মহানগরীর পরিকল্পিত নগরায়ন এবং গণমুখী উন্নয়ন নিশ্চিত করতে নতুন করে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কার্যক্রমে এবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০ বছরের জন্য এই মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছে। ১৯৯৫ সালে প্রণীত মাস্টারপ্ল্যানের মেয়াদ ২০১৫ সালে শেষ হওয়ার পর পাঁচ বছর গ্যাপ দিয়ে ২০২০ সাল থেকে ২০৪১ সালের জন্য নতুন করে এই মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজে এই প্রথম সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের অন্তুর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ওয়ার্ড পর্যায়ের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সংকট উত্তোরণে প্রয়োজনে পদক্ষেপ নেয়ার অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হবে। আজ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সাথে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, সিডিএ চেয়ারম্যান এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদের বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, একটি শহরের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদী একটি পরিকল্পনা প্রয়োজন। শহরের জনবসতি, ঘনত্ব, মাটির ধরণ, জলাশয়সহ নানা বিষয় মাথায় রেখে ঠিক কোন জায়গাটিতে কি হবে, কোথায় খাল আছে, খাল সংস্কার করতে হবে কিনা, কোন এলাকায় নতুন করে খাল খনন করতে হবে, পাহাড় কোন কোন পয়েন্টে আছে, এসব পাহাড় সংরক্ষণ করতে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, কোথায় আবাসিক এলাকা হবে, কোথায় বাণিজ্যিক এলাকা হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো মাস্টারপ্ল্যানে উল্লেখ থাকে। সার্ভেয়ার কর্তৃক বিস্তারিত সমীক্ষা এবং বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের মতামতের ভিত্তিতে
দেশি বিদেশি বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। মূলতঃ বিশেষজ্ঞদের বিবেচনায় একটি শহরকে গড়ে তোলার অ্যাকশন প্ল্যানই মাস্টারপ্ল্যান।
মহানগরীতে ১৯৯৫ সালে প্রণীত হয়েছিল ২০ বছর মেয়াদী মাস্টারপ্ল্যান। প্রণীত উক্ত মাস্টার প্ল্যানটি প্রণয়নে ইউএনডিপিসহ দেশি বিদেশি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছিল। মাস্টার প্ল্যানটিতে চারটি অংশ ছিল। স্ট্রাকচারাল, আরবাইনাইজেশন, ট্রান্সপোর্ট এবং ড্রেনেজ সিস্টেম।
উক্ত চারটি বিষয়ের উপর প্রণীত মাস্টার প্ল্যানের মেয়াদ ২০১৫ সালে শেষ হয়। এরপর থেকে নতুন করে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একটি পরিকল্পিত নগরায়নের জন্য নতুন করে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির একটি উদ্যোগ নেয়। নানা প্রক্রিয়া শেষে প্রকল্পটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। ২০১৮ সালে ২০৩৮ সাল পর্যন্ত সময়কালকে বিবেচনায় রেখে এই মাস্টারপ্ল্যান প্রনয়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও পরবর্তীতে ২০২০ সাল থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত সময়কালকে সামনে রেখে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ শুরু করা হয়। এতে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় প্রায় ৩৪ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে শুরু থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে সম্পৃক্ত করেছে। প্রতিটি ওয়ার্ডভিত্তিক একটি কমিটি গঠন করে নগরীতে ৪১টি কমিটি গঠনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে সম্পৃক্ত পৃথক কমিটি গঠন করার মাধ্যমে সার্ভে কার্যক্রম শুরু হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কাছ থেকে ওই এলাকার সমস্যা এবং সংকটগুলোর ব্যাপারে মতামত ও সুপারিশ গ্রহণ করে তা মাস্টারপ্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
সূত্র বলেছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা যেমন, ডেল্টা প্ল্যান–২১০০, রূপকল্প–২০৪১ ইত্যাদি অনুসরণের মাধ্যমে চলমান মাস্টার প্ল্যানে বিভিন্ন স্থানভিত্তিক উন্নয়নের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তাতে প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মতামত ও সুপারিশ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। আর এরই আলোকে আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পুরাতন ভবনস্থ কে বি আবদুচ সাত্তার মিলয়নায়তনে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের ব্যাপারে অংশীজন সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী প্রধান অতিথি এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। চট্টগ্রামের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সাথে অনুষ্ঠাতব্য সভায় সভাপতিত্ব করবেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম। এতে নগরীর সকল ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজেদের মতামত এবং সুপারিশ উপস্থাপন করবেন বলে জানান সিডিএর উপ–প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আবু ঈসা আনছারী।
তিনি বলেন, মহানগরীকে বাসযোগ্য রাখতে যুগোপযোগী, আধুনিক এবং বাস্তবসম্মত যে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে তাতে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের অংশীজন হিসেবে অন্তর্ভুক্তি বড় ধরণের ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
উল্লেখ্য, ৩৩ কোটি ৩২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ে মহানগরীর নতুন মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ডেটেঙ–টিলার ইজিএস জেভি নামের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ করছে। আগামী ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।