এক হাজার ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদ

নিউ মাকের্ট থেকে আশ পাশের দেড় কি.মি এলাকায় ব্যাপক অভিযান গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অবৈদ স্থাপনা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের ‘হকারের রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত নিউমার্কেটআমতল থেকে ফলমন্ডি পর্যন্ত ফুটপাত দখলমুক্ত করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। বন্দর নগরীর ফুটপাত দখলমুক্ত করার ঘোষণার আট দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি নগরীর ফলমন্ডি লেন, পুরাতন রেলস্টেশন, রিয়াজউদ্দিন বাজার, নতুন রেলস্টেশন, নিউমার্কেট, জিপিও, তামাকুমন্ডি লেন, আমতলসহ আশপাশের প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা থেকে হকারদের উচ্ছেদ করা হয়। দিনভর এ অভিযানে প্রায় এক হাজার ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে, গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বেশকিছু সেমি পাকা দোকান ও অবৈধ স্থাপনা। অভিযানে চসিক, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থার সাতজন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। মোতায়েন ছিল প্রায় ২০০ পুলিশ, ৩০ জন র‌্যাব ও আনসারসহ চসিকের বিপুলসংখ্যক কর্মী।

চসিক মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম আজাদীকে জানান, সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চলেছে। অভিযানে সাতজন ম্যাজিস্ট্রেট অংশ নিয়েছেন। ফুটপাতে দোকান বসাতে বসাতে অনেকে সেখানে স্থায়ী অবকাঠামো করে ফেলেছিল। সেগুলোও উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদের সময় তেমন বাধা আসেনি। অভিযানে প্রায় এক হাজার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। মুক্ত করা ফুটপাত ও সড়কের অংশে দোকান বসানো বন্ধ করতে নোটিসও দিয়েছে সিটি করপোরেশন। যাতে আবার দখল না হয় সেজন্য নজরদারি করা হবে বলে জানিয়েছেন আবুল হাশেম। বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের চিত্র পাল্টে গেছে। ভাসমান দোকান, ঝুপড়ি, চৌকি ও ভ্যানগাড়ি উচ্ছেদ করায় সড়কগুলো এখন আগের চেয়ে প্রশস্ত মনে হচ্ছে। এদিকে আসন্ন রমজানের আগে এ উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন হকাররা। অভিযান চলাকালে দফায় দফায় মিছিল করেন হকাররা। এ সময় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম সম্মিলিত হকার ফেডারেশনের সভাপতি মিলন হোসেন মিলন আজাদীকে বলেন, মেয়র রেজাউলকে আমরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছি। কিন্তু গত তিন বছরে তিনি কোনোদিন আমাদের সঙ্গে মিটিং করেননি। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া আজ (বৃহস্পতিবার) চার থেকে পাঁচ হাজার গরীব হকারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, যদি পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ করা হয়, তাহলে আমাদের জীবন চলে গেলেও আমরা ফুটপাত ছাড়ব না।

চট্টগ্রাম ফুটপাত হকার সমিতির সভাপতি নুরুল আলম লেদু আজাদীকে বলেন, কোনো রকম পূর্ব ঘোষণা ও নোটিস ছাড়াই আজকে অতর্কিতে উচ্ছেদ করা হয়েছে। নির্বাচনের আগে মেয়র বলেছিলেন, পুনর্বাসন না করে কোনো হকার উচ্ছেদ করা হবে না। বিগত দিনে মেয়র আ জ ম নাছির, প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আমাদেরকে শৃঙ্খলার সঙ্গে ফুটপাতে বসে ব্যবসা করতে দিয়েছিলেন। এখন হঠাৎ করে এতগুলো মানুষের পরিবারের রুটিরুজি ও তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার কী হবে? লেদু বলেন, ইতোপূর্বে আমরা মেয়রকে বলেছি, প্রয়োজনে সিটি করপোরেশন থেকে আইডি ও রেজিস্ট্রেশন করে হকারদের যেন ফুটপাতে সুশৃঙ্খলভাবে ব্যবসার সুযোগ দেওয়া হয়। আমরা তো চুরিডাকাতি করি না, ব্যবসা করে খাই। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করব।

বেলা দেড়টায় সিটি করপোরেশনের একটি দল রেল স্টেশন এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছিল। অন্য একটি দল জিপিওর সামনের ফুটপাত দখলমুক্ত করতে কাজ করছিল। উচ্ছেদ অভিযানের সময় পুরাতন রেল স্টেশন এলাকায় ফুটপাতে জুতা বিক্রেতা রুহুল আমিন আজাদীকে বলেন, কিছু না বলে আমার দোকান তুলে দিছে। আর বসতে দেবে না বলতেছে, কী করব জানি না।

চট্টগ্রামের বিআরটিসি মোড়, পুরাতন রেল স্টেশন, নিউ মার্কেট মোড়, জিপিওর সামনের সড়ক ও কোতোয়ালী মোড়সহ পুরো এলাকার ফুটপাত হকারদের দখলে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সড়কের অংশ বিশেষও চলে যায় হকারদের দখলে। এসব ফুটপাত উদ্ধার করে পথচারীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে গত ৩০ জানুয়ারি সিটি করপোরেশনের মাসিক সভায় ব্যাপক অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। অতীতে বিভিন্ন সময় মেয়ররা হকার উচ্ছেদে অভিযান চালালেও তীব্র বাধার মুখে পড়তে হয় তাদের। উচ্ছেদ হওয়া ফুটপাত বেশিদিন দখলমুক্ত রাখাও সম্ভব হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযার কারণে ২১ ফেব্রুয়ারি গুলি চলে
পরবর্তী নিবন্ধগুলি খাটে লাগায় প্রাণে বেঁচে যান শহীদুল