এবার প্রয়োজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন

রিদুয়ান সিদ্দিকী | মঙ্গলবার , ২৬ আগস্ট, ২০২৫ at ৫:২৩ পূর্বাহ্ণ

২০২৪ সালের জুলাইয়ে আন্দোলন চলাকালীন সময়ে যখন ঢাকা সহ সারাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দেয়া হয় তখন সমগ্র বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের গতিপথ পরিবর্তন করে দেয়। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে গড়ে তোলে শক্ত প্রতিরোধ। পুলিশের ছোঁড়া গুলির সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের জীবনকে অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে নিজেদেরকে সময়ের শ্রেষ্ঠ সন্তান এবং জাতির বীর হিসেবে প্রমাণ করেছিলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর আগে ২০১৫ সালের নো ভ্যাট অন এডুকেশন আন্দোলন, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন সহ আরো অনেক যৌক্তিক আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভূতপূর্ণ অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তারা প্রমাণিত করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীরা পূর্ব থেকেই রাজনৈতিকভাবে অনেকটা সচেতন। বর্তমানে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার একটি বড় অংশ আজ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভরশীল। একটা সময় এই দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এক শ্রেণির মানুষ ফার্মের মুরগী হিসেবে আখ্যায়িত করতো। তবে দেশের ক্রান্তিলগ্নে বারবার দেশের হাল ধরে এই ধারণা ভুল প্রমাণিত করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই। সরকারিভাবে অনুমোদিত ১৯৯২ সালের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি আইন অনুযায়ী, আজ দেশজুড়ে প্রায় শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাব্যবস্থা যেমন বিস্তৃত হচ্ছে, তেমনি শিক্ষার্থীদের মতামত ও প্রতিনিধিত্বের সুযোগ স্বচ্ছ, সংগঠিত এবং নিরাপদ হওয়া আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। সেই প্রসঙ্গে ছাত্র সংসদের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব পর্যবেক্ষণ করা জরুরি।

বেশ কিছুদিন ধরে আমরা সারাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষার্থীদের ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হতে দেখেছি। ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ আরো করেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রসংসদ নির্বাচনের তফসিল এবং তারিখ ঘোষণা করেছে।

উল্লেখ্য, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্র সংসদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। বিশেষ করে বলতে গেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু), যাকে বাংলাদেশের ‘দ্বিতীয় সংসদ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে এবং তাদের দাবি ও মতামতের ভিত্তিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন তাদের কার্যক্রমকে গড়ে তোলে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে এখনও পর্যন্ত ছাত্র সংসদের জন্য কোনো বৈধ কাঠামো বা আইনগত ভিত্তি নেই। ইউনিভার্সিটি চার্জ আইন বা নীতি সংক্রান্ত কোনো অংশে সে বিষয়ে স্পষ্ট দাবি নেই। এর ফলে শিক্ষার্থীদের যথাযথ প্রতিনিধিত্বের সুযোগ খুবই সীমিত। একেবারে নেই বললেই চলে।

আমরা প্রায় শুনে থাকি, বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি, একাডেমিক ক্যালেন্ডার, মানসম্মত সুযোগসুবিধা ও শিক্ষার্থী সেবাসংক্রান্ত নানা ধরনের সমস্যা লেগেই থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ থাকলে এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য শিক্ষার্থীরা একটি আনুষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম পায়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও সমঝোতার পথ সহজ হয়।

গণতান্ত্রিক সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানসমূহে নেতৃত্ব বিকাশ অপরিহার্য। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে ছাত্রসংসদ নির্বাচন চালুর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের মান বৃদ্ধি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো সক্ষমতা অর্জন করাটাও খুব জরুরি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ এর মতো একটি সংসদ শিক্ষা জীবনকে সমৃদ্ধ করে। ইতিপূর্বে, বাংলাদেশের অনেক জাতীয় নেতা উঠে এসেছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ এর মাধ্যমেই।

তাই আমি মনে করি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু হলেগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোট প্রদান, আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সমন্বিত পরিকল্পনা ইত্যাদির চর্চা বাড়বে। ফলস্বরূপ শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব ও দায়িত্বশীলতা দিন দিন বিকশিত হবে। এবং এটি শিক্ষার্থীদের অধিকার, একাডেমিক পরিবেশ উন্নয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।

সর্বোপরি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কাঠামোগত ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে গঠনমূলক ও সুষম করবে না, বরং ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের বিকাশ, শিক্ষার্থীর সামাজিক ও একাডেমিক কল্যাণে অভূতপূর্ব অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলে আমি মনে করি।

লেখক: সাবেক সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থী, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসড়ক-মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল থামাতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধদর-কষাকষির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত শুল্কহার কমিয়ে আনা এক ঐতিহাসিক সাফল্য