এক কারখানায় ৬৮৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৪ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিইপিজেডে চীনা মালিকাধীন তৈরি পোশাক কারখানা মেসার্স ওয়ার্ল্ড ই ড্রেস প্যান্টস লিমিটেড বন্ড সুবিধার অপব্যহার করে ৬৮৩ কোটি ৬৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ছয়টি দাবিনামাসহ কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে। সেই সাথে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে পৃথক ছয়টি মামলা করা হয়েছে।
কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট সূত্রে জানা গেছে, ভুয়া রপ্তানি দেখানোর মাধ্যমে বন্ড সুবিধার পণ্য অপসারণ করে চীনা প্রতিষ্ঠানটি ৫৫৫ কোটি ২৮ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮১ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। এছাড়া অবৈধভাবে কাঁচামাল আমদানির মাধ্যমে ১০৬ কোটি ৭৫ লাখ ১৮ হাজার ৯৮১ টাকা, বন্ড সুবিধার কাঁচামাল অপসারণের মাধ্যমে ৫ কোটি ৩৫ লাখ ৯১ হাজার ৭৮৫ টাকা, বন্ড সুবিধার মেশিনারিজ অপসারণের মাধ্যমে ৮ কোটি ৬৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫ টাকা, বন্ড সুবিধার আমদানিকৃত গাড়ি অপসারণের মাধ্যমে ২৬ লাখ ৫ হাজার ৩৮৯ টাকা এবং রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য ফেরত না এনে প্রতিষ্ঠানটি ৭ কোটি ৩৯ লাখ ৯ হাজার ৮০৩ টাকা দিয়েছে বলে নোটিশে দাবি করা হয়। এসব অনিয়ম সংগঠিত হয়েছে গত ২০০৩ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে।
কাস্টমস বন্ড কর্মকর্তারা জানান, মেসার্স ওয়ার্ল্ড ই ড্রেস প্যান্টস লিমিটেড প্রথম দিকে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের যৌথ বিনিয়োগে ‘বি’ ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। পরবর্তীতে কোম্পানিটির মালিকানা পরিবর্তন হয়ে ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে পরিবর্তিত হয়। গত ২০০৪ সালের ১০ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটিকে সাময়িক বন্ড রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়। পরবর্তীতে একই বছরের ২৮ ডিসেম্বর স্থায়ী বন্ড লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি বার্ষিক অডিট সম্পন্ন না করায় একাধিকবার চিঠি ইস্যু করেও প্রতিষ্ঠানটি অডিট সম্পাদনে কাগজপত্র দাখিল করেনি। উল্টো তারা অসহযোগিতা করেছে। এছাড়া আমদানি রপ্তানি তথ্য প্রেরণের জন্য প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট লিয়েন ব্যাংক বরাবর একাধিকবার চিঠি পাঠানো হলেও ব্যাংক কর্র্র্তৃপক্ষ আমদানি রপ্তানি তথ্য সরবরাহ করেনি। অন্যদিকে গত ২০১৫ সালের ২৮ মে মেসার্স ওয়ার্ল্ড ই ড্রেস প্যান্টস লিমিটেডের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটিকে কর্ণফুলী ইপিজেডে ( কেইপিজেড) বরাদ্দকৃত প্লটে নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কেইপিজেডে প্রতিষ্ঠানটির বরাদ্দ সংরক্ষণের জন্য সাময়িক অনুমোদন দেয়া হয়। তবে শর্ত দেয়া হয়, অডিট সংক্রান্ত সকল দলিল দাখিল করে ২ মাসের মধ্যে চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে হবে। প্রতিষ্ঠানটি পরবর্তীতে কোনো অনুমোদন নেয়নি এবং এমনকি কেইপিজেডে তারা মেসার্স ওয়ার্ল্ড ই ড্রেস প্যান্টস লিমিটেড নামের কোনো প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেনি।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার একেএম মাহাবুবুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে আমরা নিয়মিত কারখানায় পরিদর্শনে যাচ্ছি। এছাড়া দীর্ঘদিন যে সব বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ তাদেরকে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে প্রথমে লাইসেন্স সাময়িক স্থগিত এবং পরে স্থায়ীভাবে বাতিল করছি। বন্ড সুবিধার অপব্যহার রোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বন্ড লাইসেন্স ইস্যুতেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। তারপরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বন্ড সুবিধায় নানা অনিয়ম করে যাচ্ছেন। তবে অনিয়মকারীরা যত শক্তিশালী হোক না কেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তাদের শো-কজ করা হচ্ছে এবং মামলা দেয়া হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআখতারুজ্জামান বাবুর ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
পরবর্তী নিবন্ধফটিকছড়ির মেয়ে শাহানার ইতিহাস সৃষ্টি