১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন উপকূল লণ্ডভণ্ড করে দেয়। দেশের দক্ষিণ–পশ্চিম অঞ্চল দিয়ে বয়ে যাওয়া স্মরণকালের ভয়াবহ এ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৪০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। প্রাণহানি ঘটে অনেক গবাদিপশুর। এই ধ্বংসযজ্ঞের ৩৩ বছর পার হলেও এখনও স্বজন হারাদের আর্তনাদ থামেনি। ঘূর্ণিঝড়ে শুধু চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে মারা গিয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। তখন থেকে স্থায়ী বাঁধের দাবি উপকূলের জনগণের।
তৎকালীন বাঁশখালী উপকূলে কোনো বেড়িবাঁধ না থাকায় এত প্রাণহানি ঘটে। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম এ বাঁধ সংস্কার শুরু করে। কিন্তু বাঁশখালীর উত্তর সীমান্ত পুকুরিয়া থেকে দক্ষিণের ছনুয়া পর্যন্ত সাগর ও নদীর প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধের অধিকাংশ এলাকা এখনও অরক্ষিত। এই বর্ষায় সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস হলে উপকূলের অধিকাংশ গ্রাম সামুদ্রিক জোয়ার ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে মাছের ঘের, লবণ মাঠ, ফসলি জমি ডুবে কোটি টাকার ক্ষতির আশংকা করছে উপকূলবাসী। উপকূলবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সঠিক তদারকির অভাব ও সাব ঠিকাদারীর কারণে নব নির্মিত বেড়িবাঁধের নানা স্থানে ফাটল ও ধস দেখা দিয়েছে। জলোচ্ছ্বাস ছাড়াই সমুদ্রের স্বাভাবিক ঢেউয়ে ভেঙে গেছে সিসি ব্লক। বর্ষায় বেড়িবাঁধের সেসব অংশ সংস্কার না করলে দুর্যোগে বড় বিপর্যয়ের আশংকা রয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপকূলবাসীর জান–মাল রক্ষায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকায় নির্মিত স্থায়ী বেড়িবাঁধের নানা স্থানে ভাঙন ও ফাটল ধরেছে। কিছুদিন আগে খানখানাবাদ উপকূলের কদম রসুল গ্রামে বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দিলে তা নিয়ে তোড়পাড় শুরু হয়। তবে পাউবো সে ফাটলে পলিথিন ও বালি–মাটি দিয়ে ভরাট করে কোন রকমে রক্ষা করলেও নানা স্থানে প্রতিদিনই ভাঙন দেখা দিচ্ছে। অন্তত ২৫/৩০ স্থানে সিসি ব্লকে ধস ও ফাটল দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। তারা আরো জানান, বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় সিসি ব্লক ভেঙে গেছে।
সূত্রমতে, ২০১৫ সালে বাঁশখালীতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০২২ সালে। বেড়িবাঁধের ঢালু অংশে পর্যাপ্ত ঘাস ও গাছ লাগানোর কথা থাকলেও তা লাগানো হয়নি। ব্লক নির্মাণে নিম্নমানের পাথর, ইট, সিমেন্ট ও বালু ব্যবহার করায় কাজ বুঝিয়ে দেয়ার আগেই অধিকাংশ সিসি ব্লক ভেঙে গেছে। বিস্তীর্ণ বেড়িবাঁধ জুড়ে ভাঙা সিসি ব্লক ও নিম্নমানের বেড়িবাঁধ দৃশ্যমান হলেও পাউবোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোনো নজর নেই।
খানখানাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, খানখানাবাদের কদমরসুল পয়েন্টে প্রায় দেড়শ মিটার এলাকা এবং খানখানাবাদ গ্রামের কিছু অংশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেগুলো সংস্কারে পাউবোকে অবহিত করা হয়েছে, না হয় বর্ষায় এলাকার জনগণ ভোগান্তিতে পড়বে।
ছনুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম. হারুনুর রশিদ বলেন, ছনুয়া ইউনিয়নে ৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৭ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল অরক্ষিত বেড়িবাঁধের কারণে। ছোট ছনুয়া, মধুখালী ও মহাজের কলোনি এলাকাসহ বেশ কিছু স্থানে বেড়িবাঁধ সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। আমার
ইউনিয়নের সি সাইড এবং ইনডোর সাইডে প্রায় ২৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে যার অধিকাংশ অরক্ষিত। তা সংস্কারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।
পাউবোর উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী অনুপম পাল বলেন, বাঁশখালী উপকূলের বেড়িবাঁধের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। বেড়িবাঁধের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে, তবে দুর্যোগ ঠেকাতে সার্বক্ষণিক বাঁশখালীকে নজরে রাখা হয়েছে।