এভাবেই কেটে ফেলা হয় পাহাড়

| শনিবার , ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ

জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া

রাঙ্গুনিয়ায় দেদারসে পাহাড় কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। প্রকাশ্যে কাটা হচ্ছে ফসলি জমি। ফসলি জমি ভরাট করে পাকা স্থাপনা করার কার্যক্রম চলছে হরহামেশাই। এতে কমে আসছে ফসলি জমি, পাহাড় কাটায় নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। মাঝেমধ্যে উপজেলা প্রশাসন নামমাত্র দুয়েকটা অভিযান চালিয়ে অর্থদন্ড দিলেও থামানো যাচ্ছে না এসব পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম। এতে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে এই পাহাড় খেকো ও মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।

জানা যায়, পরিবেশ বিধ্বংসী এসব কার্যক্রম বন্ধে গেল মাসেই অভিযান চালিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারজান হোসাইন দুটো অভিযান চালিয়ে দুই লাখ টাকার অর্থদন্ড দেন। এছাড়া রাঙ্গুনিয়ার ইউএনও মো. রায়হান মেহেবুব দেন ৫০ হাজার টাকার অর্থদণ্ড। এরপরও পরিবেশ বিধ্বংসী এসব কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

সরেজমিনে উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়নের দক্ষিণে সরকারি আশ্রয়ণ পল্লীর কাছে এসবিএম ইটভাটা রয়েছে। ইটভাটাটির আশেপাশের পাহাড়গুলো কাটা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এরমধ্যে একটি পাহাড় অত্যন্ত নির্দয়ভাবে কেটে খাড়া করে ফেলা হয়েছে। এমনকি খাড়া পাহাড়টি কেটে মাঝখানে দুইভাগে রূপ দিয়েছে। কিনারায় মাটি কাটতে কাটতে গভীর খাদে পরিণত করা হয়েছে। স্থানীয়দের কাছ থেকে এর সঙ্গে কারা জড়িত জানতে চাইলে তারা মুখ খুলতে রাজি হননি।

তবে বাবু নামে পাশের ইটভাটার ম্যানেজার এটি কাটার সঙ্গে তারা জড়িত নয় জানিয়ে বলেন, এই মাটি দিয়ে ইট হবে না। তাই এসব আমাদের কাটার প্রয়োজনও নাই। তিনি বলেন, রাতের অন্ধকারে অস্ত্রসজ্জিত দুর্বৃত্ত খননযন্ত্র দিয়ে একাধিক গাড়ি যোগে এই পাহাড় কাটছে। তবে তাদের নাম পরিচয় আমরা জানি না। এই স্পট থেকে কিছুদূর আগালেই সরফভাটাশিলক সড়কের সাথেই আরও একটি পাহাড়কে নির্দয়ভাবে কেটে সাবাড় করতে দেখা গেছে।

এদিকে উত্তর রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন ইটভাটায় ফসলি জমি থেকে টপসয়েল কেটে গভীর খাদে পরিণত করার যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে ইটভাটা মালিকরা। মোগলের হাট খামার পাড়া এলাকায় দিনদুপুরে প্রকাশ্যেই ফসলি জমির মাটি কেটে পুকুরে পরিণত করতে দেখা গেছে। স্থানীয় এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নুরুল আলম নামে এক ব্যক্তি মুরগির ফার্ম করার জন্য এসব করছে। এসিল্যান্ড দুইবার নোটিশ করেছে। কিন্তু তারা আরো দ্রুত কাজ করছে।

ইসলামপুর মোহাম্মদপুর মসজিদ ফেলে টার্নিং অতিক্রম করতেই খোলা স্থানে রাস্তার পশ্চিম পাশে বিএমবি২ নামে ইটভাটা। এই ইটভাটার জন্য আশেপাশের জমি থেকে গভীর করে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতির পাশাপাশি ভাঙনের উপক্রম হয়েছে উমদাদিনি জামে মসজিদ নামে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ইসলামপুর বহারাতল এলাকাতেও একাধিক কৃষি জমির টপসয়েল কেটে মাটি স্তূপ করে রাখতে দেখা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, আর্থিকভাবে সাময়িকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় অনেক কৃষক তাদের জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাপকহারে হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ওসমান তালুকদার নামে এক ব্যক্তি জানান, শিলক তৈলাভাংগা বিলেও এমনটা হচ্ছে। মো. আজিজ নামে অপর একজন বলেন, কাপ্তাই সড়কের হরিণগেট থেকে শুরু করে চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান পর্যন্ত ফসলি জমি ভরাট করে দিনরাত প্রতিযোগিতা চলতেছে দোকান ও নতুন দালান করার জন্য।

প্রণব দে নামে একজন জানান, বিল, পুকুর ভরাট, পাহাড় কাটা, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন, বর্ষার পানি গতিরোধ করে নিজেদের ইচ্ছে মত ভরাট, আরও নানা ধরনের পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন যদি কার্যকরী না হয় তাহলে পুলিশ, ইউএনও বা ডিসি এসপি কি করবে?

এই প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান মেহেবুব বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে জরিমানা করেছি। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। স্থায়ীভাবে কৃষি জমির টপসয়েল এবং পাহাড় কাটা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসৌন্দর্য গিলে খাচ্ছে ভাসমান দুই শতাধিক দোকান
পরবর্তী নিবন্ধকর্মরত অবস্থায় এসআই অসুস্থ, হাসপাতালে মৃত্যু