এফবিসিসিআই’র নেতৃত্বে পুনর্বার চট্টগ্রাম চেম্বার

অভীক ওসমান | সোমবার , ৭ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:২৯ পূর্বাহ্ণ

২ আগস্ট অনেকটা নিশ্চিত, কিছুটা সংশয় নিয়ে দেশের এপেক্স ট্রেড বডিদি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অফ কমার্স (১৯৭৪) এর প্রেসিডিয়াম নির্বাচন সম্পন্ন হলো। এতে থ্রি ট্রিলিয়ন ডলার ইকনমিক থিমের ঐক্য পরিষদ নেতা মাহবুবুল আলম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি এফবিসিসিআই’র ২৪ তম, চট্টগ্রাম থেকে ৩য় প্রেসিডেন্টের মুকুটে শোভিত হলেন। তার পূর্বসুরীরা হচ্ছেন

মরহুম এম মশিউর রহমান (১৯৭৪৭৬), মরহুম এ.এম. জহিরুদ্দিন খান (১৯৭৭), এম.. ওয়াহাব (১৯৭৮), চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী (১৯৭৯), ইফতেখারুল আলম (১৯৮০), নূরুদ্দিন আহমেদ (১৯৮১৮২), এম.এস. ইসলাম (১৯৮২৮৪), এম.. সাত্তার (১৯৮৪৮৫), এম..কাশেম (১৯৮৫৮৭), মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী (১৯৮৭৮৯), আলহাজ্ব মোহাম্মদ আকরাম হোসাইন (১৯৯০৯২), মাহবুবুর রহমান (১৯৯২৯৪), সালমান এফ. রহমান এমপি (১৯৯৪৯৬), ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুণ এমপি (১৯৯৯৯৮ এবং ২০০০২০০৩), আবদুল আওয়াল মিন্টু (১৯৯৮২০০০ এবং ২০০৩২০১৬), মীর নাসির হোসাইন (২০০৫২০০৭), আনিসুল হক (২০০৮২০১০), .কে. আজাদ (২০১০২০১২), কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ (২০১২২০১৫), আব্দুল মাতলুব আহমেদ (২০১৫২০১৭), সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এমপি (২০১৭২০১৯), শেখ ফজলে ফাহিম (২০১৯২০২১), জসিম উদ্দিন আহমদ (২০২১২০২৩)

চিটাগাং টু দ্য ফোর এই মহাত্মা বাণী আমরা পুনর্বার উচ্চারণ করতে পারি। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সমাজ তথা আমজনতার পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন, অভিবাদন। তার আগে চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে এ.এম জহিরুদ্দিন খান (১৯৭৭), আখতারুজ্জামান চৌধুরী (১৯৮৭৮৯) প্রেসিডেন্ট ছিল।

তাছাড়া কামাল উদ্দিন আহমদ (২০০৩২০০৫, কঙবাজার চেম্বার), মনোয়ার হাকিম আলী (২০১২২০১৫ চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার) ফার্স্ট/ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। মরহুম সেকান্দর হোসেন মিয়া (১৯৮০) ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। চট্টগ্রাম চেম্বারের নমিনেইটেড ডাইরেক্টরদের মধ্যে মরহুম জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, আমিরুল হক, এস.এম. নুরুল হক প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।

এই এপেক্স ট্রেড বডির বোর্ডে নির্বাচিত ও নমিনেইটেড ৮০ জন ডাইরেক্টর রয়েছেন। এফবিসিসিআই’র চেম্বার থেকে ‘এ’ক্যাটাগরির৭৩, বি ক্যাটাগরির১৪, জয়েন্ট চেম্বার (বিদেশীদের সাথে সংযুক্ত) ক্যাটাগরিতে ‘এ’ ক্যাটাগরি১৭, বি ক্যাটাগরির ২০, এ ক্লাস এসোসিয়েশন৪০৩; ‘বি’ ক্যাটাগরিসদস্য রয়েছে। এদের মনোনীত জেনারেল বডির মেম্বাররাই ভোটার।

চাকসুচট্টগ্রাম চেম্বারএফবিসিসিআই

গত শতাব্দীর ৮০’র দশকে শেষ দিকে তাকে যখন আমি প্রথম দেখি এক সুবর্ণ বিকেলে। সুদর্শন তিনি, তার মোটর বাইকটা এক পাশে দাঁড় করে রেখেছিলেন। তিনি আলাওল হলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাথে চাকসুর সমাজ সেবা সম্পাদক মোহাম্মদ ফারুক। মাজহারজমির (১৯৭৯৮০) প্যানেলের সহ সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ছিলেন মাহবুবুল আলম। তার তখন লিডারশীপ শুরু। তিনি আমাদের ছাত্র রাজনীতির আদর্শিক সাথী। বর্তমানে রুলিং পার্টি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য।

আমার মনে পড়ে১৯৯৭ সালের দিকে আমি তখন চেম্বারের এডিশনাল সেক্রেটারী। আমার চট্টগ্রাম কলেজের সতীর্থ। সামরিক শাসক জিয়া বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা হিসেবে আমার সাথে কারাবরণকারী ইউসুফ সিকদার চেম্বারে এসেছিলেন। তিনিই মাহবুবুল আলমকে এসোসিয়ে ক্যাটাগরিতে মেম্বারশীপ করান। এরপর তিনি ২০০২২০০৪, ২০০৫২০০৬ মেয়াদে ডাইরেক্টর হন। বন্ধু থেকে বস।

এরপর ২০১৩ থেকে ২০২৩ এক দশক ৫ম বার চট্টগ্রাম চেম্বার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। তার প্রথম মেয়াদ (২০১৩২০১৪) সালে আমি চেম্বার সচিব ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে অবসরে যাই। মাহবুবুল আলম মানুষ হিসেবে সরল সজ্জন। পূর্বসুরী নেতৃত্বের প্রতি সম্মান, সমীহ, আনুগত্য তার প্রধান গুণ। চেম্বারের অভিভাবক এম.. লতিফ এমপি কে তিনি যথাযথভাবে মান্যগন্য করতেন।

আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু

১৯৮৭৮৯ এই তিন বছর মেয়াদে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু এফবিসিসিসিআইর (চট্টগ্রাম চেম্বারের দ্বিতীয় জন) প্রেসিডেন্ট হন। তিনিও রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। তবে সর্বদলীয়ভাবে তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল বেশি।

আখতারুজ্জামান চৌধুরী প্রেসিডেন্ট হয়ে মতিঝিলস্থ আগাজ চেম্বার ক্রয় করার জন্য চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে অর্থায়ন করেন। তার উপর আমার ‘এ প্রোফাইল আর ট্রেডবডি লিডার’ একটা গদ্য ও ‘জননেতার জন্য এলিজি’ একটা দীর্ঘ পদ্য আছে। অত্যন্ত গণমুখী এই নেতাকে দেখেছি ভলকার্ট হাউজে ১০৪০ ডিগ্রি জ্বর নিয়েও ‘ওসমান, তোঁয়ার চেম্বার কেন আছে’ জিজ্ঞেস করেছেন।

আখতারুজ্জামান চৌধুরী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর ১৭ এপ্রিল ১৯৮৭ সালে চট্টগ্রাম নগরবাসী তাকে চট্টগ্রাম ক্লাবে একটা নাগরিক সংবর্ধনা দেন। এর জন্য এক সংবর্ধনা পত্রে অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ লিখেন : অ ঢ়ড়বঃ রহ যরংঃড়ৎু রং ফবারহব, ধ ঢ়ড়বঃ রহ ঃযব হবীঃ ফড়ড়ৎ রং ধ লড়শব। তিনি একই সাথে ৭৭ জাতি গ্রুপ ও ইসলামিক চেম্বারের নেতা নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তার পুত্র বর্তমান ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ৩ মেয়াদে চেম্বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

এ এম জহিরুদ্দিন খান

একে খান পুত্র এ.এম জহিরুদ্দিন খান ১৯৭৭ সালে এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ৭১’র পরে তাকে দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম চেম্বারে প্রেসিডেন্ট থাকতে হয়েছে। সূত্রমতে তিনি এফবিসিসিআই’র সূচনা লগ্নের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট। তিনি এফবিসিসিআই’র সংঘবিধি ড্রাফট শুরু করেন, সংস্কারও করেন। তিনিও আন্তর্জাতিক ট্রেডবডির সাথে সংযুক্ত ছিলেন। বাম্বু খান হিসেবে পরিচিত চাটগাঁইয়া ও ইংরেজি দুটো ভাষায় কথা বলতেন। চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম চেম্বারকে ঔন করতেন।

