এলাচের ডিও বিক্রির অর্ধশত কোটি টাকা নিয়ে ব্যবসায়ী ‘লাপাত্তা’!

খাতুনগঞ্জে বিশ্বাসের লেনদেনে ফের প্রতারণা

জাহেদুল কবির | মঙ্গলবার , ১১ জুন, ২০২৪ at ৭:০২ পূর্বাহ্ণ

ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারী বাজার খাতুনগঞ্জে আবারও আর্থিক প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। খাতুনগঞ্জের সোনা মিয়ার মার্কেটের নুর ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী নাজিম উদ্দিন এবার এলাচের ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) স্লিপ বিক্রি করে ব্যবসায়ীদের অর্ধশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, গত ২২ মে থেকে ৫ জুন পর্যন্ত নাজিম উদ্দিন অন্তত ৪ হাজার টন এলাচের ডিও স্লিপ বিক্রি করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা অর্ধশত কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন বলে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। অভিযুক্ত নাজিমের কাছে এলাচ ১ কেজি থাকলেও তিনি এলাচের ডিও স্লিপ বিক্রি করেছেন ১০০ কেজি। এছাড়া ক্রেতারাও জানতেন না, তার কাছে কি পরিমাণ এলাচ ছিল।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক এবং খাতুনগঞ্জের আরএম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলমগীর পারভেজ বলেন, খাতুনগঞ্জের সোনা মিয়া মার্কেটের নুর ট্রেডিংয়ের মালিক নাজিম উদ্দিন এলাচের স্লিপ বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাত করেছেন, এমন অভিযোগ আমরা পেয়েছি। পরে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীকে নিয়ে প্রায় মার্কেটের অর্ধশত ব্যবসায়ী গত বুধবার রাতে সমিতির কার্যালয়ে আসে। তারা প্রায় অর্ধশত কোটি আটকে যাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করেন। আমরা অভিযুক্ত নাজিমের সাথে কথা বলেছি। সে পাওনা টাকা পরিশোধ করার আশ্বাস দিলে আমরা তাকে তার ভগ্নিপতির জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু ছাড়া পাওয়ার পর সে আত্মগোপনে চলে যায়। এ ঘটনায় পাওনাদাররা কে কত টাকা পাবেন, এটি বের করার জন্য ১১ সদস্যের একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম ওবায়েদুল হক দৈনিক আজাদীকে বলেন, দুইজন ব্যবসায়ী আজ (গতকাল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমার কাছে এসেছেন। তাদের কথা শুনে, আমি পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো।

খাতুনগঞ্জের কয়েকজন প্রবীণ ব্যবসায়ী বলেন, বিশ্বাসই খাতুনগঞ্জের লেনদেনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। বছরের পর বছর এই প্রথাই চলে আসছিলো। বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) বা চেকের বিনিময়ে বাকিতে দৈনিক ৮০০ থেকে হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেন চলে এই ভোগ্যপণ্যের বাজারে। গত তিন দশকে চাক্তাই খাতুনগঞ্জে অন্তত শতাধিক প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। শুরুটা হয় ১৯৮৬ সালে। সর্বশেষ সংযোজন হলোনুর ট্রেডিংয়ের নাজিম উদ্দিন। এভাবে ব্যবসায়ীদের টাকা মেরে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার প্রবণতায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। চাক্তাই খাতুনগঞ্জে ছোট বড় প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। বাপ দাদার আমল থেকেই এখানে দেখে আসছি বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে এই বাজারের ব্যবসা পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু এরমধ্যে নিয়মিত বিরতিতে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর পাওনা টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার ঘটনাও বাড়ছে। এর ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে। এখন তাই আগের মতো বিশ্বাস করাটা কঠিন হয়ে পড়ছে। এতে একদিকে যেমন খাতুনগঞ্জ বিশেষত্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাতুনগঞ্জের এক ব্যবসায়ী বলেন, কোনো ব্যবসায়ী টাকা মেরে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার পর খাতুনগঞ্জের বেশ কিছু ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা নিজেদের মতো করে সালিশ ডাকে। সালিশে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে টাকা উদ্ধার করে দেয়ার কথা বলা হলেও আদতে টাকা আত্মসাতকারী ব্যবসায়ীর সাথে গোপন আঁতাত করে মোটা অংকের টাকা নিয়ে চুপ হয়ে যান। কোনো ব্যবসায়ী সংগঠন আজ পর্যন্ত একটি সুনির্দিষ্ট প্রতারণার বিচারও করতে পারেনি। উল্টো বিচারের নামে নিজেদের পকেট মোটা করেছেন। এতে প্রতারক ব্যবসায়ীরাও টাকা মেরে উধাও হওয়ার সাহস পান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচকবাজারে গৃহবধূ ইয়াছমিন হত্যায় ঘাতক স্বামী জোবাইর গ্রেফতার
পরবর্তী নিবন্ধ১২ মণ ওজনের সাদাবাবুর দাম ৭ লাখ টাকা