নগরের সড়ক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) গৃহীত একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। এটি একক ডিপিপি হিসেবে চসিকের এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
জানা গেছে, আগামীকাল মঙ্গলবার একনেক সভার তারিখ নির্ধারিত আছে। ওই সভায় চসিকের প্রকল্পটি উপস্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আজ সোমবার একনেক সভার কার্যতালিকা প্রকাশ হলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে উপস্থাপন করা হবে কিনা। এর আগে ১৬ জুন অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) তথা প্রি-একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।
এ বিষয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, আমাদের আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি মঙ্গলবারের একনেক সভায় উপস্থাপনের সম্ভাবনা বেশি। প্রকল্পটির আওতায় বিমানবন্দর সড়ক সম্প্রসারণ করা হবে। এছাড়া শহরে আরো অনেকগুলো সড়ক মেরামত করা হবে। ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অবকাঠামোগতভাবে ইতিবাচক অনেক পরিবর্তন আসবে শহরে। এদিকে প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ৭৬২ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন করা হবে। এছাড়া ৩৮টি ফুটওভার ব্রিজ, ১৪টি ব্রিজ, ২২টি কালভার্ট ও ১০টি গোলচত্বর করা হবে। এ প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য দিক বিমানবন্দর সড়ককে চার লেনে উন্নীত করা। অর্থাৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চার লেনে উন্নীত হবে বিমানবন্দর সড়ক। এছাড়া সড়কটিতে ৬০০ মিটার ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। বিমানবন্দর সড়ক সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ২০১৭ সালে। ওই বছরের ২১ আগস্ট নগর ভবনে চট্টগ্রাম বন্দরসহ ২১টি সেবা সংস্থার সঙ্গে চসিকের উদ্যোগে সভা হয়েছিল। এতে সব প্রতিষ্ঠান বিমানবন্দর সড়ক সম্প্রসারণে একমত হয়। পরবর্তীতে জাইকার অর্থায়নে অন্য একটি প্রকল্পের আওতায় সড়কটির সিমেন্ট ক্রসিং থেকে নেভি ফ্লোটিলা মোড় পর্যন্ত এবং বোট ক্লাব থেকে বাটারফ্লাই পার্ক পর্যন্ত চার লেইনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু করে চসিক। বিদ্যমান প্রকল্পে নেভি ফ্লোটিলা মোড় থেকে ড্রাইডক ওমেরা পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৪ কিলোমিটার অংশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ডিপিপি সূত্রে জানা গেছে, ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কসমূহ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রথম ২০১৯ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে চসিক। তখন প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ১৬৯ কোটি ৯৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২২ মার্চ প্রকল্প যাচাই কমিটির সভায় প্রকল্পের ডিপিপি সংশোধন করতে নির্দেশনা দেয় চসিককে। আরো কয়েক দফা যাচাই-বাছাই শেষে ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্টসহ প্রকল্পটি সংশোধন করে ২০২১ সালের মার্চ মাসে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে চসিক।
ডিপিপিতে প্রকল্প গ্রহণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বিভিন্ন রাস্তা উন্নয়নের মাধ্যমে যানজট নিরসন হবে। নগরবাসীর জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে। ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের মাধ্যমে পথচারীর নিরাপদে রাস্তা পারাপারের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া শহরের প্রায় এক কোটি জনগণ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে উপকৃত হবেন। এই বিশাল জনগোষ্ঠী জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ডিপিপি অনুযায়ী, প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের ডিপিপিতে ৮০ শতাংশ তথা এক হাজার ৯৯৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা সরকার এবং ২০ শতাংশ তথা ৪৯৯ কোটি টাকা ৮১ লাখ টাকা চসিকের নিজস্ব অর্থায়নে ব্যয় প্রস্তাব আছে। তবে চসিক চায় প্রকল্পটি শতভাগ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়িত হোক। এ বিষয়ে মেয়র বলেন, শতভাগ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য আবেদন থাকবে। এত টাকা দেয়ার সামর্থ্য নেই আমাদের।