ভরা মৌসুমেও মীরসরাইয়ে আকাশ ছোঁয়া দাম ইলিশের। সাগরে কাঙ্খিত ইলিশ না পাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। এক কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০–১৭০০ টাকায়, যা মধ্যবিত্তদেরও নাগালের বাইরে চলে গেছে। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের কথা দূরে থাক, মধ্যবিত্তদেরও পাতে উঠছে না ইলিশ। সারাদেশের সামগ্রিক চিত্রে যেন দেখা যায় মীরসরাই উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভায় অবস্থিত বিভিন্ন বাজার ঘুরে।
জেলেরা জানিয়েছেন, সাগরে বিগত বছরের তুলনায় এবার ইলিশ কম ধরা পড়েছে। এছাড়া ইলিশ শিকারের খরচও অনেক বেশি পড়ে। তবে তারা আশাবাদী, সামনের অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে। সেই সঙ্গে আগামী অক্টোবরে সাগরে ২২ দিনের জন্য ইলিশ ধরা বন্ধ না করারও দাবি জানিয়েছেন তারা।
ক্রেতারা বলছেন, এখনও ইলিশের দাম কমেনি। এখন যে দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে তা নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। সবার পক্ষে ইলিশ কেনা সম্ভব নয়। স্থানীয়দের আশা, সামনের দিনগুলোতে ইলিশ মাছ বেশি করে ধরা পড়বে, তখন দাম কমে আসবে।
মীরসরাই উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাগরে এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ছে না, এ কারণে বাজারে দামও বেশি। মৎস্য অফিসের কর্মকর্তাদের মতে, সামনের অমাবস্যা–পূর্ণিমায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে।
উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে অন্য মাছের তুলনায় ইলিশ খুব কমই দেখা গেছে। দেখা গেছে, এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০–১৭০০ টাকায়। ৫০০ গ্রাম ওজনের বেশি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০–১১০০ টাকা।
ডোমখালী জেলেপাড়ার সর্দার সুবল জলদাশ বলেন, সাগরে ইলিশ আশানুরূপ ধরা পড়ছে না। অন্যান্য বছর এ সময়ে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়তো। এবার মাছ ধরতে যারা সাগরে যাচ্ছেন তাদের খরচও ওঠে আসছে না। তিনি আরও বলেন, আশা করছি সামনের অমাবস্যা–পূর্ণিমায় ভালো পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়বে। তবে অক্টোবরে প্রতিবছর ২২ দিন মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে সরকার। এবার যাতে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া না হয়।
আবুতোবার বাজারে আসা মনজুর কাদের চৌধুরী বলেন, বাজারে অন্য মাছের তুলনায় ভরা মৌসুমেও ইলিশ কম। দামও অনেক বেশি। আমার মতো অনেকে শুধু মাছ দেখছেন, কেনার মত সাহস কারো নেই। এত বেশি দামে অনেকের পক্ষে ইলিশ খাওয়া সম্ভব নয়।
মিঠাছরা বাজারে মাছ বিক্রেতা সমর জলদাশ বলেন, সাগরে গিয়ে আগের মতো ইলিশ পাওয়া যায় না। আমরা চট্টগ্রাম ফিশারিঘাট, সীতাকুণ্ড, কুমিরাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ইলিশ কিনে আনি। আমাদেরও বেশি দামে পাইকারিভাবে কিনতে হচ্ছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করছি।
মীরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, এখনও পুরোদমে ইলিশ বাজারে আসেনি। তাই হয়তো দাম বেশি। আশা করছি, আগামী জোঁতে জেলেদের জালে বেশি বেশি ইলিশ ধরা পড়বে, তখন দাম নাগালে আসবে। তিনি আরও বলেন, মীরসরাইয়ের সাহেরখালী পয়েন্টে আগের মতো ইলিশ ধরা পড়ছে না। কারণ ইলিশ হয়তো বিচরণক্ষেত্র পরিবর্তন করেছে। একবার বিচরণক্ষেত্র পরিবর্তন করলে সে স্থানে আর ফিরে আসে না ইলিশ।