এক অভাবনীয় কর্মযজ্ঞের শুভ সূচনা একটার পর একটা স্বপ্নের বাস্তবায়ন

| রবিবার , ১২ নভেম্বর, ২০২৩ at ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ

এক অভাবনীয় কর্মযজ্ঞের শুভ সূচনা হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারদোহাজারী রেললাইনের শুভ উদ্বোধন করলেন। একই সাথে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ আইকনিক রেল স্টেশনের পর্দা উন্মোচন করেন। ১১ নভেম্বর দুপুরে উদ্বোধন শেষে পতাকা উড়িয়ে হুঁইসেল বাজিয়ে টিকেট কেটে তিনি ট্রেনে চড়ে রামু জংশন পর্যন্ত যান। গণমাধ্যম খবর দিয়েছে, এসময় প্রথম যাত্রী ছিল ৩০০ জন। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঞ্চগড় থেকে যেন কক্সবাজারে আসা যায়, সেই ব্যবস্থাও করতে হবে। একইভাবে রাজশাহী, সুন্দরবন থেকে যেন আসা যায়, সেটিও করতে হবে। কক্সবাজারবাসীকে অনুরোধ করব, তারা যেন এখন আমাদের দেশের অন্য অঞ্চলগুলো ঘুরে দেখে আসে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ট্রান্সএশিয়ান নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত হতে চাই। আমরা আধুনিক রেল স্টেশন বানিয়েছি। আপনারা এটা যত্ন নিয়ে ব্যবহার করবেন। কোনো কিছু নষ্ট করবেন না।’

এর আগে রেলসচিব হুমায়ুন কবির বলেন, ‘কক্সবাজারের সঙ্গে শুধু ঢাকা নয়, পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরবঙ্গেও এই রেলপথ যুক্ত হবে।’ রেলসচিব আরও বলেন, ‘পরে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরও সংযুক্ত হবে। একই সঙ্গে বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রমের জন্য এই প্রকল্পের আওতায় ওভারপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে।’

এখানে উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারীরামুকক্সবাজার মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর ১২ বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচলের জন্য উদ্বোধন করা হলো সেই প্রকল্প। আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮৯০ সালে ব্রিটিশ আমলে প্রথম পরিকল্পনা করা হয় চট্টগ্রামকক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারের (সাবেক বার্মা) আকিয়াব বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের। তারপর ১৯১৭ থেকে ১৯২১ সালে চট্টগ্রামদোহাজারী পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মিত হয়। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে পরিকল্পনা অনুসারে কক্সবাজার পর্যন্ত বাকি অংশে রেলপথ তৈরি হয়নি। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে দোহাজারীরামুকক্সবাজার রেলপথ স্থাপনের জন্য ২০১০ সালে প্রথম প্রকল্প নেওয়া হয়।

বড় আনন্দের সঙ্গে আমরা বলতে পারি, একটা একটা করে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। ট্রেনে করে কক্সবাজারে যাওয়ার স্বপ্ন অনেক দিনের। সেই স্বপ্নও পূরণ হলো মানুষের। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন দিনদিন উন্নত হচ্ছে, তেমনি চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে রেললাইন নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও শত বছরের পুরোনো হলেও তা অগ্রসর হয়েছে সন্তোষজনকভাবে। ৯০ বছর আগে রেললাইন নির্মাণ করা হলেও তা দোহাজারীতে গিয়ে থেমে যায়। বর্তমান দোহাজারীকক্সবাজার ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য, পর্যটননগরী কক্সবাজারে যাতায়াত সহজ করা। পাশাপাশি মিয়ানমারসহ ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করা। এখন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলো।

. মো. আনোয়ারুল ইসলাম তাঁর এক লেখায় বলেছেন, রেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা। দরিদ্র মানুষের সাশ্রয়ী মূল্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এর কোনো বিকল্প নেই। রাষ্ট্রের এই গুরুত্বপূর্ণ সেবা অতীতে মুখ থুবড়ে পড়ে গিয়েছিল। বিগত সরকারের আমলে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে অনেক রেল কর্মচারীকে বিদায় করা হয়েছে। অনেক স্টেশন স্থবির হয় যায়। রেল এতটাই অবহেলিত হয়ে পড়ে যে, প্রচলিত মুখে শোনা যেত কয়টার ট্রেন কয়টায় যায়! এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পৃথক রেলপথ বিভাগ এবং পৃথক রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি উপলদ্ধি করেন দেশের প্রত্যন্ত এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সাশয়ী মূল্যে যোগাযোগ সুবিধা দেওয়া সম্ভব এবং সেটা রেলের মাধ্যমেই। এর ফলে তিনি বাংলাদেশের প্রতিটি জেলাকে রেল নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে তিনি ১৯৯৮ সালে চালু হওয়া বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতুর ওপর রেলওয়ে নেটওয়ার্ক সংযুক্ত করে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের যোগাযোগ স্থাপন করেন।

একটি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে একটি সমন্বিত যোগাযোগ বা যাতায়াত ব্যবস্থা। রেল যোগাযোগ এক নেটওয়ার্কের মধ্যে চলে এসেছে। এই অর্জন সম্ভব হয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। আমরা এই অভাবনীয় কর্মযজ্ঞের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে