আগামীকাল শুক্রবার দেশব্যাপী একযোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের (২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের) এমবিবিএস ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। সকাল দশটায় এ ভর্তি পরীক্ষা শুরু হলেও সকাল ৮টা থেকে পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ পাবেন। যদিও সকাল ৯টার মধ্যে কেন্দ্রে প্রবেশের জন্য পরীক্ষার্থীদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তার।
তিনি বলেন, সাড়ে ৯টার মধ্যে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষার হলে আসন গ্রহণ করতে হবে। তবে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতি আমাদের পরামর্শ, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে সকাল ৯টার মধ্যে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে পারলেই সবচেয়ে ভালো হয়। পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইলসহ কোন ধরণের ইলেট্রনিকস ডিভাইস নেয়া যাবে না বলেও জানান চমেক অধ্যক্ষ।
এবারের ভর্তি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) কেন্দ্রের অধীনে ১৩ হাজার ১২৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। হিসেবে পরীক্ষার্থীর এ সংখ্যা গতবারের তুলনায় ৭৬৪ জন কম। গতবার ১৩ হাজার ৮৯১ জন (প্রায় ১৪ হাজার) পরীক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। গতবারের পরীক্ষার্থীর এ সংখ্যা চট্টগ্রামে এ যাবতকালের মধ্যে রেকর্ড সর্বোচ্চ।
এর আগের বছর (২০২০–২১ শিক্ষাবর্ষে) পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৯০৫ জন। তারও আগের বছর (২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষে) অংশ নেয় ৬ হাজার ২১১ জন। হিসেবে দুই/তিন বছরের ব্যবধানে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দ্বিগুনেরও বেশি বেড়েছে চট্টগ্রামে। চমেকে এমবিবিএস কোর্সে প্রতিবছর ২৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকে।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালে এইচএসসি পরীক্ষা না নিয়ে অটোপাশের ঘোষণা দেয় সরকার। আর পরীক্ষা ছাড়াই বিকল্প পদ্ধতিতে (জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে) মূল্যায়নের মাধ্যমে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে করে জিপিএ–৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেড়ে যায়।
জিপিএ–৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়ে যায় ২০২০–২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায়। আগের বছরের (২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের) ৬ হাজার ২১১ জনের স্থলে ২০২০–২১ শিক্ষাবর্ষে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ হাজার ৯০৫ জনে। গতবার আরো বেড়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১৪ হাজারে। যদিও এবার পরীক্ষার্থীর এ সংখ্যা কিছুটা কমেছে।
চমেক কেন্দ্রের অধীনে গতবার ৭টি ভেন্যুতে পরীক্ষা নেয়া হয়। এবার ভেন্যু সংখ্যা কমিয়ে ৫টি করা হয়েছে। চমেক প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে– চমেক কেন্দ্রের অধীনে এবার চমেক ক্যাম্পাস, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, কাজেম আলী স্কুল এন্ড কলেজ, বাওয়া (বাংলাদেশ মহিলা সমিতি) স্কুল এন্ড কলেজ ও চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ ভেন্যুতে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। গতবার থাকা দুটি ভেন্যু এবার বাদ পড়েছে।
৫টি ভেন্যুর ১৩০টি হলে এবার এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতবার ৭টি ভেন্যুতে হল সংখ্যা ছিল ১৪৫টি।
চমেক প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী– ২০১৮ সালে ৩টি ভেন্যুতে চট্টগ্রামে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৬৬৩ জন। ২০১৭ সালে ভেন্যু ছিল ৫টি। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৭৬ জন। ২০১৬ সালে ৫ ভেন্যুতে ৭ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায়। ভর্তি পরীক্ষা তদারকিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খানের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের পরিদর্শন টিম গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও ৭ সদস্যের আরো একটি টিম গঠন করেছে।
ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার। পরীক্ষা কেন্দ্র তদারকিতে প্রতি ভেন্যুতে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন জানিয়ে চমেক অধ্যক্ষ বলেন– মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক গঠিত পরিদর্শন টিমের সদস্যরাও কাজ করবেন। আইন–শৃঙ্খলারক্ষা বাহিনীর সদস্যরা তো থাকছেনই। এছাড়া সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণে ১২ সদস্যের কোর কমিটি ছাড়াও আরো একাধিক কমিটি (ভর্তি পরীক্ষা কমিটি, লিঁয়াজো কমিটি, ভেন্যু কমিটি, শৃঙ্খলা কমিটি ও প্রশ্নপত্র গ্রহণ ও সরবরাহ কমিটি) গঠন করা হয়েছে। আর পর্যবেক্ষক হিসেবে আট শতাধিক শিক্ষক হলে দায়িত্ব পালন করবেন। সবমিলিয়ে ১১ শতাধিক শিক্ষক এ ভর্তি পরীক্ষায় বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত থাকছেন বলেও জানান অধ্যক্ষ।