চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের লাশঘরে পড়ে আছে স্বামী মোহাম্মদ ফারুকের নিথর দেহ। স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ শুনে নগরীর লালখান বাজারের বাসা থেকে হাসপাতালে ছুটে আসেন স্ত্রী সীমা আকতার। কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন, দুপুরে বাসায় খেতে এসেছিলেন। খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে মুরাদপুরের কর্মস্থলে যান তিনি। বলেছিলেন, রাতে ফিরতে দেরি হতে পারে। কিন্তু এভাবে যে চলে যাবেন, স্বপ্নেও ভাবিনি। এখন সন্তানদের কে দেখবে? মায়ের আহাজারিতে কিছু বুঝতে পারছে না ফারুকের সাত বছর বয়সী কন্যা ফাহিমা। এক স্বজনের কোলে আনমনে খেলছিল সে।
জানা গেছে, গতকাল বিকালে নগরীর মুরাদপুর এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ফার্নিচারের দোকানের কর্মচারী ফারুক (৩২)। বাইরে হট্টগোল দেখে তিনি বের হয়েছিলেন। এর মধ্যে হঠাৎ তার বুকে গুলি লাগে। ফারুকের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ১২ বছর বয়সী ছেলে মোহাম্মদ ফাহিম বাগমনিরাম সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র। মেয়ে ফাহিমা বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কেজি ওয়ানে অধ্যয়নরত। ফারুকের শ্বশুর মোহাম্মদ দুলাল বলেন, আমার দুই নাতি–নাতনি জানে না তার বাবা আর বেঁচে নেই। অল্প বয়সে তারা বাবা হারাল। এ দায় কে নেবে? দুই অবুঝ শিশুকে কী জবাব দেব? তাদের কে খাওয়াবে? পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিল ফারুক। সে তো আন্দোলনে যায়নি, রাস্তায় হাঁটছিল। এ দেশে কি নিরাপদে রাস্তায় হাঁটাও যাবে না? প্রধানমন্ত্রী কি এ পরিবারের দায়িত্ব নেবেন? এভাবে আর কত পরিবার তাদের অভিভাবক হারাবে?
নিহত ফারুকের সহকর্মী আনিসুর রহমান বলেন, ফারুক ভাই প্রতিদিন দুপুরে বাসায় খেতে চলে যান। আজকেও (গতকাল) গিয়েছিলেন। ফিরে আসার কিছুক্ষণ পর তিনি চা খেতে যাচ্ছেন বললেন। তবে তিনি যে এভাবে চলে যাবেন ভাবিনি।
অপরদিকে মুরাদপুরে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন ওমর গণি এমইএস কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ফয়সাল আহমেদ শান্ত (২১)। কোটা সংস্কার আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ছিলেন বলে তার সহপাঠীরা জানিয়েছেন। গতকাল বিকালে তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন সহপাঠী ও স্বজনেরা।
আমির হোসেন সাজিদ নামে তার এক সহপাঠী জানান, বাকলিয়া সরকারি কলেজ এইচএসসি পাস করে এ বছর এমইএস কলেজে ভর্তি হয়েছিল সে। কোটা সংস্কারের আন্দোলনে প্রথম থেকে যুক্ত ছিল। অন্য শিক্ষার্থীদের মতো সেও আন্দোলনে গিয়েছিল। গুলিবিদ্ধ হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেল। তার এই চলে যাওয়া মানতে পারছি না।