এস এম সুলতান। প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী। সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার এক কিংবদন্তি তিনি। বাংলার কৃষক-শ্রমজীবী মানুষ তাঁর শিল্পে পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা, অনন্য অবয়ব। গতকাল ১০ অক্টোবর ছিলো তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁর প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা।
এস এম সুলতান ১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট, ১৯২৩ সালে নড়াইলের মাসিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম হয়েছিল দরিদ্র কৃষক-পরিবারে। তাঁর পুরো নাম শেখ মোহাম্মদ সুলতান। তাঁকে পরিবারের সবাই ‘লাল মিয়া’ বলে ডাকতেন। তাঁর মায়ের নাম মোছাম্মদ মেহেরুননেসা। তাঁর বাবা শেখ মোহাম্মদ মেসের আলী পেশায় ছিলেন রাজমিস্ত্রী। নড়াইলের ভিক্টোরিয়া স্কুলে কয়েক বছর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়েছিলেন। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে ছাড়তে হয় লেখাপড়া। নেমে পড়তে হয় জীবনযুদ্ধে। বাবার সাথে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন সুলতান। ফাঁকে ফাঁকে দালানের ছবি আঁকতেন। মনে সুপ্ত ইচ্ছে ছিল ছবি আঁকার, শিল্পী হবার। কিন্তু অর্থাভাবে তা হয়ে উঠছিল না। এক সময় এলাকার জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ সহযোগিতার হাত বাড়ালেন। সুলতান এলেন কলকাতায়। শুরু করলেন তাঁর শিল্পচর্চা। কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন বটে, কিন্তু তার মন প্রাতিষ্ঠানিক ধরাবাধা শিক্ষায় বন্দী ছিলো না। স্বাধীনচেতা সুলতান নিজেই চালিয়ে যান চর্চা। এস এম সুলতান ছিলেন একজন প্রকৃতিপ্রেমী। বিশেষ করে, কৃষক আর কৃষিকাজের মধ্যেই তিনি প্রকৃত জীবনের ছন্দ খুঁজে ফিরেছেন। তাঁর আঁকা সব ছবির মানুষেরাই পেশীবহুল। নিরন্ন, দরিদ্র মানুষকে তিনি কল্পনায় সবল, শক্তিমান করে তাঁর চিত্রকলায় উপস্থাপন করেছেন। ১৯৫০ সালে লন্ডনে এক দলগত প্রদর্শনীতে পাবলো পিকাসো, সালভাদ দালি প্রমুখ শিল্পীর সাথে এস এম সুলতানের ছবিও প্রদর্শিত হয়।
সুলতান ছিলেন প্রচারবিমুখ, নিভৃতচারী শিল্পী। পশুপাখি আর শিশুদের তিনি ভীষণ ভালোবাসতেন। নড়াইলে তাঁর বাড়িটি ছিল শিশু আর কিছু জীবজন্তুর আবাস। শিশুদের জন্য নড়াইলে তিনি তৈরি করেছেন ‘শিশুস্বর্গ’, ‘চারুপীঠ’, একটি প্রাইমারি ও একটি হাইস্কুল এবং একটি আর্ট স্কুল। কাজের স্বীকৃতি সরূপ তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার -একুশে পদক ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর প্রথিতযশা এই শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন।