ছয় বছর পর প্রকাশ্যে কোনো অনুষ্ঠানে দেখা গেল খালেদা জিয়াকে; সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের পাশের আসনে বসে তিনি উপভোগ করলেন সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা ৩৫ মিনিটে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে পৌঁছান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত এক যুগের মধ্যে এই প্রথম তিনি সেনাকুঞ্জের বার্ষিক এ আয়োজনে এলেন। সেখানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন তাকে অভ্যর্থনা জানান।
অনুষ্ঠানস্থলে তার বসার ব্যবস্থা হয়েছিল অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের পাশের আসনে। খালেদা জিয়া তার আসনে বসার পর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। ছবিতে দুই জনকেই হাস্যোজ্জ্বল দেখা গেছে। খবর বিডিনিউজের।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ আমরা বিশেষভাবে সৌভাগ্যবান এবং সম্মানিত, বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ এখানে আমাদের মধ্যে উপস্থিত আছেন। একযুগ ধরে তিনি এই মহাসম্মিলনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান নাই। আজকে সুযোগ পেয়েছেন, আমরা সবাই আনন্দিত এবং গর্বিত, যে আমরা এই সুযোগ দিতে পেরেছি আপনাকে। শারীরিক অসুস্থতা স্বত্ত্বেও এই বিশেষ দিবসে সবার সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ, আমরা আপনার আশু রোগমুক্তি কামনা করছি এবং এই অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে সাগত জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাথে তার প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন অনুষ্ঠানে আসেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদসহ আমন্ত্রিত জ্যেষ্ঠ নেতারা আগেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৌঁছেছিলেন। গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা কামাল হোসেনও এসেছিলেন সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে।
এর আগে বিকেলে সাড়ে ৩টায় গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে নিজের সাদা গাড়িতে চড়ে সেনাবাহিনীর প্রটোকল পাহারায় সেনানিবাসের উদ্দেশে রওনা হন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তার গাড়ির সামনে ছিল মিলিটারি পুলিশের (এমপি) পাইলট কার, পেছনে সেনাবাহিনীর একটি অ্যাম্বুলেন্স। খালেদা জিয়া বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় রাস্তায় জড়ো হওয়া বিএনপিকর্মীরা পুরো এলাকা স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তোলেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করে। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রতিবছর দিনটি ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ হিসেবে পালন করে বাংলাদেশ।
সর্বশেষ ২০১২ সালে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া, তখন তিনি বিরোধী দলীয় নেতা। এরপর আর কখনো তাকে সেনাকুঞ্জের এ আয়োজনে দেখা যায়নি। এক সময় সেনাকুঞ্জের এ অনুষ্ঠান আলোচনায় থাকত অন্য রাজনৈতিক কারণে। দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া দুজনেই এ অনুষ্ঠানে যেতেন। চির বৈরী এ দুই নেতার সারা বছর দেখা না হলেও সেনাকুঞ্জে তাদের সাক্ষৎ হওয়ার সম্ভাবনা থাকত। সর্বশেষ ২০১২ সালে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যেও সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন দুই নেত্রী। তবে সেদিন তাদের কথা হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সর্বশেষ ২০০৯ সালে সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল।