এবারের বিশ্বকাপে জাপান যেন মুর্তিমান আতংক হয়ে দাড়িয়েছে। গ্রুপ পর্বে দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে হারিয়েছে তারা। স্পেন ও জার্মানীকে টপকে ‘ই’ গ্রুপের শীর্ষস্থান দখল করে নক আউট পর্বে এসেছে জাপান। আর নক আউট পর্বে জাপানের প্রতিপক্ষ গত আসরের রানার্স আপ ক্রোয়েশিয়া। মরক্কোর পরে দ্বিতীয় স্থানে থেকে গ্রুপ ‘এফ’ থেকে পরের রাউন্ডে খেলতে ক্রোয়েশিয়া। তাই এবার ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে আরো একধাপ এগিয়ে যেতে চায় এশিয়ার প্রতিনিধি জাপান। স্পেনের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচে ২-১ গোলে জিতে গ্রুপের শীর্ষস্থান নিশ্চিত করে জাপান। আয়ো টানাকার দ্বিতীয় গোলটি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও শেষ পর্যন্ত জাপানই হয়েছে গ্রুপ সেরা। আরো একবার মোরিইয়াসুর দ্বিতীয়ার্ধের খেলোয়াড় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত দলের জয়ে বড় ভূমিকা রাখে। আলভারো মোরাতার গোলে ১১ মিনিটে ডেডলক ভেঙ্গে ছিল স্পেন। ৪৮ মিনিটে বদলী খেলোয়াড় রিটসু ডোয়ানের গোলে সমতায় ফিও বে্লু সামুরাইরা। তিন মিনিট পর আরো এক বদলী খেলোয়াড় কাওরু মিটোমার দারুন এক পাসে টানাকা জাপানীদের শেষ ষোলতে পৌঁছে দেন। এই পাস নিয়েই বিতর্ক দেখা দেয়। বলটি পাস দেবার আগে সাইডলাইন অতিক্রম করেছে এমনটি মনে হলেও ভিএআর সুক্ষ বিচারে তা মেনে নেয়নি।
ফেভারিটের তকমা সাথে করে কাতার বিশ্বকাপে না আসা সত্ত্বেও একের পর এক অঘটনের জন্ম দিয়ে জাপান এখন চলতি আসরে যেকোন বড় দলের জন্য বিপদজনক দল হয়ে উঠেছে। আজ শেষ ষোলর ম্যাচে আল জানুব স্টেডিয়ামে ক্রোয়েশিয়ার মোকাবেলা করবে এশিয়ান জায়ান্টরা। এবারের আসরের অন্যতম ধারাবাহিক এই দলটিকে মোকাবেলা করার আগে ক্রোয়েটরা বাড়তি পরিকল্পনা মাথায় নিয়েই মাঠে নামছে।
এর আগে প্রথম ম্যাচে জার্মানদের হারিয়ে বিশ্বকাপের শুভ সূচনা করেছিল জাপান। এক টুর্নামেন্টেই ২০১০ ও ২০১৪ দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে হারানো দলটি নক আউট পর্বে খেলবে এটাই স্বাভাবিক। এর মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত গ্রুপ পর্বের বাঁধা পেরুতে সক্ষম হলো জাপান। চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে তাদের নক আউটের আগেই বিদায় নিতে হয়েছিল।
গ্রুপ পর্বে অবশ্য কোস্টারিকার কাছে হতাশাজনক ১-০ গোলে হারতে হয়েছিল এশিয়া জায়ান্টদের। এ কারনে জাপানীজদের এখন সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন ধারাবাহিকতা। আজকের ম্যাচটি জিততে পাওে জাপান আর পরের ম্যাচে যদি ফেভারিট ব্রাজিলকে হারিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া শেষ আট নিশ্চিত করতে পারে তাহলে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত অল এশিয়ান কোয়ার্টার ফাইনালে মোকাবেলা করকে এশিয়ান দুই পরাশক্তি। এখনো পর্যন্ত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা হয়নি জাপানের। মোরিইয়াসুর সুপার সাব যদি আরো একবার জ্বলে ওঠে তাহলে এই ম্যাচে যেকোন কিছুই সম্ভব। উজ্জীবিত জাপান শিবির সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই আজ মাঠে নামবে।
এদিকে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে স্বর্ণালী প্রজন্মের বেলজিয়ামের স্বপ্ন ভঙ্গ করে নক আউট পর্বের টিকিট পেয়েছে ক্রোয়েশিয়া। গ্রুপ রানার্সআপ হিসেবে তারা শেষ ষোলোয়। এই ড্রয়ে মরক্কোর পর গ্রুপ-এইচ’র দ্বিতীয় স্থান নিশ্চিত হয় জ্লাটকো ডালিচের ক্রোয়েশিয়ার। আর তিন ম্যাচে মাত্র এক জয় ও এক ড্রয়ে বেলজিয়ামের বিদায় নিশ্চিত হয়। সব ধরনের প্রতিযোগিতায় টানা নয় ম্যাচে অপরাজিত থেকে শেষ ষোলতে খেলতে এসেছে ক্রোয়েশিয়া। আগের দুই আসরেই এই ধাপ পার করে শেষ আট নিশ্চিত করা ক্রোয়েটরা ইতিহাস থেকেও আত্মবিশ্বাস পেতে পারে। যদিও কাউন্টার এ্যাটাক থেকে দুর্দান্ত খেলা জাপানীজদের বিরুদ্ধে কোন কিছুই সহজ ভাবে নিতে চাচ্ছে না ডালিচের দল। ২৫ বছর আগে প্রথম মোকাবেলায় জাপানের কাছে ৪-৩ গোলে পরাজিত হয়েছির ক্রোয়েশিয়া। এরপর ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ব্লু সামুরাইদের পরাজিত করার পর ২০০৬ সালে গোলশূন্য ড্র করে। কাতারে অবশ্য আগের সব আসরের থেকে একটু বেশী সতর্কতা নিতেই হচ্ছে ক্রোয়েটদের।
স্পেনের বিরুদ্ধে ডিফেন্ডার কো ইতাকুরা পরপর দুই ম্যাচে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পাওয়ায় জাপানের হয়ে খেলতে পারছেন না। বদলী বেঞ্চ থেকে উঠে এসে নিজেকে প্রমাণ করা তাকেহিরো টোমিইয়াসুর মূল দলে খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। স্টুটগার্ট মিডফিল্ডার ওয়াটারু এন্ডো আগের ম্যাচে বদলী হিসেবে নামলেও ফিটনেস সমস্যায় রয়েছেন। রাইটব্যাক হিরোকি সাকাই অনুশীলনে ফিরেছেন। তবে পেশীর সমস্যায় ভুগছেন টাকেফুসা কুবো।
আক্রমনভাগে আবারো জাপান বসকে দুঃশ্চিন্তায় ফেলেছেন কুবো। ক্রোয়েশিয়া ইতোমধ্যেই নিশ্চিত করেছে যে আজকের ম্যাচের জন্য পরিপূর্ণ ফিট একটি দলকেই তারা হাতে পাচ্ছে। যদিও এই ম্যাচে হলুদ কার্ড পেলে সম্ভাব্য কোয়ার্টার ফাইনালে দেখা যাবে না অভিজ্ঞ দুই খেলোয়াড় লুকা মড্রিচ ও ডিয়ান লোভরেনকে। মূল একাদশে একই দল থাকবে বলে ডালিচ জানিয়েছেন। এখন দেখার বিষয় জাপান আরেকটি অঘটন ঘটিয়ে পরের রাউন্ড নিশ্চিত করতে পারে কিনা।