মীরসরাই উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জনপদ রসুলপুর। পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামসহ অন্তত ১০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে নেই একটিও প্রাথমিক স্কুল। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে অবশেষে স্থানীয় চেয়ারম্যান নিজের জমিতেই একটি প্রাথমিক স্কুল স্থাপনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু বাধা আসে একটি সেলফিতে স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে মাটি সমান করতে দেখা যায় তাই।
সম্প্রতি হিঙ্গুলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোনা মিয়া নিজের মা সবুরা খাতুনের নামে নিজের নাল জমির দাগের ৪০ শতক জমি দান করার কবলা করে দানকৃত স্থানের একপাশে টিলা কাটছিলেন রাস্তা বানাতে ও জায়গা সমান করতে। সেখানে সেলফি তুলে তা প্রচার করেন ফেসবুকে। এটি অনেকেরই দৃষ্টিগোচর হয়। আর এতেই উঠে বিতর্ক। অবশেষে উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা আসে। সরেজমিনে দেখা যায় এলাকায় প্রায় সহস্র পরিবারের বসতি রয়েছে। পার্শ্ববর্তী ইসলামপুর, বারিগ্রাম, ফরেস্ট অফিসসহ রসুলপুর থেকে অন্তত ৩–৪ কিলোমিটার দূরে স্কুল। আবার সর্বসাকুল্যে প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে নেই একটিও প্রাথমিক বিদ্যালয়। তাই এই এলাকার ৩০০ থেকে ৪০০ শত শিশু কেউ কদমতলা কেউ করেরহাট স্কুলে গিয়ে পড়ালেখা করছে। অনেক শিশু যোগাযোগ প্রতিকূলতার জন্য স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এলাকার বৃদ্ধা সাহেদা বেগম (৬৫), কাঠ মিস্ত্রির স্ত্রী শান্তা আক্তার ( ৩৪), গৃহিনী রাশেদা আক্তার (৩২) ও পাশ্ববর্তী মসজিদের ইমাম নুরুল আলম বলেন, এই এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি আমাদের ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনীদের পড়ালেখার সুবিধার্থে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা। এতে আমাদের সন্তানদের শিক্ষার আলো থেকে ঝরে পড়া বা বঞ্চিত হওয়া থেকে রক্ষা হবে অন্তত। এলাকার শিশু আয়েশা ( ১১) , আরাফাত ( ১০) সহ অনেক শিশু এখানে স্কুল হলে খুবই ভাল হবে বলে জানায়।
এই বিষয়ে বিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা চেয়ারম্যান সোনা মিয়ার বলেন, এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতেই আমি নিজে জমি দিয়ে নিজের অর্থায়নে মানব কল্যাণে এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে চাইছি। এখানে আমার ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থের বিষয় নাই। আর আমি এই উদ্যোগ নেয়ার প্রাক্কালে সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বর্তমান এমপি মাহবুব উর রহমান রুহেল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিনসহ সবার সাথে আলোচনা করেই উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন প্রশাসন বাধা দিয়েছে। আশা করছি, এলাকাবাসী তাদের নিজের ভালোর কথা চিন্তা করে প্রশাসনকে বুঝাতে সক্ষম হবে যে যা করা হচ্ছে তা ব্যক্তি স্বার্থে নয়, এলাকার বৃহৎ স্বার্থে বিদ্যালয় স্থাপন করতে টিলা কাটা হচ্ছে। বাকি কাজের জন্য প্রশাসনের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।
এই বিষয়ে মীরসরাইয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন জানান, এলাকাবাসীর শিক্ষার প্রয়োজনের গুরুত্ব বিবেচনা করে সেখানে বিদ্যালয় স্থাপন করা যেতে পারে। টিলার উপরেই নান্দনিকভাবে সুসজ্জিত করে স্কুল করা যেতে পারে। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, টিলা কাটার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে টিলা না কেটে বিদ্যালয় করলে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।