ মানুষের জন্য নয় মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই বাজেট লুটেরাদের জন্য। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এই মন্তব্য করেন। ফখরুল বলেন, এটা তো হচ্ছে লুটেরাদের দেশে পরিণত হয়েছে, এই সরকার লুটেরায় পরিণত হয়েছে। লুটেরাদের বাজেট হবে কী জন্য? লুট করার জন্য। এটাই আমি দেখতে পারছি যে, আবার নতুন করে লুট করার জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন তাতে ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি। এ বিষয়ে ফখরুল বলেন, বাজেটে দেখবেন, আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি। যে সমস্ত জায়গাগুলো আয়ের অংশ দেখানো হচ্ছে, তাতে করে সাধারণ মানুষের ওপরে সমস্ত বোঝাটা গিয়ে পড়ে যাচ্ছে এবং এই ব্যয়টা মেটানোর জন্য তারা (সরকার) যেটা করবে, সেটাও সাধারণ মানুষের ওপরে গিয়েই পড়বে। অর্থাৎ বিদেশ থেকে অনুদান কিংবা ঋণ আর সেই সঙ্গে ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেওয়া। সবটাই আলটিমেটলি গিয়ে পড়ছে মানুষের ওপরে। মানুষ তো বোঝা টানতে টানতে এখন আর পারছে না আরকি।
বিএনপি মহাসচিবের দৃষ্টিতে বাজেটের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার মত কিছু নাই। পুরো বাজেটটা যেন মেগা প্রজেক্টের মেগা চুরি, মেগা দুর্নীতির জন্য করা হয়েছে। এই বাজেটকে শুধুমাত্র তথাকথিত ভাষা গণবিরোধী বলব না, এটা বাংলাদেশ বিরোধী বাজেট হয়েছে, বলেন ফখরুল।
মূল্যস্ফীতির কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের মূল্য যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, এটা তাদের জন্য সহনীয় পর্যায়ে নেই আর। কয়েকদিন আগে বাড়ল পেট্রোল ও ডিজেলের দাম। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেল। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হল, এখন বাজেটের সঙ্গে সঙ্গে আবার দাম বাড়বে। আইএমএফের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, তাতে বছরে চার বার করে বাড়বে। আমরা এই পয়সা কী জন্য দিচ্ছি? বিদ্যুৎখাতে যে চুরি হয়েছে, জ্বালানি খাতে যে চুরি হয়েছে, সেটা সবাই জানে। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট থেকে শুরু করে, ভারতের আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ আনা থেকে শুরু করে সবগুলোতে তাদের পকেট ভারী করেছে।
রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা বন্দর, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের কথা তুলে ধরে বিএনপি নেতা বলেন, ভালো কথা, কিন্তু আপনি সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করছেন? বহু মানুষ আসলে আর পারছে না। তারা শহর থেকে গ্রামে চলে যাচ্ছে। গ্রামে গিয়েও তারা বিপদে পড়ছে কারণ কর্মসংস্থান নাই।
১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করা আর বৈধ উপার্জনের ওপরে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ করারোপের বিষয়ে এক প্রশ্নে ফখরুল বলেন, যারা ন্যায়ের পথে চলে তাদের ওপরে চাপটা পড়বে। যারা অন্যায় করে তাদের ওপরে কোনো কিছু হয় না।
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও সাবেক সেনা প্রধান আজিজ আহমেদের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি নেতা বলেন, কী করে একজন সরকারি কর্মকর্তা হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি করে? কীভাবে? কী করে সেনা বাহিনীর সাবেক প্রধান এত সম্পত্তির মালিক হয়? এটা তো দুইটা ঘটনা। চারদিকে তাকান। এই যে মালয়েশিয়ায় কর্মীরা যেতে পারল না কেন? সরকারের ব্যর্থতার জন্য। অথচ দেখেন পত্রিকায় লিখেছে, ৪/৫ জন সংসদ সদস্য জড়িত। তারা ২০ হাজার, ২৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। কোথায় যাবে মানুষ?
যে সংসদে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটি কার– এই প্রশ্ন করে ফখরুল বলেন, তারাই সরকারি দল, তারাই বিরোধী দল, তারাই স্বতন্ত্র। একটা ডামি নির্বাচন হয়েছে। একজন সংসদ সদস্য আলোচনা শুরু করেছিলেন বেনজীরের ওপরে। তাকে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনা করা যাবে না। তার মানে সেগুলো বার্নিং ইস্যুজ যেগুলো, জনগণের কাছে আলোচিত সেগুলো, সেগুলো আলোচনা হবে না। সেখানে স্তুতি, স্তুতি।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।