জন্ম পরবর্তী লালন করে আসা ধর্মীয় অনুভূতি আর বিশ্বাসগুলো কি হুট করে বাদ দিয়ে দেওয়া যায়। স্বাধীনতার জন্য যে সংগ্রাম এটাও তো আর ধর্মের বাইরে নয় ইসলামের দৃষ্টিতে প্রত্যেক মানুষই জন্মগতভাবে স্বাধীন। মানুষ মহান সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কারও দাস নয়। প্রত্যেক মানুষের স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার অধিকার ইসলামে স্বীকৃত। কোনো অবস্থাতেই মানুষের এ জন্মগত অধিকার ক্ষুণ্ন করার অনুমতি কাউকে দেওয়া হয়নি। কিন্তু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা যখন আমাদের এ অধিকার ক্ষুণ্ন করতে চাইলো আমাদের পূর্বপুরুষরা জন্মগত এই অধিকার রক্ষার জন্য নেমে পড়লো যুদ্ধে আর সিয়াম–সাধনার মাস পবিত্র রমাদ্বান মাস যখন চলে আসলো রণাঙ্গনের শত প্রতিকূলতা ডিঙিয়েই অনেক মুক্তিযোদ্ধারা তখন রেখেছেন রোযা নিয়মিত পড়েছেন তারাওবীহ্‘র নামাজও। কোথাও রোজাদারদের জন্য আলাদা দল গঠন করা হয়েছে এবং তাঁদের ভারী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এমনকি যেদিন কোনো অভিযান থাকবে না, সেদিন সবাই রোজা রাখবেন এমন সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু মানুষরূপী এই হায়েনারা রমজানের মতো পবিত্র মাসেও বিস্তার ঘটিয়েছিল পাইকারি হত্যার যন্ত্রজাল। আমরা এখন ইফতার ও সাহরীর সময় মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসা মুয়াজ্জিনের এ‘লান এবং আজান শুনতে পাচ্ছি আর সেই সময় বাঙালি মুসলমানরা শুনেছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গোলাবারুদের সেই ভীতিপ্রদ শব্দ। তারা রমজানের পবিত্রতা রক্ষা না করে নিয়ে নিয়েছিলো বহু বহু তাঁজা প্রাণ। আজকের বাস্তবতায় আমাদের কাছে রোযা–রমজানের চিত্র যেমন, সেদিনের যুদ্ধপ্রহরে নিঃসন্দেহে তা এ রকম ছিল না। শোকরিয়ার বিষয় যে তবুও ধর্মপ্রাণ বাঙালি মুসলমানরা নিজেদের ধর্ম–কর্ম থেকে বিচ্যুত হয়নি। অথচ এখন পরিবেশ অনুকূলে থাকা সত্ত্ব্বেও মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়া অনেক তরুণ–তরুণী ও বাঙালি মুসলমানদেরকে রমজানের রোযা পালনে অনীহা দেখা যায়। আফসোস এদের জন্য। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর বাঙালির সশস্ত্র সংগ্রামের পথ ধরে বাংলার বুকে এসেছিলো স্বাধীনতা ও বিজয় আবার সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পবিত্র রমজানের রোযার শাশ্বত বিধান।