সমপ্রতি বাংলাদেশ শিশুসাহিত্য একাডেমি আয়োজিত ৬ দিনব্যাপী এক বর্ণাঢ্য মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি চট্টগ্রামে। শিল্পকলার মুক্তমঞ্চে এই বর্ণাঢ্য আয়োজনের উদ্বোধক ছিলেন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শিক্ষাবিদ গবেষক পণ্ডিত ডক্টর পবিত্র সরকার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব এম এ মালেক। সভাপতি একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব ডক্টর অনুপম সেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বিশেষ অতিথি সর্বভারতীয় শিশুসাহিত্যিক কবি আনসার উল হক, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পরিচালক আনজীর লিটন। এখানে মুহাম্মদ মহসীন চৌধুরী সম্পাদিত জ্যোতির্ময় বঙ্গবন্ধু সংকলনের মোড়ক উন্মোচন হয়। এরপর দ্বিতীয় পর্বে, গ্যালারি ভবন মিলনায়তনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর শিরীণ আখতার স্মৃতিকাতরতা নিয়ে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষাকালীন সময়ের চিত্র তুলে ধরেন তাঁর সরাসরি শিক্ষাগুরু শিক্ষাবিদ পণ্ডিত পবিত্র সরকার স্যার ও স্যারের পরিবারের অবদানকে স্মরণ করে। এখানে পাঠ উন্মোচন হয় ডক্টর পবিত্র সরকারের ছড়া সংকলন ‘ছড়া পড়ার ইচ্ছে আছে‘ গ্রন্থের। বরেণ্য শিশসাহিত্যিক সুজন বড়ুয়া বইটির উপর বিশদভাবে আলোকপাত করেন। ডক্টর পবিত্র সরকার তাঁর মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন। উৎসবের দ্বিতীয় দিনে সম্মাননা প্রাপ্ত খ্যাতিমান ৫ শিশুসাহিত্যিককে পদক তুলে দেয়া হয়। এই পর্বে বরেণ্য শিশুসাহিত্যিকগন তাঁদের জীবনে ছড়ার শুরু ও বিস্তার নিয়ে হৃদয়গ্রাহী আলোচনা করেন ও ছড়া পাঠ করে শোনান।
প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তিকাল বিকেল ৪:৩০ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত। শিশু কিশোরদের ছড়া–কবিতা প্রতিযোগিতার পর শুরু হতো মঞ্চানুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের সূচি অনুযায়ী আলোচনা ও স্বরচিত ছড়া– কবিতা পাঠে অংশগ্রহণ করতেন বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ও স্থানীয় বিশিষ্ট কবি লেখকগণ। বইমেলা ও উৎসব ঘিরে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আগত বরেণ্য শিশুসাহিত্যিকদের আগমন এবং তাদের উপস্থিতিতে আনন্দমুখর সময় উপভোগ করেছি প্রাণভরে। ঋদ্ধ হয়েছি প্রতিটি দিন প্রতিটি পর্বে বরেণ্য কবিদের মূল্যবান সমৃদ্ধ আলোচনা ও বক্তৃতায়। এখানে শিশুতোষ ৭টি গ্রন্থের পাঠ উন্মোচন করে মঞ্চ রাঙিয়েছেন আলোকিত কবি লেখকেরা। পুরো অনুষ্ঠানমালায় প্রায় তিন শতাধিক কবি লেখকদের পদচারণা ঘটেছে। ছড়া কবিতা প্রতিযোগিতায় পুরষ্কারপ্রাপ্ত ছাড়াও অংশগ্রহণকারী সবাইকে ২০০ টাকা মূল্যের বই দেয়া হয়। পুরষ্কার বিতরণ পর্বে অংশগ্রহণকারী শিশুদের উচ্ছ্বসিত উপস্থিতি ছিলো লক্ষণীয়। এমন আয়োজনের সফল সার্থক রূপকার দেশবরেণ্য শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফ। তাঁর নিরলস শ্রম নিষ্ঠা একাগ্রতা সবাইকে সাথে নিয়ে কাজের যে প্রয়াস ঘটিয়েছেন, তা যুগান্তরের উদাহরণ হয়ে থাকবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিটি দিন সাজানো, পর্বগুলোর অধিবেশন শুরু ও শেষ করার সময়–জ্ঞান উচ্চ প্রশংসনীয়তো বটেই, সকলের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তাঁর সহধর্মিণী আবৃত্তিশিল্পী আয়েশা হক শিমু ভাবীর মোহনীয় উপস্থাপনার ঝর্ণাধারায় সিক্ত হয়েছে উপস্থিত সকলে। ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেলের জন্মদিনে, সার্থক সুষমামণ্ডিত সাফল্যপূর্ণ পরিসমাপ্তি হয়, এ অনুষ্ঠান যজ্ঞের। আবারও অপেক্ষায় থাকবো সাহিত্য জগতের এমনই নব দিগন্তরেখা উন্মোচনের।