এবার আসন সংকট হবে না চট্টগ্রামে

এইচএসসিতে পাসের হার কম ।। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বেড়েছে আসন সংখ্যা

হাসান আকবর | মঙ্গলবার , ২৮ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে এবার উচ্চ শিক্ষার আসন সংকট হবে না। বিভিন্ন বিষয়ে সরকারিবেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার প্রচুর আসন রয়েছে। এবার এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরা প্রচলিত নিয়মের ভর্তি পরীক্ষায় নিজেদের মেধার স্বাক্ষর রেখে অনায়াসে এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাবে। গত রোববার প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্টরা উপরোক্ত মন্তব্য করেছেন। তারা বলেছেন, গত বছরের চেয়ে এবার পাসের হার কম। অপরদিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষার আসন সংখ্যা বেড়েছে। চট্টগ্রামে নয়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও হয়েছে। এতে করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি কঠিন হলেও বেসরকারি পর্যায়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আসন খালি থাকবে। তবে শিক্ষা বাণিজ্যিকরণের কারণে অনেক গরীব মেধাবী ছাত্রছাত্রীর পক্ষে প্রত্যাশিত শিক্ষা লাভ সম্ভব নাও হতে পারে।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় ২৭৯টি কলেজের ১ লাখ ৩ হাজার ২৪৮ জন ছাত্রছাত্রী অংশ নেয়। পাস করেছে ৭৫ হাজার ৯০৩ জন। পাসের হার ৭৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

জিপিএ৫ প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় চট্টগ্রামে মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা কিছুটা কমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে সূত্র বলেছে, জিপিএ৫ পাওয়া মাত্র ৬ হাজার ৩৩৯ জন শিক্ষার্থী যদি ভর্তি পরীক্ষায় মেধার স্বাক্ষর রাখতে পারে তাহলে চট্টগ্রামের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজেদের ঠাঁই করে নিতে পারবে। জিপিএ৫ না পাওয়াদের মধ্যেও অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রী রয়েছে। বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগে ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বরের এদিকওদিকের অনেকেই জিপিএ৫ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

এসব মেধাবী ছাত্রছাত্রীসহ অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির জন্য চট্টগ্রামে আসন সংকট হবে না। তবে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের লিখিত পরীক্ষায়ই এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠবে। সরকারি মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ না পাওয়াদের অনেকেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষার খরচ অনেক বেশি হওয়ায় গরীব ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে ঝরে পড়ার আশংকা রয়েছে। আবার মফস্বলের অনেক ছাত্রছাত্রী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ঠাঁই না পেলে কেবলমাত্র আবাসন সংকটের কারণেও ঝরে পড়বে। চট্টগ্রামে এবার ৭৫ হাজার ৯০৩ জন ছাত্রছাত্রী পাস করেছে। তবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে মোট আসন রয়েছে ১৫ হাজারের কম। পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে না পারা বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক), চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), চট্টগ্রাম ডেন্টাল কলেজ, ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম টেঙটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম ইউনির্ভাসিটি, মেরিন একাডেমিসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৮ হাজারের মতো আসন রয়েছে। কঠোর ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শুধু চট্টগ্রামেরই নয়, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাবে। এতে করে চট্টগ্রামের মেধাবীদের সামনে চ্যালেঞ্জ বাড়বে। চট্টগ্রামে ইউএসটিসি, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ, এবছর নতুন চালু হওয়া মা ও শিশু ডেন্টাল কলেজ, সাদার্ন মেডিকেল কলেজ, মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ, ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে।

মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ না পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের নিকট প্রথম পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত চট্টগ্রামের সরকারি কলেজগুলোতেও ঠাঁই পাওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীদের চেষ্টার কমতি থাকে না।

চট্টগ্রামে উচ্চ শিক্ষার সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮টি অনুষদের অধীনে ৪৮টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে ৪ হাজার ৯২৬টি আসন রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তির সুযোগ পাবে প্রায় ৫ হাজার ছাত্রছাত্রী। তীব্র প্রতিযোগিতার মাঝে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তি হলেও অনার্স পড়ার আরো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চট্টগ্রামের সরকারি পাঁচ কলেজে আছে সম্মান কোর্স। এর মধ্যে কলেজ চট্টগ্রাম কলেজ, হাজী মুহম্মদ মহসীন কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ এবং চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ প্রায় ২০টি বিষয়ে প্রায় ৭ হাজার আসন রয়েছে।

এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন পটিয়া সরকারি কলেজ, কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোষ ডিগ্রি কলেজ, গাছবাড়িয়া কলেজ, বেসরকারি চট্টগ্রাম এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ইসলামিয়া কলেজ, হাজেরা তজু কলেজ, সীতাকুণ্ড কলেজ, নিজামপুর কলেজ এবং বিজয়স্মরণী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, আনোয়ারা কলেজ, হাটহাজারী কলেজ এবং চকরিয়া কলেজে অনার্স পর্যায়ে লেখাপড়ার সুযোগ রয়েছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, পোর্ট সিটি ইউনির্ভাসিটি, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনির্ভাসিটি, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বিজিসি ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি ও চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ইউএসটিসি), বিজিএমইএ ফ্যাশন ইউনির্ভাসিটিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। চট্টগ্রামে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বেড়েছে বলে মন্তব্য করে সূত্র বলেছে, যেসব শিক্ষার্থী পাস করেছে এবং মেধাবী তাদের লেখাপড়ার জন্য আসনের সংকট হবে না। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার খরচ যোগানো অনেক অভিভাবকের পক্ষেই কঠিন হবে বলে সূত্র মন্তব্য করেছে। গতকাল একাধিক অভিভাবক সন্তানদের ভর্তির ব্যাপার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এতোদিন রেজাল্টের জন্য উদ্বিগ্ন ছিলাম। এখন ভর্তির জন্য। ভর্তির যুদ্ধ রেজাল্টের যুদ্ধের চেয়ে অনেক কঠিন বলেও তারা মন্তব্য করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধট্রেনের ধাক্কায় টেম্পো খাদে আহত ৩