চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ৩২ বয়সী পুরুষ হাতি সৈকত বাহাদুরের মৃত্যুর একদিন পর মারা গেল ৮৬ বছর বয়সী মাদী হাতি ‘রংমালা’। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় পার্কের হাতির গোদায় ধীরে ধীরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বয়সের ভারে ন্যুব্জ হাতিটি। এর আগে গত সোমবার বিকেল ৪টার দিকে একই স্থানে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায় সৈকত বাহাদুর। একদিনের ব্যবধানে দুই হাতি মারা যাওয়ার ঘটনায় চকরিয়া থানায় দুটি পৃথক জিডি করা হয়। একইসাথে দুই হাতিরই ময়নাতদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। হাতি রংমালার মাহুত মোহাম্মদ হোছাইন দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রায় আড়াই বছর আগে মাদী হাতি রংমালাকে পার্কে আনা হয়। তারও আগে হাতিটির ওপর বেশ ধকল গেছে। কারণ ব্যক্তি মালিকানাধীন এই হাতিটিকে দীর্ঘ সময় ব্যবহার করেছিল চাঁদাবাজচক্র। সর্বশেষ এই হাতিকে ব্যবহার করে চট্টগ্রাম মহানগরীতে চাঁদাবাজি করার সময় বন বিভাগ উদ্ধারের পর পার্কে পাঠিয়েছিল। হোছাইন বলেন, পার্কে আনার পর রংমালাকে যথাযথ চিকিৎসাসহ সেবা প্রদান করা হয়। এই কারণে হাতিটি এতদিন বেঁচে ছিল। সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে ইতোপূর্বে প্রেরিত বন্য প্রাণীর তালিকায় মাদী হাতি রংমালা মৃত্যুর প্রহর গুণছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদীতে ‘বার্ধক্যের ভারে তিন প্রাণী’ শিরোনামে অসুস্থ হাতি রংমালার ছবিসহ সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ রংমালার চিকিৎসায় পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসাসেবা প্রদান শুরু করে। মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ড. বিবেক চন্দ্র সূত্রধর বলেন, বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে পড়া সাফারি পার্কের মাদী হাতিটির আয়ুষ্কাল পার হয়েছে অনেক আগেই। তবে বেশকিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর দীর্ঘসময় ধরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়ায় এতদিন বেঁচেছিল হাতিটি।
গত ২৮ নভেম্বর বিকেলে মারা যাওয়া ৩২ বছর বয়সী পুরুষ হাতি সৈকত বাহাদুরের ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সমর রঞ্জন বড়ুয়া। তিনি বলেন, মানুষের মতো প্রাণীরাও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা পড়তে পারে। সৈকত বাহাদুরের বেলাতেও এমন ঘটনা ঘটলো। অপরদিকে রংমালার ময়নাতদন্ত রিপোর্টে দেখা যায় হাতিটি বার্ধক্যজনিত কারণে মারা পড়েছে।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তত্ত্বাবধায়ক) মো. মাজহারুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে জানান, বর্তমানে সাফারি পার্কে ছোট–বড় চারটি হাতি রয়েছে। তদ্মধ্যে টেকনাফের বনাঞ্চল থেকে উদ্ধার হওয়া হাতিশাবক যমুনাও রয়েছে। বর্তমানে পার্কের আরো কিছু বন্যপ্রাণী বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুর প্রহর গুণছে।