মানবতার কবি, সাম্য ও দ্রোহের কবি দৃপ্ত কন্ঠে উচ্চারণ করে গেছেন—-বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। বেশি দূর যাবো না। বেগম রোকেয়া থেকে শুরু করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত যাঁরাই শিক্ষা দীক্ষা জ্ঞানে মননে প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন তাঁদের প্রত্যেকের মনন ও চেষ্টায় উত্তরাধিকার হবার পথ খোলা ছিল। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। সনাতনী সমাজ ব্যবস্থায় মনন ও চেষ্টাকে গুরুত্ব দিতে অবহেলার শেষ নেই। নারী নয় মানুষ হবার প্রচেষ্টা, আন্তরিকতা ও সমস্যা সমাধানের বাণী নিভৃতে কাঁদছে। উপেক্ষিত হচ্ছে মেধাবী দক্ষ সম্ভাবনাময় মাতৃশক্তি।
তার অগুণতি কারণও রয়েছে। মিনা কার্টুনের কথা কারো অজানা নয়। মেয়েদেরকেই শূচি অশূচি সতী অসতী লক্ষ্মী অলক্ষ্মী গুনী নির্গুনী ঘরোয়া না কী বখে যাওয়া এতোসব পরীক্ষায় উৎরে গার্হস্থ্য জীবনের কাঠগড়ায় বন্দী জীবন বেছে নিতে হয়।এরপর তো শুরু হয় অনুগ্রহ ও নিগ্রহের জীবন। চলতে ফিরতে উঠতে বসতে শ্বশুর বাড়ির সবার মন যুগিয়ে চলতে চলতে ভুলে যেতে হয় তার ব্যক্তিগত স্বপ্ন সম্ভাবনা ও ছোটবেলার সেই গানের লাইন—–“আর আসে না রাজার কুমার পঙ্খীরাজে চড়ে”। এদিক থেকে পারিবারিক নিরাপত্তার অভাব।মত প্রকাশে পরাধীনতা, আর্থিক স্বাচ্ছন্দ বা সম্পত্তিতে অধিকার না পাওয়া। জন্মের পর থেকেই তাকে অন্যের মন ও মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে চলতে হয়।ব্যক্তি পর্যায় থেকে ব্যক্তিত্বে উন্নীত হতে গেলে সহস্র বাঁধার সুউচ্চ পাহাড় ডিঙিয়ে কখনও ফিরে যেতে বাধ্য হয় অসহায়ত্বের চোরাবালিতে। মারা পড়তে হয় ধর্মীয় গোঁড়ামি কুসংস্কার ও সমাজপতিদের চোখ রাঙানির লেলিহান শিখায়।
বৈবাহিক জীবনে চাপিয়ে দেয়া হয় শাঁখা সিঁদূরের আড়ম্বর। এক্ষেত্রে পুরুষের কতো সাচ্ছন্দ্য। বদলাতে হচ্ছেনা তার সাজ পোশাক আচার আচরণ! কেন এধরনের বৈষম্য? কী অদ্ভুদ স্বামী মারা গেলে আবারও তাকে নিতে হবে বৈধব্য বেশ।জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয় অসুন্দরের যন্ত্রণা। খেতে হবে নিরামিষ। পালন করতে হবে হরেক প্রজাতির উপবাস।ভাবলে গা শিউরে ওঠে। কিন্তু স্ত্রী বা বউ মারা গেলে অশৌচকালীন সময় পার হতে না হতেই পতি দেবতা সাজ পোশাক খাওয়া দাওয়ায় কোন রকম পরিবর্তনের ধার না ধরে ঢাক ঢোল পিটিয়ে ঘরে সেবাদাসী আনতে উঠে পড়ে লেগে যায়। প্রশ্নটা এখানেই, আধুনিক বিশ্বে সব কিছুর উন্নয়ন ও সুবিধা যদি বিশ্বের সবাই ভোগ করে স্বাচ্ছন্দ্য ও সুখি জীবনযাপন করবার সুযোগ পায়, সেক্ষেত্রে সনাতনী নারীরা কেন এখনও গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের কুলুপ এঁটে অন্ধকারের গহবরে অধিকার বঞ্চিত জীবনকে আজো যাপন করবে। স্বামী মারা গেলে তার জীবনে নতুন মাত্রায় কষ্ট ও নির্মমতা যোগ হয়। তখন সে হয়ে পড়ে শ্বশুর বাড়ির অবহেলিত ও অপাংক্তেয় সদস্য। ছেলে মেয়ের সংসারে বোঝা। এমন নিগ্রহ ও লাঞ্ছনার জীবন সত্যিই নিদারুণ কষ্টের। আজ বাবার সম্পত্তি ও স্বামীর সম্পত্তি ও সন্তানের সম্পত্তির ওপর যদি প্রতিটি মেয়ে স্ত্রী ও মায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠা পায় তাহলে সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন—–সনাতনী সমাজেও মাথা উঁচু করে সম্ভাবনার চূড়ায় পৌঁছুবে। সংসার পরিচালনার পাশাপাশি নিজেকে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, সংসদের অভিভাবক স্পীকার সহ খ্যাতিমান বিজ্ঞানী গবেষক প্রকৌশলী ও চিকিৎসকের দায়িত্বে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। সেই সুদিনের অপেক্ষায় দোষ কোথায়?