এক দশকেও স্থায়ী ক্যাম্পাস পায়নি রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ

ভূমি অধিগ্রহণ হলেও আটকে আছে প্রকল্প অনুমোদন

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি | শনিবার , ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রসারে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ (রামেক)। প্রতিষ্ঠা পরবর্তী সময়ে ২০১৪১৫ শিক্ষাবর্ষে অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে প্রথম পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয় রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিট ভবনে। শিক্ষা কার্যক্রম চালুর পর এক দশকেও স্থায়ী ক্যাম্পাস আলোর মুখ দেখেনি প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে, রাঙামাটি জেলা শহরের রাঙাপানি এলাকায় প্রায় ২৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হলেও উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পাস না হওয়ায় শুরু করা যায়নি স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজ। মেডিকেল কলেজের অবকাঠামোগত সংকট ও শিক্ষার অনুপোযোগী পরিবেশের প্রভাব পড়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর।

রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা যায়, মেডিকেলের অস্থায়ী ভবনে পাঠদানের জন্য ১৬টি শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন থাকলেও আছে মাত্র পাঁচটি। গাদাগাদি করে ক্লাস করে শিক্ষার্থীরা। একটি বর্ষের ক্লাস নেওয়ার আগেই অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীরা গিয়ে ভিড় করে। মেডিকেল কলেজের পঞ্চম ব্যাচ পর্যন্ত মোট ৩২৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক আছেন ৭৭ জন। এরমধ্যে এমবিবিএস কোর্স শেষ করেছেন ১৮০ জন। প্রতি সেশনে নতুন করে ভর্তি হচ্ছে ৭৫ জন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, মেডিকেল কলেজটির যাত্রা দীর্ঘ ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো চালু হয়নি স্থায়ী ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের থাকার মতো নেই আবাসিক পর্যাপ্ত হোস্টেল। প্রতি বছর শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও এখনো চালু করা হয়নি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় একই ছাদের নিচে চলছে ক্লাস, পরীক্ষা ও অফিসের কার্যক্রম। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, অডিটোরিয়াম, লাইব্রেরি, আধুনিক ল্যাব ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। একই সঙ্গে শুরু হওয়া অন্যান্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজস্ব ক্যাম্পাসে ক্লাস করতে পারলে আমরা কেন এত বছর পরেও আমাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে ক্লাস করতে পারছি না। শুধু আশ্বাস পেয়েছি কাজের কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এদিকে, চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বর (বুধবার) রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণপূর্ত ভবন ঘেরাও করে অবস্থান করেছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা গণপূর্ত ভবনের প্রধান ফটক ঘেরাও করে অবস্থান নেয় এবং পরে রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শর্মি চাকমার অফিস রুমে গিয়ে তাকে জেরা করে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল।

মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মিনহাজুল আবেদীন বলেন, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের সঙ্গে দেশের আরও অনেক মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়েছে কিন্তু ওইসব মেডিকেল কলেজগুলো স্থায়ী ক্যাম্পাস, ছাত্রাবাস পেলেও আমরা পায়নি। যখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এসব দাবি জানাতে যাব, তখন ফাইল আটকে রয়েছে, সিদ্ধান্ত হচ্ছে না এসব বলছেন। তবে সবচেয়ে জরুরি হয়ে পড়েছে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করা। কারণ ইতোমধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসের জায়গা জমিও হস্তান্তর।

রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের হৃদরোগ বিভাগের শিক্ষক ডা. হাবিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, দশ বছর আগে জেনারেল হাসপাতালের পাশে সিসিইউ এর জন্য নির্মিতি অব্যবহৃত ৫ তলা ভবনে কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতি বছর কলেজের শিক্ষার্থী বাড়ছে। যার কারণে শ্রেণী কক্ষের সংকট তীব্র রয়েছে। এছাড়া শিক্ষকদের বসার কোনো কক্ষও নেই আবাসন তো দূরের কথা। যার কারণে পাঠদান কার্যক্রম ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিদিন ১৫০ জনের ৯টা গ্রুপের শিক্ষার্থীদের নিয়ে হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল ক্লাসে দাঁড়াব তার অবস্থা এ হাসপাতালে নেই। তাই হাসপাতাল সমপ্রসারণ সংস্কার করা না গেলে ক্লিনিক্যাল ক্লাস নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

জানতে চাইলে রাঙামাটি মেডিকেল হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক প্রীতি প্রসূন বড়ুয়া বলেন, আমরা ভূমি অধিগ্রহণ করেছি। রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের প্রকল্প স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আটকে রয়েছে। অনুমোদনের পর পরিকল্পনা কমিশনে যাবে। এরপর সেখানে পাস হলে প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে।

প্রসঙ্গত, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে ও পাহাড়ে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ার লক্ষ্যে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও ২০১৪ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির যাত্রা হয়। প্রতিষ্ঠার পর রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের করোনারি বিভাগের পাঁচতলা ভবনে অস্থায়ী ক্যাম্পাসের কার্যক্রম শুরু হয়। এখনো সেই অবস্থান পরিবর্তন হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকেউ যাতে ন্যায়বিচার বঞ্চিত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে : প্রধান বিচারপতি
পরবর্তী নিবন্ধট্যুরিজমকে এগিয়ে নিতে সরকার কাজ করছে