জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেছেন, সাবেক সংসদ সদস্যদের (এমপি) কোটায় আনা গাড়িগুলো আমরা নিলামে দিয়েছিলাম। তবে আশানুরূপ ফল পাইনি। এখন আমরা কিছু বিকল্প চিন্তা করছি। যেমন কোনো কোনো সরকারি সংস্থা প্রস্তাব দিয়েছে, তারা ৬০ শতাংশ দামে গাড়িগুলো নিতে চায়। আমরা জলের দরে বিক্রি করতে চাই না। এগুলোর একেকটি গাড়ির দাম ৮ থেকে ৯ কোটি টাকা। যদি উপযুক্ত দাম না পাই, তাহলে আরও ভালো ব্যবহার কীভাবে করা যায়, তা সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেব। এসব গাড়ি বছরের পর বছর ফেলে স্ক্র্যাপ করার পক্ষে নই। অচিরেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সম্মেলন কক্ষে ব্যবসায়ী ও অংশীজনদের সাথে তিনি এসব কথা বলেন। শুল্কায়নে নতুন সফটওয়্যারের বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যারা অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম ব্যবহার না করে অন্যান্য যেসব সফটওয়্যার ব্যবহার করে শুল্কায়ন করে আমরা সেসব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করব। সবচেয়ে মডার্ন টেকনোলজি এনে আমরা নতুন সফটওয়্যার তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছি। যাতে কোনো অবস্থাতেই সফটওয়্যার স্লো না হয়। কাজের ব্যাঘাত না ঘটে। শুরুতে কয়েকটি শুল্ক স্টেশনে পরীক্ষামূলকভাবে এটা প্রয়োগ করব। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে অন্তত দুই বছর সময় লাগবে।
আব্দুর রহমান খান বলেন, চট্টগ্রামে আমরা তিনটি আইকনিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নতুন ভবন। এই ভবন নির্মাণের প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়েছে। ভবন নির্মাণ শুরু হলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কার্যক্রম আগ্রবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে স্থানান্তর করা হবে। সব ব্যবসায়ীর অফিস আগ্রাবাদ বেইজড। সুতরাং কাস্টম হাউসের কার্যক্রম কয়েক বছরের জন্য স্থানান্তর হলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। এছাড়া কাস্টম একাডেমিতে নতুন একটি ভবন নির্মাণ করা হবে। আগ্রাবাদে নির্মাণ করা হবে নতুন কর ভবন। শিগগিরই এই তিনটি ভবনের কাজ শুরু হবে। আগামী আগস্ট মাসে এ বিষয়ে সরকারি আদেশ আসবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অফডককে জনপ্রিয় করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর চাচ্ছে বন্দর থেকে শতভাগ ডেলিভারি কার্যক্রম আইসিডি থেকে দেওয়ার জন্য। এটি নৌ পরিবহন উপদেষ্টা এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের চাওয়া। প্রায় ৭ হাজার এইচএস কোডের পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয়। এর মধ্যে মাত্র ৬৬ টি আইটেমের পণ্য ডিপো থেকে ডেলিভারি দেওয়া হয়।
আবদুর রহমান খান আরো বলেন, আমি জয়েন করার পর পর দেখলাম কিছু বিপজ্জনক কার্গো পড়ে আছে ১৪ বছর ধরে। সেগুলো আমরা রিমোভ করেছি। খেয়াল করেন, এগুলো বাংলাদেশের ডলার খরচ করে আমদানি হয়েছে। যেকোনো কারণে হোক এগুলো যায়নি। এটা কিন্তু আমাদের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। যেসব গাড়ি পোর্টে ইয়ার্ডে থেকে থেকে নষ্ট হয়ে গেছে সেগুলো ডলার দিয়ে আমদানি করতে হয়েছে। রাইট টাইমে অকশন করে রাস্তায় ছেড়ে দিতাম তাহলে পরে আবার এ পরিমাণ গাড়ি আমদানি করতে হতো না। এ কথাগুলো বোঝানোর চেষ্টা করেছি। যত দ্রুত সম্ভব যখনকার কাজ তখন যাতে শেষ করতে পারি।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনারসহ অকশন ম্যানেজমেন্টে যারা জড়িত আছে তাদের বলেছি, চট্টগ্রাম শহরে মাইকিং করে ঘোষণা দিতে। যাতে প্রত্যেকে জানে চট্টগ্রাম বন্দরে বড় অকশন চালু হয়েছে। যাতে যারা অংশ নিতে চায় সহজে অংশ নিতে পারে। এখানে আসা লাগবে না। যার যার মতো ঘরে বসে অনলাইনে পে অর্ডার জমা দিতে পারবে। ব্যাংক হিসাবের একটা তথ্য দিতে হবে। মানি রিসিট চলে আসবে। আপনি টেন্ডার জিতলে ভালো, নয়তো আপনার টাকা কাস্টম হাউস থেকে ফেরত চলে যাবে। এটাও আমরা শতভাগ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে করতে চাই। এখানে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রথম নিলামেই আমরা দিয়ে দেব। সর্বোচ্চ দামে দিয়ে দেব। নিলাম করতে করতে সময় নষ্ট করা এটা যাতে না হয়। এটা কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। আমরা কিন্তু এ রিস্ক নিয়েছি।
মতবিনিময় সভায় এনবিআর সদস্য মোয়াজ্জম হোসেন, কাজী মোস্তাফিজুর রহমান, মুবিনুল কবির, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিন, অ্যাডিশনাল কমিশনার মো. রুহুল আমিন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের মুখপাত্র ও ডেপুটি কমিশনার সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম কাস্টমস্ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক মো. শওকত আলীসহ বন্দর ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।