গত শতাব্দীর শেষ দিকে চট্টগ্রাম চেম্বারের মিটিং সমূহ আসতেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র মন্ত্রী যিনি পদত্যাগ করেছিলেন। চমৎকার কৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন। সুচরিত চৌধুরী সাথে বন্ধুত্ব ছিল। চেম্বার, বাইরে, বাসভবন ‘শ্যামা’য় দেখা হলে আমি আইটি শিখছি কীনা জানতে চাইতেন। মানুষকে খাওয়াতে পছন্দ করতেন। বাসভবনে, চট্টগ্রাম ক্লাবে তার সাথে খানার টেবিলে মিলিত হলে খুব এনজয় করতাম। তার উপর আমার “প্রয়াত ৫ জন ও ইবসেন” (২০০৯) গ্রন্থে শিল্পপতি, শিল্পী ও কবি এ.এম. জহির উদ্দিন খান থেকে একটা পদ্য উদ্ধৃত করছি :

আসছি আমি

শব্দের পাথর / ভাঙ্গা পথ / স্তব্ধ ছায়া/ দূরের আলো / ভাসছে আকাশ নিয়ে।

একা / পথ হারানো / আসছি আমি পাথর নিয়ে।

মাহবুবুল আলমের অর্জন ও চ্যালেঞ্জ :

মাহবুবুল আলম সার্ক চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্টসহ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও অবদান রেখেছেন। তার সময়ে শেখ হাসিনা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার উদ্বোধন করেন। তিনি জাপানের অনারারি কনসাল জেনারেল নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন। তাছাড়া এক্সিকিউটিভ বোর্ড মেম্বার, বাংলাদেশ ফরেন ইনস্টিটিউট। মেম্বার গভর্নিং বোর্ড, বাংলাদেশ ইকনোমিক জোন অথরিটি ও বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভলোপমেন্ট অথরিটি। মেম্বার, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ট্রেড সাপোর্ট এন্ড সাজেশনস্‌ কমিটি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এডভাইজরী কমিটি অব চিটাগাং পোর্ট অথরিটি। বোর্ড মেম্বার, কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমী। কোচেয়ারম্যান, এসএমই ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কিং কমিটি, শিল্প মন্ত্রণালয়।

৩ অগাস্ট আজাদীতে দেয়া সাক্ষাতকারে মাহবুবুল আলম বলেছেন “ডুইং বিজনেজ” ইজি করতে চান, বিকেন্দ্রীকরণ চান। জাতীয় নির্বাচনের সন্ধিক্ষণে বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতির অনিশ্চিত মেরুকরণের সময় চট্টগ্রাম থেকে তার উত্থান পর্ব যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং হবে। এ এম জহিরুদ্দিন খান, আখতারুজ্জামান চৌধুরীর মতো ড্যাশিং ও ডাইনোমিক ট্রেডবডি লিডারদের উত্তরসূরীকে এটা মনে রাখতে হবে।

তথ্য : . এফবিসিসিআইএর অ্যানুয়েল রিপোর্ট, . চট্টগ্রাম চেম্বারএর অ্যানুয়েল রিপোর্ট। ৩. কৃতি, চট্টগ্রাম চেম্বার প্রকাশনা. ১৯৮৭, . চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব বার্ষিকী, . প্রয়াত ৫জন ও ইবসেন, অভীক ওসমান, ২০০৯, . দৈনিক আজাদী, অগাস্ট, ২০২৩, . সুচরিত চৌধুরী রচনাবলী, . সাবেক চাকসু ভিপি মাজহারুল হক শাহ চৌধুরী।

লেখক: সাবেক সচিব ও প্রধান নির্বাহী, সিসিসিআই

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর রবীন্দ্রপ্রেম
পরবর্তী নিবন্ধইস্ট বেঙ্গলকে রুখে দিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী