রেল গাড়িতে করে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে ফরিদপুর গেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বিতল পদ্মা সেতুতে সড়ক চলাচল উদ্বোধনের সোয়া এক বছর পর গত ১০ অক্টোবর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া স্টেশন থেকে বহুল প্রতীক্ষিত রেল সংযোগের উদ্বোধন করেন তিনি। সকালে প্রধানমন্ত্রী সড়ক পথে মাওয়া পৌঁছেন গাড়িবহরে করে। পরে মাওয়া স্টেশনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ট্রেনে চড়েন একটার কিছু সময় আগে। ১২টা ৫৯ মিনিটে তাঁকে বহনকারী ১৪ কোচের ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে ফরিদপুরের ভাঙ্গার উদ্দেশ্যে। ৫৪ মিনিট পর বেলা ১টা ৫৫ মিনিটে সেটি পৌঁছে গন্তব্যে। আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, শেখ হাসিনা এই পথে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করলেও ঢাকা থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে আগামী ১ নভেম্বর থেকে। ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত চলাচলকারী সুন্দরবন এক্সপ্রেস, ঢাকা থেকে যশোরের বেনাপোল পর্যন্ত চলাচলকারী বেনাপোল এক্সপ্রেসের রুট পাল্টে চলবে পদ্মা সেতু হয়ে। পাশাপাশি রাজশাহী থেকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পর্যন্ত চলাচলকারী মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটির যাত্রাপথ বাড়বে। সেদিন থেকে এই ট্রেনটি চলবে রাজশাহী থেকে ঢাকা পর্যন্ত। এই রুট তিনটি চালুর পর মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলা রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে। এছাড়া ভাঙ্গা–পাচুরিয়া–রাজবাড়ী সেকশনও পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পদ্মা সেতু দিয়ে দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলকে যুক্ত করা এই রেললাইন সাধারণ কোনোকিছু নয়। পদ্মা সেতু দিয়ে দুই সারি কনটেইনারবাহী মালগাড়ি রেলপথে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নতুন উন্নত এই রেল নেটওয়ার্ক থেকে দেশকে লাভবান করতে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলে গড়ে তুলছে প্রায় ১৮টি ইকোনমিক জোন। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে পারলে সেখানে প্রায় ৭.৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হবে বলে সরকারের আশা। দেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠীর ভাগ্য বদলে দেবে এই রেলপথ, যা সম্ভব হচ্ছে পদ্মা সেতুর কারণে। কিন্তু তাঁরা বলেন, দেশের গর্ব এই মেগাস্ট্রাকচারের সুফল ভোগ করার চেয়ে প্রকল্পটির খুঁত ধরতে আজও ব্যস্ত একটি গোষ্ঠী। নিজ দেশের সাফল্যে অদ্ভুতভাবে হীনম্মন্যতায় ভোগা এসব মানুষ পদ্মা সেতুর খরচ নিয়ে অবান্তর প্রশ্ন তোলে। তাই বারবার বলতে হয়, এই সেতু শুধু একটি সেতু নয়, বাংলাদেশকে গরিব দেশ বানিয়ে রাখার দেশি–বিদেশি সব ষড়যন্ত্রের স্রোতের বিরুদ্ধে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে দেশকে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর মহাকাব্য মূর্ত হলে তা দেখতে পদ্মা সেতুর মতোই হয়।
নানামুখী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কথিত ব্যক্তি বা সংস্থার চক্রান্ত–ষড়যন্ত্রকে ধূলিসাৎ করে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করেছেন স্বপ্নের পদ্মা সেতু। শেখ হাসিনা দৃঢ়চিত্তে ও নির্ভীক সাহসিকতায় দেশপ্রেমে অত্যুজ্জ্বল ব্রতকে ধারণ করে ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘আমরাও পারি’।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘নদীশাসন, প্রতি বছর বন্যার আশঙ্কা, ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা, ডিপ পাইল ফাউন্ডেশন, নদীর নরম তলদেশ, এক্সট্রিম স্কাওয়ার ডেপথ, জমি অধিগ্রহণ আর এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসন, পরিবেশ রক্ষা করা, এই মেগা প্রকল্প সমন্বয়, সর্বোপরি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করার মেগা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সফল হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি শুধুই মেগাস্ট্রাকচার তৈরিতে সাফল্যের গল্প নয়। সর্বগ্রাসী এই পদ্মা নদী পাড়ি দিতে গিয়ে প্রতিবছর কয়েকশ’ মানুষের মৃত্যু ঠেকিয়ে দিয়েছেন তিনি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের মর্যাদার প্রতীক। তিনি আজ সারা পৃথিবীতে সফলতার উজ্জ্বল উদাহরণ। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ পৃথিবীতে জায়গা করে নিয়েছে মর্যাদার অনন্য আসনে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার মূল চাবিকাঠি যাঁর হাতে, তিনি হলেন শেখ হাসিনা। আকাশচুম্বি চ্যালেঞ্জ আর একের পর এক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে তিনি ছুটে চলেছেন তাঁর কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। রচনা করে চলেছেন অগ্রগতির নতুন মাইলফলক। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন সাফল্য–গাথা। সড়ক, রেল ও আকাশপথে চলাচল ব্যবস্থা উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা ফরিদপুরে জনসভায় বলেছেন, বাংলাদেশকে সার্বিকভাবে উন্নয়ন করে বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এই অগ্রযাত্রাকে অভিনন্দিত করা অত্যাবশ্যক।