এক দামে পণ্য বিক্রিতে আইন মানছে না টেরীবাজারের ওয়ান স্টপ শপিংমলগুলো। এসব শপিংমলের পণ্য ক্রেতাদের সন্তুষ্টি অর্জন করলেও পণ্যের মূল্য নিয়ে ক্রেতাদের সাথে প্রতিনিয়ত লুকোচুরি খেলছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতাদের অভিযোগ, টেরীবাজারে কম মূল্যে পণ্য কিনতে অনেকে ভিড় করেন। কোনো পণ্য পছন্দ হলে বিক্রয় কর্মীরা দরদামের কোনো সুযোগ দেন না। নিজেদের সাংকেতিক ‘কোড’ ব্যবহার করে এক দামে পণ্য বিক্রি করে থাকেন তারা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন, এক দামে পণ্য বিক্রি করতে হলে অবশ্যই পণ্যের গায়ে ট্যাগ লাগিয়ে মূল্য প্রকাশ করতে হবে। নিজস্ব কোড ব্যবহার করে একদামে পণ্য বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। এদিকে টেরীবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, শপিংমলে খুচরা ও পাইকারীতে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। দাম উন্মুক্ত করে দিলে পাইকারীতে পণ্য বিক্রিতে সমস্যা হবে। এতে ব্যবসায়ীরা অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবেন।
জানা গেছে, টেরীবাজারে ছোট বড় অর্ধশতের কাছাকাছি ওয়ান স্টপ শপিংমল রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে, রাজস্থান, মেগামার্ট, পরশমনি, সানা ফ্যাশন, বৈঠক বাজার, মল ২৪, রাজপরী, রাজকুমারী, অর্পা, নিউ আজমীর, রওশন, চিটাগাং শাড়ি, মোহাম্মদীয়া, বধুঁয়া, রাজস্থান পাঞ্জাবী, মাসুম ক্লথ স্টোর, জাবেদ ক্লথ স্টোর, লীলাবালি, গোল আহম্মদ, খাজনা, সানজানা চিটাগাং, ময়ূর, বেনারসী, মনে রেখ, মৌচাক, রাঙ্গুলী, ফেমাস, আলিশা এবং জারা শপ। এসব শপিংমলে বিয়ের শাড়ি, পার্টির শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রিপিস, গাউন, শেরোয়ানি এবং পাঞ্জাবী বিক্রি হয়ে থাকে।

টেরীবাজারে আসা ফৌজিয়া সুলতানা নামের একজন ক্রেতা বলেন, বিভিন্ন শপিংমলে এক দামে পণ্য বিক্রি করার ক্ষেত্রে পোশাকে মূল্যের ট্যাগ সাঁটিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু একমাত্র টেরীবাজারেই ব্যতিক্রম দেখা যায়। আমাদের কোনো একটি পোশাক কিংবা পণ্য পছন্দ হলে বিক্রেতারা তাদের নিজস্ব ‘কোড’ দেখে মূল্য নির্ধারণ করেন।
জান্নাতুল ফেরদৌস নামের অপর এক ক্রেতা বলেন, টেরীবাজারের শপিংমলগুলোতে দরদামের কোনো সুযোগ থাকে না। অথচ এখানে ক্রেতারা কম মূল্যে পণ্য কিনতে আসেন। বিক্রেতারা এক দামে পণ্য বিক্রির নামে আমাদের সাথে প্রতিনিয়ত লুকোচুরি খেলছেন। এক দামে পণ্য বিক্রি করলে পণ্যের গায়ে মূল্য উল্লেখ করা উচিত। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকবে।
গতকাল সরেজমিনে টেরীবাজারের বেশ কয়েকটি ওয়ান স্টপ শপিংমল ঘুরে ক্রেতাদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তবে এসব শপিংমলের বিক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। সাংকেতিক কোড ব্যবহার করে এক দামে পণ্য বিক্রি করাটা ‘বিক্রয় কৌশল’ বলছেন তারা।
জানতে চাইলে ‘পরশমনি’ শপিংমলের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইসমাইল দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের আউটলেটে এক সময় শুধুমাত্র পাইকারীতে পণ্য বিক্রি করতাম। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হয় যখন থেকে খুচরা বিক্রি শুরু করি। পণ্যের গায়ে এক দাম লিখে দিলে তখন পাইকারীতে বিক্রি করতে সমস্যা হবে। কোড ব্যবহার করে পণ্য বিক্রি করলেও আমাদের এখানে ক্রেতারা অন্যান্য মার্কেট থেকে কম মূল্যে পণ্য কিনতে পারেন বলেই বারবার আসেন। আমাদের পাইকারী ও খুচরা মূল্যের মধ্যে পার্থক্য সামন্যই। ‘সানা ফ্যাশন’র স্বত্বাধিকারী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, খুচরা বিক্রিতে মূল্যের ট্যাগ দিলে পাইকারী ব্যবসায়ীরা পণ্য কিনবেন না, তাই আমরা বাধ্য হয়েই মূল্য উল্লেখ করতে পারি না। এটা ছাড়া আর কোনো কারণ নেই।

মেগামার্টের পরিচালক রেজাউল করিম মিথুন বলেন, ব্যবসায়িক গোপনীয়তার অংশ হিসেবে আমরা কোড ব্যবহার করে এক দামে পণ্য বিক্রি করি। আমাদের শপিংমলে খুচরার চেয়ে পাইকারী ক্রেতা বেশি। এখন কোনো একটি পণ্য খুচরা বিক্রিতে যখন এক হাজার টাকা ট্যাগ দিবো, তখন সেটি পাইকাররা নিতে ইতস্ততবোধ করবেন। আরেকজন বিক্রেতা সেটি আরো কম দামে বিক্রি করে দিতে পারেন। টেরীবাজারে অনেক ছোটখাটো ব্যবসায়ী আছেন যারা আমাদের থেকে পণ্য কিনে বিক্রি করেন।
এ বিষয়ে টেরীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মান্নান বলেন, ব্যবসায়ীরা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার জন্য কোড ব্যবহার করে পণ্য বিক্রি করেন। একই সাথে পাইকারী ও খুচরাতে পণ্য বিক্রি করতে হয় বলে আসলে এই সমস্যা। কোড ব্যবহার করে পণ্য বিক্রির মধ্যে ব্যবসায়ীদের কোনো দুরভিসন্ধি নেই।
এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান দৈনিক আজাদীকে বলেন, পণ্যের গায়ে মূল্য তালিকা উল্লেখ না করে এক দামে বিক্রি করার সুযোগ নেই। এটি ভোক্তা অধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এক দামে পণ্য বিক্রি করতে হলে অবশ্যই পণ্যের গায়ে দাম উল্লেখ করে ভ্যাটযুক্ত ট্যাগ লাগাতে হবে। যেটি অনেক ব্র্যান্ডেড প্রতিষ্ঠান করে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তার দৈনিক আজাদীকে বলেন, বিষয়টি এখন জানতে পারলাম এবং এটি আমরা দেখবো।












