পাকিস্তানে বিপক্ষে স্মরণীয় সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। সংগত কারণেই পুরো দল এবং লিটন নিজেই ফুরফুরে মেজাজেই থাকার কথা। তাছাড়া এই সিরিজে নিজের পারফরম্যান্সও ছিল অসাধারণ। উইকেটের সামনে ও পেছনে, দুই জায়গাতেই তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। বেশ কিছু রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি মাইলফলকে তার নাম উঠেছে। তার কাছে দলের যা প্রত্যাশা ছিল, তা তিনি পালন করেছেন বেশ দায়িত্বশীলতার সাথে। সেই তৃপ্তিকে সঙ্গী করে এই কিপার–ব্যাটসম্যান বললেন, দায়িত্ব নেওয়ার সময় তো এখনই। দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে এখন। একটা সময় অবশ্য তার ব্যাটিংয়ে ‘দায়িত্ব’ ব্যাপারটি দেখা যেত কমই। দারুণ প্রতিভাবান ও স্টাইলিশ হিসেবে দেশের ক্রিকেটে নজর কাড়েন তিনি জাতীয় দলে ঢোকার বেশ আগেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক আঙিনায় পা রাখার দীর্ঘদিন পরও পায়ের নিচে জমিন শক্ত করতে লড়তে হয় তাকে। সময়ের সঙ্গে নিজেকে পোক্ত করে নেন তিনি। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে যদিও এখনও ততটা ধারাবাহিক তিনি নন। তবে টেস্টে তিনি দলের ভরসার প্রতিশব্দ। এমনিতে অন্তর্মুখি স্বভাবের মানুষ হিসেবে পরিচিতি লিটন কুমার দাসের। তবে গতকাল মঙ্গলবার তাকে দেখা গেল একটু ভিন্ন চেহারায়। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে কোমল পানীয়ের বোতল নিয়ে মজা করলেন। পরে কথা বলার সময়ও কৌতুক করলেন। হাসলেন বেশ। সবকিছুতেই ফুটে উঠল, তিনি এখন বেশ নির্ভার। মানদন্ড গত তিন বছর হোক বা গত পাঁচ বছর, দেশের সফলতম টেস্ট ব্যাটসম্যান তিনি। এবারের পাকিস্তান সফরে দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দিয়েছেন দারুণভাবে। প্রথম টেস্টে যখন তিনি ক্রিজে যান, ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশ তখনও পাকিস্তানের চেয়ে ২২০ রান পেছনে। লিটন তখন পাল্টা আক্রমণে সরিয়ে দেন চাপ। ৫৬ রানের ইনিংসের পথে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে গড়েন ১১৪ রানের জুটি। পরে টেস্টে বাংলাদেশের অবস্থা ছিল আরও সঙ্গীন। লিটন সেখানে মেলে ধরেন নিজের সেরাটা। ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানো দলকে উদ্ধার করেন তিনি দারুণ এক সেঞ্চুরিতে। মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে জুটিতে গড়েন বিশ্বরেকর্ড। তার ১৩৮ রানের ইনিংসটি বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ইনিংসগুলোর একটি। দেশে ফিরে লিটনরা এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভারত সফরের। এর ফাঁকে মিরপুরে গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, অভিজ্ঞতাই তাকে পরিণত করে তুলেছে আরও। ৯–১০ বছর হয়ে গেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছি। ওইটুকু অভিজ্ঞতা তো হয়েছে। এখনই সময় দায়িত্ব নেওয়ার। দায়িত্ব যদি এখন না নেই, আর কবে। ” তবে প্রতি ম্যাচেই যে তাকে একই রূপে দেখা যাবে না, সেটিও মনে করিয়ে দিলেন এই ক্রিকেটার। দায়িত্ব নেওয়ার সময় এসেছে মানে এই নয় যে, প্রতি ম্যাচেই দায়িত্ব নিতে হবে। আমি মানুষ। ভুল হতেই পারে। পাকিস্তানের সাফল্যের পর অপেক্ষায় এখন ভারত সফরের চ্যালেঞ্জ। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল তারা। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেও তারা এখন পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। দেশের মাঠে তাদেরকে হারানো ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন কাজ গুলির একটি। গত এক যুগে দেশে সিরিজ হারেনি তারা। সেই বাস্তবতার কথা বললেন লিটনও। পাকিস্তান সফরের সাফল্যে বুঁদ না থেকে ভারতীয় চ্যালেঞ্জের দিকে তাকিয়ে এখন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি। এটা অতীত হয়ে গেছে। তবে এখান থেকে কিছু আত্মবিশ্বাস আমরা পেয়েছি। তবে ভারতের ঘরের মাঠে যখন খেলব, তারা সবসময় বেশি ভালো দল। খুব চ্যালেঞ্জিং হবে বা সহজ হবে, এসব বলব না। তাদের কন্ডিশনে তারা ভালো দল এবং তারা টেস্ট র্যাঙ্কিংয়েও ওপরে আছে। আমাদের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে। লিটন বলেন সংবাদমাধ্যমকেও একটু সহায়তা করতে হবে। আপনারা যদি পাকিস্তান সিরিজ নিয়ে বেশি কথা না বলেন, খুব ভালো হবে। কারণ সামনে যে সিরিজ আসছে, এটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জের সিরিজ। ক্রিকেটার হিসেবে আমার কাছে ওটা অতীত। ভারতের প্রথম টেস্ট শুরু আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর চেন্নাইয়ে। বাংলাদেশ দল ঢাকা ছাড়বে আগামী রোববার। এই সফরের দল এখনও ঘোষণা করা হয়নি।