ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেছেন, এসিল্যান্ডরা যেন তাদের অফিসে যাওয়া প্রত্যেক নাগরিকদের সম্মান দিয়ে কথা বলেন। তাদের সমস্যাগুলো মনোযোগ সহকারে শুনে কীভাবে তা সমাধান করা যায়, সে ব্যাপারে পরামর্শ দিবেন। জনগণের কাছে স্মার্ট ভূমিসেবার বিষয়টি ভালো করে বুঝিয়ে বলবেন। ফলে অদূর ভবিষ্যতে ভূমি সংক্রান্ত মামলা মোকদ্দমা একেবারে কমে যাবে। জনগণকে খুব প্রয়োজন ছাড়া ভূমি অফিসে যেতে হবে না। তারা ঘরে বসেই সকল সেবা অনলাইনের মাধ্যমে পেতে পারে।
গতকাল নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম হলে স্মার্ট বাংলাদেশ : স্মার্ট ভূমিসেবা ও ভূমি ব্যবস্থাপনা প্রেক্ষিত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ও জেলা প্রশাসন কর্তৃক ভূমিসেবা সপ্তাহ–২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
মন্ত্রী বলেন, ভূমি সপ্তাহ উদযাপনের পরেও সারাবছর অফিসে ভূমিসেবা বিষয়ক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া জরুরি। একদম জেলা থেকে ইউনিয়ন পযর্ন্ত সব জায়গায় ভূমি সংক্রান্ত সকল বিষয় হাতে কলমে শেখানো হবে। অনলাইনের মাধ্যমে একজন গ্রাহক যাতে ঘরে বসে ভূমিসেবা নিতে পারে সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
বক্তব্যে ভূমিমন্ত্রী আরো বলেন, স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণে বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করতে হবে। আর স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করতে হলে স্মার্ট নাগরিকের পাশাপাশি স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থপনা অবশ্যই প্রয়োজন। ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পদ্ধতি উদ্ভাবনের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু দেশের মানুষ যদি স্মার্ট ভূমিসেবা সম্পর্কে না জানে, তাহলে আমাদের একার পক্ষে এটা অনেক সময়সাপেক্ষ হয়ে উঠবে। আমরা যারা শিক্ষিত তারাও ভূমির অনেক বিষয়ে জানি না। তাই নবম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ভূমি সংক্রান্ত বেশকিছু বিষয় রাখা হয়েছে। যাতে অন্তত কেউ নবম শ্রেণি পযর্ন্ত পড়লে ভূমি সংক্রান্ত কিছু ধারণা পাওয়া যাবে।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের কৃষি জমিতে বড় বড় বিল্ডিং বানিয়ে মানুষ ঘর তৈরি করছে। কিন্তু শুধু ঘর থাকলে হবে না আপনাকে দুবেলা ভাতও খেতে হবে। তাই কৃষি জমি, নদী ও পুকুর সংরক্ষণের বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। নদীর পাড় কোনভাবেই ভরাট করা যাবে না। যেভাবে মানুষ জমি, পুকুর ভরাট করে ঘর তৈরি করছে, তাতে আজ থেকে ৫০ বছর পর আর কোনো কৃষি জমি অবশিষ্ট থাকবে না। তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী। এ সুন্দর চট্টগ্রামকে আরও সুন্দর করে সাজাতে চাই। আপনাদের সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। তিনি বলেছেন, ‘দেশে একজন মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না।’ তিনি কথা রেখেছেন, চট্টগ্রামকে ভূমিহীন ও গৃহহীন ঘোষণা করা হয়েছে।
নদী, পুকুর ও জলাশয় সংরক্ষণের বিষয়ে কঠোর বার্তা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, নদী সংরক্ষণ করতে হবে। কোনভাবেই নদী বা নদীর আশপাশ ভরাট করা যাবে না। আমরা এসব বিষয় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছি। আমাদের পুকুর ও জলাশয় সংরক্ষণ করতে হবে। কৃষি জমির শ্রেণী কোনভাবেই পরিবর্তন করা যাবে না। ফসলি জমি ও কৃষি জমির শ্রেণী পরিবর্তন কঠোরভাবে রোধ করতে হবে। যেভাবে কৃষি জমি চলে যাচ্ছে, ৫০ থেকে ৭০ বছর পর আর কোনও কৃষি জমি থাকবে না। তাই আমাদের সজাগ হতে হবে। কোনভাবেই যাতে মাটি ভরাট করে কৃষি ও ফসলি জমি নষ্ট করা না হয়।
ভূমি আইন সম্পর্কে সচেতনতার কথা বলে মন্ত্রী বলেন, সিভিল মামলায় গেলে পরিবার একেবারেই শেষ হয়ে যায়। বাবা ছেলেকে, ছেলে তার ছেলেকে এ মামলা দিয়ে যায়। এতে কোন সামাধান হয় না। উল্টো টাকা–পয়সা হারিয়ে পথে বসতে হয়। তাই আমাদের ভূমি আইন সম্পর্কে জানতে হবে।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার রাজীব হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) এমদাদুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আ স ম মাহতাব উদ্দিন ও অতিরিক্ত ডিআইজি প্রবীর কুমার রায়।
