দুই দফা দাবিতে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবাদানকারী কর্মচারীদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির কারণে নগরী ও উপজেলা নির্বাচন অফিস গুলোতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে সারাদেশে থানা–উপজেলা ও জেলা নির্বাচন অফিস গুলোতে সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে হয়। চাকরি স্থায়ীকরণ ও এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইসিতে স্থানান্তরের দুই দফা দাবিতে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুবিভাগের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা গতকাল থেকে সারাদেশে নির্বাচন অফিসগুলোতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন। চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলায় ২১টি থানা ও উপজেলা নির্বাচন অফিস রয়েছে। এনআইডি বিভাগের কর্মচারীদের ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম নির্বাচন অফিসের সকল থানা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসগুলোতে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে দেখা গেছে শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন ছাড়া সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সরেজমিনে নগরীর বেশ কয়েকটি থানা নির্বাচন অফিস গিয়ে এবং উপজেলা নির্বাচন অফিস গুলোতে খবর নিয়ে জানা যায়, নির্বাচন অফিসের এনআইডি বিভাগের কর্মচারীরা আন্দোলনে থাকায় চট্টগ্রাম নগরীর ৬টি থানা ও জেলার ১৫ উপজেলা নির্বাচন অফিসে এখন সেবা প্রার্থীরা তাদের নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিসের দুইজন অফিস সহকারীর সাথে কথা হলে তারা বলেন, এখন শুধু মাত্র জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন ছাড়া সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের কাজ গুলো নির্বাচন কর্মকর্তারা করে থাকেন, এ জন্য সেবা প্রার্থীরা শুধুমাত্র এই সেবাই এখন পাচ্ছেন।
নির্বাচন অফিসের ওই দুইজন অফিস সহকারী বলেন, কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে–যেমন নতুন ভোটার হওয়া, নতুন ভোটারের ফরম পোস্টিং দেয়া, ছবি তোলা, ভোটারদের সকল ডকুমেন্ট পোস্টিং দেয়া, ভোটার স্থানান্তর, সেবা প্রত্যাশীদের কাউন্সিলিং এ সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দূর–দূরান্ত থেকে আসা ভোটাররা তাদের তথ্যের জন্য এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন বলে জানান অফিসের এই দুই কর্মচারী।
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুবিভাগের আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ)-২ প্রকল্পের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা গতকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন। চাকরি স্থায়ীকরণ ও এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইসিতে স্থানান্তরের দুই দফা দাবিতে এ কর্মবিরতি চলছে।
গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দাবি আদায়ে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সামনে এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন নির্বাচন কমিশনের আইডিইএ–টু প্রকল্পের আউটসোর্সিংয়ের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। সারাদেশে থেকে এই বিভাগের কর্মচারীরা এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে সারাদেশে থানা ও উপজেলা ও জেলা নির্বাচন অফিস গুলোতে সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে হয়।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই সেবা বন্ধ থাকবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আইডিইএ–টু প্রকল্পে বর্তমানে ২ হাজার ২৬০ জন কর্মকর্তা–কর্মচারী কাজ করছেন। তারাই মাঠপর্যায়ে এনআইডির কাজ করেন। তাদের অনেকের চাকরিজীবন কর্মজীবনের প্রায় অর্ধেক পেরিয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, এনআইডি অনুবিভাগ ইসি থেকে সমপ্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীন নেওয়ার জন্য স্বতন্ত্র একটি আইন প্রণয়ন করে সরকার। তবে সেখানে বলা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে কার্যক্রম না নেবে ততদিন পর্যন্ত তা ইসির অধীনেই থাকবে। সরকার আইনটি করার সময় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ ও সাবেক নির্বাচন কমিশনাররা এনআইডি ইসির অধীনে রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। তাদের যুক্তি ছিল, যেহেতু ভোটার তালিকার ভিত্তিতে এনআইডি সরবরাহ করা হয়, সেহেতু ইসির অধীনে এই কার্যক্রম থাকাই নিরাপদ। এছাড়া ইসির এই কার্যক্রমের জন্য রয়েছে দেড় যুগের দক্ষতা, অবকাঠামো। নতুন করে অন্য কোনো দপ্তরের অধীন নিলে নতুন করে লোকবল, অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এতে রাষ্ট্রের ব্যয় ও নাগরিকদের ভোগান্তি বাড়বে।