বাংলাদেশের অতিবিপন্ন প্রজাতির বৃক্ষের মধ্যে রয়েছে সিভিট। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তসফিল–৪ অনুযায়ী সিভিট প্রজাতির বৃক্ষটি রক্ষিত (Protected Plant)। অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবে নিধন, উঠানো, উপড়ানো, ধ্বংস বা সংগ্রহ করা যাবে না। বাংলাদেশের দুর্লভ প্রজাতির এই বৃক্ষটির দেখা মেলে পার্বত্য চট্টগ্রামে। আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে অবস্থিত পাবলাখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য কেন্দ্র ও পাবলাখালী গেইম সেঞ্চুয়ারি রেঞ্জ বনে অসংখ্য সিভিট গাছের দেখা মিলেছে। পাবলাখালীর বনে দেখা সবচেয়ে উঁচু বৃক্ষ হয়েছে সিভিট। বনটি সংরক্ষিত হলেও বাঘারছড়ির সারোয়াতলী ইউনিয়নের স্থানীয়রা বনটি রক্ষা করায় এই বনে এখনো দুর্লভ সিভিট গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির গাছ ও বন্যপ্রাণী টিকে রয়েছে।
দেশের অতিবিপন্ন সিভিট গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Swintonia floribunda। বৃক্ষটি Anacardiaceae পরিবারের অন্তর্গত একটি উদ্ভিদ। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের পাবলাখালী বন পরিদর্শনে গিয়ে দুর্লভ সিভিটের দেখা পেয়েছিলাম। পাবলাখালী বন ঘুরে দেখার সময় বনকর্মী রিকো চাকমা জানিয়েছেন, পাবলাখালী বনের সবচেয়ে উঁচু বৃক্ষ হলো সিভিট। পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্রমাগত বনজ বৃক্ষ কমে আসলেও পাবলাখালীর এই বনে সিভিটসহ দুর্লভ প্রজাতির নানা বৃক্ষ সংরক্ষিত আছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পাহাড়ের বিপন্ন প্রজাতির বৃক্ষ নিয়ে প্রকাশিত একটি বই ঘেঁটে জানা গেছে, সিভিট গাছ দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়াতে দেখা যায়। গাছটি বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পাওয়া যায়। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামসহ চট্টগ্রাম ও কঙবাজার জেলার কিছু পাহাড়ি এলাকায় স্বল্প সংখ্যক সিভিট গাছ দেখা যায়। বৃহৎ আকৃতির চিরসবুজ সিভিট গাছ উচ্চতায় ৪৫–৫০ মিটার এবং গাছের বেড় ৫–৭ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। গাছের গোড়ার অংশে ঠেসমূল (buttress) রয়েছে; যা প্রায় ৭ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় প্রসারিত। গুঁড়ি বা প্রধানকাণ্ড সরল, সোজা, গোলাকার এবং প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত গুঁড়ি কাণ্ড ডালপালাবিহীন। বাকল সাধারণত মসৃণ, ধূসর বর্ণের এবং বাকলের উপরিভাগে লম্বালম্বি অগভীর ফাটল ও খাঁজ দেখা যায়।
জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ও উপ–বন সংরক্ষক মো. রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, সিভিট বাংলাদেশের একটি খুবই বিপন্ন প্রজাতির বৃক্ষ। বাংলাদেশ সরকারের সিভিট গাছ সংরক্ষণে এটি কাটা ও ধ্বংসে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে আমাদের বন বিভাগের সংরক্ষিত বনে এখনো সিভিট গাছ রয়েছে। কাচালং সংরক্ষিত বন ও পাবলাখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে প্রচুর সিভিট গাছ আছে। কেউ যদি সিভিট গাছ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়; তাহলে আমরা তাদের সহযোগিতা করতে পারব।