একটি কাউন্টার থেকে ১০ বাস কোম্পানির টিকেট বিক্রি!

গরিবুল্লাহ শাহ এলাকায় নৈরাজ্য, যানজট, দুর্ভোগ

হাসান আকবর | সোমবার , ১৭ মার্চ, ২০২৫ at ৪:২০ পূর্বাহ্ণ

একটি কাউন্টার থেকেই বিক্রি হচ্ছে অন্তত দশটি বাস কোম্পানির টিকেট। কোম্পানির মিল নেই, মিল নেই রুটে, বাসগুলোর একটির সাথেও অপরটির কোনো সম্পর্ক নেই। এত অমিলের মাঝে মিল শুধু টিকেট বিক্রির ধান্দায়। ছোট্ট একটি কাউন্টার থেকে ৮/১০টি বাস কোম্পানির টিকেট বিক্রির কার্যক্রম চলে। আধা ঘণ্টা পর পর বাসগুলো পুরো রাস্তা দখল করে যাত্রী নিয়ে টানাটানি শুরু করে। আর এতে করে নগরীর গরিবুল্লাহ শাহ (.) রোড এবং এশিয়ান হাইওয়েসহ জিইসি মোড় ও সন্নিহিত এলাকার যান চলাচল মুখ থুবড়ে পড়ে। পুরো রাস্তা দখল করে তারা এমন অরাজকতা সৃষ্টি করে যে, মানুষ অসহায় বোধ করে।

জানা গেছে, সংঘবদ্ধ একটি সন্ত্রাসী চক্র পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। যাত্রীদের টানাটানির সময় প্রায়শ মোবাইল, মানিব্যাগ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে স্থায়ী দুটি বাস টার্মিনাল থাকলেও সেগুলো মানুষের প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ। এতে করে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধভাবে অস্থায়ী বাস টার্মিনাল গড়ে তোলা হয়েছে। নগরীর দামপাড়া গরিবুল্লাহ শাহ মাজার সংলগ্ন এলাকায় তেমনি একটি অস্থায়ী বাস টার্মিনাল গড়ে উঠেছে। এখান থেকে সারা দেশের দূরপাল্লা রুটের এসি, ননএসি, বিশেষায়িত ও স্পেশাল বাসসমূহ চলাচল করে। পুলিশ প্রশাসনের সাথে আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সমঝোতার ভিত্তিতে অস্থায়ী এই টার্মিনাল চালু রয়েছে। এখানে দিনের বেলা বাস আনা হবে না, একটি কাউন্টার থেকে কেবলমাত্র একটি বাস কোম্পানির সার্ভিস দেওয়া, বাস দাঁড় করিয়ে রাখা হবে না, যাত্রী ওঠানামায় ১০ মিনিটের বেশি সময় না নেওয়া, একটির বেশি বাস কাউন্টারের সামনে দাঁড় না করানোসহ বিভিন্ন ধরনের শর্ত দিয়ে কাউন্টারগুলো চালু রাখার অনুমোদন দিয়েছিল পুলিশ।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দামপাড়া বাস কাউন্টারগুলোকে ঘিরে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। রাতেদিনে বিভিন্ন রুটের বিভিন্ন কোম্পানির বাস রাস্তা বন্ধ করে যাত্রী ওঠানামা করানোসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। একটি কাউন্টারের সামনে চারটি পর্যন্ত বাস দাঁড়িয়ে পুরো রাস্তা দখল করে থাকার পরিস্থিতি দেখা যায়।

একটি কাউন্টারের সামনে চারটি বাস কেন? অনুসন্ধান করে জানা গেছে, ছোট্ট একটি কাউন্টার থেকে বিভিন্ন রুটের ৮/১০টি পর্যন্ত বাস সার্ভিসের টিকেট বিক্রি করা হয়। এসব বাস যাত্রী ওঠানোর জন্য কাউন্টারের সামনে এসে হুড়োহুড়ি করে। এভাবে আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা পর পর এলোপাতাড়ি রাখা বাসের দখলে চলে যায় পুরো রাস্তা।

গরিবুল্লাহ শাহ হাউজিং, ডেবার পাড়, জাকির হোসেন রোডসহ সন্নিহিত এলাকার মানুষ এই রাস্তা ধরে চলাচল করেন। কিন্তু বিশৃঙ্খল বাসের দাপটের মুখে এই রাস্তাটি আর চলাচলের উপযোগী থাকে না। এই রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সব গাড়ি জিইসি মোড় হয়ে গন্তব্যে যাতায়াতের চেষ্টা করে। জিইসি মোড়ের আগে গরিবুল্লাহ শাহ (.) মোড় থেকে এশিয়ান হাইওয়ের একাংশও বিভিন্ন গাড়ির দখলে থাকে। এতে জিইসি মোড় ঘিরে যানজট বাড়ে।

একেকটি কাউন্টারকে ঘিরে ৮/১০টি পর্যন্ত বাসের টিকেট বিক্রির জের ধরে যাত্রীদের টানাটানির ঘটনা ঘটে। এ সময় যাত্রীদের কাছ থেকে মোবাইল, মানিব্যাগসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। স্থানীয় একটি সন্ত্রাসী চক্র পুরো ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণ করায় এসবের প্রতিবাদ করলে নির্যাতন নেমে আসে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে সিএমপির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, অস্থায়ী বাস টার্মিনালটি থেকে একসময় এসি বাসগুলো ছাড়ত। অভিজাত বাস সার্ভিসের জন্য এলাকাটি পরিচিত ছিল। কিন্তু গত বেশ কিছুদিন ধরে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। নানা ধরনের বাসের আনাগোনায় রাস্তাটি অনেকটা বেদখল হয়ে গেছে। এলাকাবাসী কিংবা সাধারণ মানুষ দিনেরাতের একটি বড় অংশ রাস্তাটি ব্যবহার করতে পারে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঘরে গৃহবধূর লাশ রেখে পালাল স্বামীসহ পরিবারের লোকজন
পরবর্তী নিবন্ধবান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে নিয়ে আসব