বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সুপারিশপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির সুযোগ দিয়ে নতুন নীতিমালা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়; যাতে একজন শিক্ষক কর্মজীবনে দুইবার ও শিক্ষিকা তিনবার বদলির সুযোগ পাবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নীতিমালাটি প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। তবে কিছু সময় পর সেটি সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর রাতে আবার সেটি প্রকাশ করা হয়। এটি স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষা (স্কুল, কলেজ) প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এনটিআরসিএ সুপারিশপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষক বদলি নীতিমালা–২০২৪ হিসেবে অভিহিত হবে। এতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়ের ও বেসরকারি মাধ্যমিক শাখার উপসচিব সাইয়েদ এ জেড মোরশেদের সই রয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
মোরশেদ আলী বলেন, কিছু বানান–টানান ভুল থাকায় নীতিমালাটি জারির পর সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। রাতে তা ফের প্রকাশিত হয়েছে। এখন নীতিমালা নিয়ে শিক্ষকদের কোনো আপত্তি থাকলে পর্যালোচনা হবে। পরিবর্তন–পরিবর্ধনের সুযোগ তো আছেই। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সহকারী প্রোগ্রামার এনামুল হক বলেন, নীতিমালাটি বিকেলে ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং পরে সরিয়ে নেওয়া, সবই করা হয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে। দীর্ঘদিন ধরেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বদলির সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ অগাস্ট বেসরকারি স্কুল–কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পারস্পরিক বদলির সুযোগ দিয়ে নীতিমালা জারি হয়। এরপর অক্টোবরে বদলির আবেদন গ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, সাধারণ শিক্ষকরা এর সুফল পাচ্ছেন না।
সমালোচনার মুখে বদলির আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়। আর বৃহস্পতিবারের নীতিমালার মাধ্যমে ১ আগস্টের নীতিমালাও বাতিল হয়ে গেল। এতে করে পারস্পরিক বদলির সুযোগও আর থাকছে না। নতুন নীতিমালায় বেসরকারি স্কুল ও কলেজের শিক্ষকরা বদলির সুযোগ পেলেও মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এখনই সে সুবিধা পাচ্ছেন না। এবারের নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রতিবছর ১ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে শিক্ষকরা বদলির আবেদন করতে পারবেন। এর আগে প্রতিবছর ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠানভিত্তিক শূন্যপদের চাহিদা প্রকাশ করবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর আবেদন নিষ্পত্তি করে প্রতি বছর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বদলির আদেশ জারি করবে। বদলি হওয়া শিক্ষকরা ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেবেন। শিক্ষকরা নিজ জেলায় বদলির সুযোগ পাবেন। তারা নিজ জেলায় পদ শূন্য না থাকলে নিজ বিভাগের যেকোনো জেলায় শূন্য পদের বিপরীতে বদলির আবেদন করতে পারবেন। চাকরিতে প্রথম যোগদানের দুই বছর পূর্ণ হলে বদলির যোগ্য হবেন শিক্ষকরা।
বদলি হয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার দুই বছর পর বদলির আবেদন করতে পারবেন। একজন শিক্ষক কর্মজীবনে দুইবার ও শিক্ষিকা তিনবার বদলির সুযোগ পাবেন বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে। একটি শূন্যপদের জন্য একাধিক আবেদন পাওয়া গেলে অগ্রাধিকার বিবেচনায় জ্যেষ্ঠতা, নারী ও দূরত্ব বিবেচনা অগ্রাধিকার পাবে। জ্যেষ্ঠতার বিচার হবে চাকরিতে যোগদানের তারিখের ভিত্তিতে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে একজনই বদলির সুযোগ পাবেন।
নতুন নীতিমালা নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন এনটিআরসিএ সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরামের (বাশিফ)’ সভাপতি মো. হাবিবুল্লাহ রাজু। পাবনার সুজানগরের খলিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, বিকালের পর নীতিমালাটি ওয়েবসাইটে না পেয়ে কিছুটা হতাশ ছিলাম। রাতে নীতিমালাটি আবার প্রকাশ পাওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে। এক্ষেত্রে অক্টোবরের আগেই বদলির সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। কারণ এর মধ্যে এনটিআরসিএ নতুন করে নিয়োগ দিয়ে দিলে বহু শিক্ষক এবার বদলির সুযোগ হারাবেন। তিনি বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে একজনের বদলির সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাবা উচিত।