এক বছর পর যেভাবে জট খুলল হাসান তারেক হত্যার

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১২ নভেম্বর, ২০২৫ at ৪:০৭ পূর্বাহ্ণ

নগরে ২০২৪ সালের ১১ অক্টোবর হাসান তারেক (৩৯) নামে এক যুবক খুন হন। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাহাড়তলী থানায় একই বছরের ১৩ অক্টোবর একটি মামলাও হয়। কিন্তু ‘ক্লু’ না থাকায় পুলিশও এ ঘটনার রহস্য উন্মোচন করতে পারছিল না। ফলে হত্যাকারীরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। সর্বশেষ গত সোমবার চকবাজার থানার দামপাড়া এলাকা থেকে ১২ বোতল নিষিদ্ধ কাডিন ফসফেট ও ট্রিপোলিডিন হাইড্রোক্লোরাইড যুক্ত কাশির সিরাপসহ মোহাম্মদ আলাউদ্দীন আলো (৪১) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এক বছর পর জট খুলে তারেক হত্যা মামলার। ধৃত আলো স্বীকার করে, মাদকের চালান ধরিয়ে দেয়ায় আলাউদ্দীনসহ তিন মাদক ব্যবসায়ী পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে তারেককে। সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম মহানগর ডিবি পশ্চিম জোনের উপকমিশনার মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান। ধৃত আলা উদ্দিনএর বিরুদ্ধে সিএমপির বিভিন্ন থানায় হত্যা, চুরি ও মাদক আইনের সর্বমোট ১৮ টি মামলা রয়েছে। সে নোয়াখালীর সুধারাম থানার হাজী তোফায়েল আহমেদ এর ছেলে। নগরের এম এম আলী রোডের মো. নাইমুল আলমের বাসায় (২য় তলা) থাকতেন।

তারেককে হত্যার কারণ : পুলিশ জানায়, ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি একটি মাদকের চালান পুলিশের কাছে নিকট ধরিয়ে দেয় তারেক। মাদকের চালানের মালিক ছিলেন শওকত আকবর, আলাউদ্দিন আলো এবং মোর্শেদ আলম প্রকাশ সোহেল। এর মধ্যে আলাউদ্দিন এবং মোর্শেদ আলম মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন জেলহাজতে ছিলেন। তারেককে হত্যার কিছুদিন আগে জামিনে বের হয়ে আসে। এরপর আলাউদ্দিন, শওকত ও মোর্শেদ, তিনজন মিলে জামালখানের একটি গলিতে বসে তারেককে হত্যার পরিকল্পনা করে।

যেভাবে হত্যা করা হয় তারেককে : আলাউদ্দিন, মোর্শেদ ও শওকত ঘটনার দিন রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টায় কাজীর দেউড়ী এলাকায় অবস্থান করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আলাউদ্দিনের শ্যালক সাকিব ও সহযোগী ইকবাল হোসেন বাবু। এর মধ্যে সাকিব ও ইকবাল হাটহাজারী এলাকা থেকে একটি গ্রাম সিএনজি নিয়ে আসে। এ সময় শওকত হত্যার খরচ হিসেবে আলাউদ্দিনের হাতে ২০ হাজার টাকা তুলে দেয়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, নগরীর গরীবউল্লাহ শাহ (রা.) মাজারের সেজুতি ট্রাভেলস এর কাউন্টারে সামনে থেকে শওকত হাসান সিএনজি থেকে নেমে যায়। এরপর তারেককে ওই সিএনজিতে তুলে দেয়। বায়েজিদ লিংক রোডের নির্জন স্থানে পৌঁছালে হত্যাকারীরা সিএনজি থেকে নেমে তারেককে তারেককে পাহাড়ের আড়ালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রথমে হাত বেঁধে ফেলা হয় এবং পরবর্তীতে নাইলনের রশি গলায় পেঁচিয়ে দুই পাশ থেকে টান দিলে প্রায় ২০ মিনিটের মধ্যে মারা যায় তারেক।

সিএমপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তারেকের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার হত্যাকারীরা তারেকের লাশ পুনরায় সিএনজিতে নিয়ে সিটিগেইট থেকে ঘুরে কালু শাহ মাজার হয়ে সিবীচ এর রাস্তায় গিয়ে পাহাড়তলী থানার খেজুরতলী রাসমনি ঘাট সংলগ্ন এলাকায় লিংক রোডের পশ্চিম পাশে রানী পুকুরপাড় এলাকায় ফেলে দেয়।

পুলিশ জানায়, লাশ ফেলে দেওয়ার পর আলাউদ্দিনসহ অন্যরা সিএনজি নিয়ে পাহাড়তলী থানার সামনে দিয়ে ওয়াসা কুটুম বাড়ির রেস্টুরেন্টে গিয়ে রাতের খাবার খায়। এরপর শওকত থেকে পাওয়া ২০ হাজার টাকা থেকে মোর্শেদকে ৫ হাজার, সাকিবকে ২ হাজার, ইকবালকে ২ হাজার এবং সিএনজি ড্রাইভারকে ২ হাজার টাকা দেয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাবেদ-তার স্ত্রীসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে ৪ মামলা দুদকের
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ৫ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