অবশেষে চট্টগ্রাম বন্দরে বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন লাভ করেছে। গতকাল রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১৩ হাজার ৫২৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকার বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট অনুমোদন পেয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন। বে টার্মিনাল নির্মাণের জন্য সহায়ক এই প্রকল্পটি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া অন্যতম বড় প্রকল্প বলে সূত্র জানিয়েছে।
বন্দর সূত্র জানিয়েছে, ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০৩১ সালের জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে প্রকল্পটি একনেকে তোলা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় সাগরের ব্রেকওয়াটার ও নেভিগেশন চ্যানেল তৈরির পাশাপাশি রেল, সড়কসহ যাবতীয় অবকাঠামো এবং ব্যাকইয়ার্ড ফ্যাসিলিটিসহ প্রয়োজনীয় সব পরিষেবা নির্মিত হবে। গতকাল একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটির আওতায় ব্রেকওয়াটার নির্মাণে ৮ হাজার ২৬৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, নেভিগেশন অ্যাকসেস চ্যানেল নির্মাণে ১ হাজার ৯৭৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, নেভিগেশনে সহায়ক যন্ত্র স্থাপনে ৫৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং রেল ও সড়ক সংযোগসহ অন্যান্য স্থাপনার সাথে সংযোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৩৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ৯ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা এবং বাকি ৪ হাজার ১৯২ কোটি টাকা সরকারি তহবিল থেকে যোগান দেবে। বে টার্মিনাল এলাকায় তিনটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে দুটি সরকারি–বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) এবং একটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করবে।
চট্টগ্রাম বন্দরে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর জন্য ২০১৫ সালে কৌশলগত মহাপরিকল্পনা তৈরি করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেখানে বে টার্মিনাল নির্মাণের কথা বলা হয়। এ নিয়ে সমীক্ষাও করা হয়। তবে বে টার্মিনাল নির্মাণের জন্য কিছু অবকাঠামোর প্রয়োজন দেখা দেওয়ায় তা নির্মাণে আলাদা প্রকল্প নেওয়া হয়।
নগরীর হালিশহর উপকূলে আগামী একশ বছরের বন্দর হিসেবে বে টার্মিনাল গড়ে তোলার লক্ষ্য চট্টগ্রাম বন্দর নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে গত এক যুগের বেশি সময় ধরে। ২০১৩ সালে নেওয়া এই পরিকল্পনায় কিছু ভূমির সংস্থান ছাড়া তেমন অগ্রগতি হয়নি। একনেকে অনুমোদনের পর বিশ্বব্যাংকের সাথে ঋণচুক্তি সম্পাদিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলা হয়েছে, এর পরপরই নির্মাণ কাজ পুরোদমে শুরু হবে। এই টার্মিনাল নির্মিত হলে চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান সক্ষমতা তিন গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানান, বিশ্বব্যাংকের সাথে ঋণচুক্তি সম্পাদনের পর ব্রেকওয়াটার নির্মাণের কাজ শুরু হবে। শুরু করা হবে চ্যানেল খননের কাজও। একইসাথে টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রমও গতি পাবে। তিনি বলেন, ২০২৮ সালের মধ্যে ব্রেকওয়াটার ও চ্যানেল নির্মাণ শেষ হবে এবং ২০৩১ সালের মধ্যে বে টার্মিনালে জাহাজ নোঙর করবে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর প্রকৃতপক্ষে নদীবন্দর। অথচ আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারায় একটি পূর্ণাঙ্গ সমুদ্রবন্দরের প্রয়োজন রয়েছে। সে লক্ষ্যেই বে টার্মিনাল উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আজ একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে এবং আরও একটি প্রকল্প নেওয়া হবে পাবলিক–প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায়। প্রকল্পটি যাতে দ্রুত শেষ হয় সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে, ভবিষ্যতে ব্যবসা–বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। সে অনুযায়ী একটি বড় সমুদ্রবন্দর কেবল আমাদের জাতীয় চাহিদাই পূরণ করবে না, বরং এটি একটি আঞ্চলিক বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করবে, যা রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।