নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) গুরুত্বপূর্ণ তিনটি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ১৪ নভেম্বর সকালে তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রকল্প তিনটি উদ্বোধন করবেন। বাকি দুটি প্রকল্প হচ্ছে বাকলিয়া এক্সেস রোড এবং ফৌজদারহাট–বায়েজিদ লিংক রোড। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উক্ত তিনটি প্রকল্প চট্টগ্রামের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে।
সূত্রে জানা যায়, লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গার টানেলের মুখ পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করেছে সিডিএ। চার লেনের এই ফ্লাইওভারটির নামকরণ করা হয়েছে ‘মেয়র মহিউদ্দীন চৌধুরী সিডিএ ফ্লাইওভার’। প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন এই ফ্লাইওভারটি লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা সৈকত পর্যন্ত বলা হলেও মূলত এক্সপ্রেসওয়ে শুরু হচ্ছে বহদ্দারহাট থেকে। বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার থেকে নেমে মুরাদপুর–লালখান বাজারের বিদ্যমান আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের সাথে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের পাশে নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যুক্ত করা হচ্ছে। ফলে মুরাদপুর থেকে ফ্লাইওভারে ওঠা কোনো গাড়ি সরাসরি পতেঙ্গা সৈকত বা টানেলের মুখ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। পতেঙ্গা থেকে শহরে আসা গাড়িগুলো টাইগারপাস হয়ে লালখান বাজারে ম্যাজিস্ট্রেট কলোনির সামনে নিচে নামবে এবং যাদের মুরাদপুর বা বহদ্দারহাট কিংবা ওই রোড ধরে অন্য কোথাও যাওয়া দরকার তারা লালখান বাজার থেকে আবার ফ্লাইওভারে চড়তে পারবে। টাইগারপাসে পাহাড় না কাটার জন্য এক্সপ্রেসওয়ের চার লেনের মধ্যে দুই লাইন নিচে নামিয়ে দিয়ে ডিজাইন করা হয়। মূল ফ্লাইওভার থেকে পরে বিভিন্ন পয়েন্টে ১৪টি লুপ এবং র্যাম্প নামানো হবে।
এই প্রকল্পটি আগামী ১৪ নভেম্বর সকালে উদ্বোধন করা হচ্ছে। তবে পুরোদমে যান চলাচল শুরু করতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে বলে সিডিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। মূল ফ্লাইওভার দিয়ে দ্রুত যান চলাচল শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে যে ১৪টি লুপ ও র্যাম্প নামানো হবে সেগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ করতে আরো কয়েক মাস সময় লাগবে।
এদিকে সাবেক এমপি জানে আলম দোভাষের নামে করা বাকলিয়া এক্সেস রোড উদ্বোধন না হলেও এই সড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সড়কটি নগরীর যান চলাচলে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। ১ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রাস্তা ব্যবহার করে শহরের সিরাজউদ্দৌলা রোড থেকে মাত্র ৫ মিনিটে শাহ আমানত ব্রিজ পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। শহরের যান চলাচলের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা ৪ লেনের সড়কটি নির্মাণে ২১৭ কোটি ৫১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১৪ সড়কটি উদ্বোধন করবেন।
সিডিএর অপর গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হচ্ছে ফৌজদারহাট থেকে বায়েজিদ সড়ক পর্যন্ত লিংক রোড। এশিয়ান ইউনির্ভাসিটি ফর উইম্যানের বহিঃসীমানা দিয়ে লুপ রোড নির্মাণসহ ঢাকা ট্রাংক রোড থেকে বায়েজিদ বোস্তামী রোড পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ‘বৈপ্লবিক’ পরিবর্তন আনা হয়েছে। ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব সড়ক’ নামের এই প্রকল্পটি উদ্বোধন না হলেও ইতোমধ্যে পুরোদমে যান চলাচল শুরু হয়েছে। লালখান বাজার থেকে ফ্লাইওভারে বায়েজিদ বোস্তামী সড়কে নামার পর ওখান থেকে উক্ত সড়ক ধরে ঢাকা–চট্টগ্রাম রোডে যাতায়াতে গতি এসেছে। সড়কটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩১৯ কোটি ৬১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা।
সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস আজাদীকে বলেন, আগামী ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্প তিনটি উদ্বোধন করবেন। তিনি বলেন, শুধু যান চলাচল নয়, চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নে এই তিনটি প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।