প্রতিটা সম্পর্কেরই একটা মানে থাকে, একটা অর্থবহ নামও থাকে।
এই সম্পর্কের জেরেই মানবকূল তথা প্রাণীজগতের সকল পাত্র–পাত্রীই একে অন্যের নিকটে আসে, ঘনিষ্ঠ হয়, স্বপ্ন দেখে,ঘর বাঁধে।
তারা নিমজ্জিত হয় সুখের সাগরে।
এই সম্পর্কের মাঝেই আবার টানাপোড়েন থাকে, সুখের ক্ষণে ছেদ পড়ে। ভালবাসা, মায়া–মমতায় পড়ে ভাটা। এই ধরণীর সকল সুখপ্রত্যাশী পাত্র–পাত্রীরাই তখন হয়ে পড়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ়, হতাশাগ্রস্থ।
পানসে হয়ে যায় অতীব মধুর সম্পর্কটা। সম্পর্কের মান আর অবশিষ্ট থাকে না। শুধুমাত্র মান–মর্যাদাহীন সম্পর্কের নামবা চিহ্ন রাখতেই এবং এর পতাকা বহন করতেই এখন তারা সদা–সর্বদা ব্যস্ত,তটস্থ। প্রাপ্তিযোগ চাওয়ার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় তালমিলিয়ে চলতে চলতে একটা সময় তারা হাফিয়ে ওঠে।
কারণ, এর মাঝে তখন আর কোনো আন্তরিকতার বিন্দুমাত্র অবশিষ্ট থাকে না। কৃত্রিমতা দিয়ে খুব বেশিদিন পথচলা যায় না।
কেউ কেউ আবার পছন্দ–অপছন্দের খোঁড়া যুক্তি প্রদর্শন করে এড়িয়ে যায় তার প্রতি নিবেদিতপ্রাণ কোন সত্তাকে। উচ্চাশা আর উচ্চাকাঙ্ক্ষার নিকটে হেরে যায় নির্মল–নিষ্কলুষ ভালবাসা,হেরে যায় এর পাত্র–পাত্রীরাও।
সুবিধাভোগী একটা পক্ষ তখন হয়ে যায় আরো নির্মম, নির্দয়,নিষ্ঠুর।
অন্যের ত্যাগী,খাঁটি ভালবাসার সুযোগে সে শুরু করে অবহেলা।
জীবন হয়ে পড়ে তখন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার অপর এক নাম। তবুও তো এর বাতিটা মিটমিট করে হলেও জ্বলে। কারণ, একটা চরিত্র তখনও তার অপার ত্যাগের বিনিময়ে টিকিয়ে রাখতে চায় চির আরাধ্য অথচ অতিশয় পানসে ম্রিয়মাণ সম্পর্কটাকে।
নিজে পরাজয় বরণ করে অন্যকে জয়ী করে হৃদয়ের গহীনে বুকফাঁটা আর্তনাদ লুকিয়ে রেখে ফেটে পড়ে গগন বিদারী চিৎকারে।
তারপর এমনও একটা সময় আসে যখন জীবনটা তার নিকটে হয়ে ওঠে অত্যন্ত বিষাদের।
আত্নহনননের পথ খুঁজতে থাকে সে।
একটা সময়ে সে উপযুক্ত সুযোগও পেয়ে যায়।
আর তারপর হারিয়ে যায় সে অজানাতে নিরুদ্দেশ হয়ে।
অহর্নিশি অন্যের সুখ কামনা করা মানুষটি তখন হয়ে যায় ধূসর অতীত, মরীচিকাময় স্মৃতির ডায়েরিতে ঠাঁই হয় তার।
একটা সময় ডায়েরির পাতাতেও পঁচন ধরে।
মানুষের মত শ্রেষ্ঠ জীবই যখন তার মর্যাদা বুঝল না তখন স্মৃতির ডায়েরির আর কি দোষ!
মনুষ্য জীবাত্নাই যেখানে অপারগ তখন প্রাণহীন সে কিভাবে এতবড় দুঃখের বোঝা বহন করবে?
এভাবেই অবশেষে যবনিকাপাত ঘটে একটা নিদারুণ আর্তনাদের, করুণ অধ্যায়ের।