একজন দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ

মো. মুরাদ চৌধুরী | বুধবার , ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ

মধুমতি নদী বিধৌত গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়ার এক নিভৃত পল্লীতেই ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। শৈশব কৈশোর কেটেছে টুঙ্গীপাড়ায়। বাবার দেখা পেতেন কদাচিৎ। পিতা শেখ মুজিবুর রহমান জেলজুলুম, রাজরোষ ছিল তাঁর নিত্য সহচর। রাজনৈতিক আন্দোলন এবং সংগঠন নিয়েই শেখ মুজিবুর রহমানের দিনরাত্রি, যাপিত জীবন। শেখ হাসিনা গ্রামবাংলার ধুলোমাটি আর সাধারণ মানুষের সাথেই বেড়ে উঠেছেন। রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় কিশোর বয়স থেকেই তাঁর রাজনীতিতে পদচারণা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগের নেত্রী হিসাবে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ৬ দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১১দফা আন্দোলন, ৬৯এর গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮১ সালের ১৩১৫ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তাঁর একটানা অকুতোভয় সংগ্রাম। জেলজুলম, অত্যাচার কোনোকিছুই তাঁকে তাঁর পথ থেকে টলাতে পারেনি এক বিন্দু। বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনার প্রথমবারের (১৯৯৬২০০১) শাসনকাল চিহ্নিত হয় স্বর্ণযুগ হিসেবে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অর্জিত হয় ঐতিহাসিক বিজয়। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন দেশে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা এবং ২০১৮ সালে ৩০ শে ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে নিরঙ্কুষ বিজয় লাভ করে। সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে দেশবাসী আজ তার সুফল পাচ্ছে। ৩০ বছরের গঙ্গা পানিবন্টন চুক্তি, যুদ্ধাপরাধীর বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, জাতীয় চারনেতা হত্যার বিচার, দশট্রাক অস্ত্র মামলা বিচারে শেখ হাসিনা অসীম সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্রর সংখ্যা ছিল মাত্র ২৭ টি, ২০১৮ তে ১২৪টি, ২০২৩ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১৫৩। আমাদের চাহিদার ৯৮% পূরণ করে দেশীয় ওষুধ। তৈরি পোশাক রপ্তানিকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়, চীনের পরে। স্বাস্থ্যসেবাই হচ্ছে অমূল পরিবর্তন। বছরের প্রথম দিন সবার হাতে হাতে বই তুলে দেওয়া। বাংলাদেশে ডিজিটাল বিপ্লব কিন্তু ঘটে গেছে। খাদ্যেতে স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্জন করেছে দেশ। মাথাপিছু আয় ২৮২৫ মার্কিন ডলার। স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে এখন যান ও রেল চলছে। ঢাকায় মেট্রোরেলে ইতিমধ্যে মানুষ সুবিধা ভোগ করছে, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল আগামী মাসের অক্টোবর ২৮ তারিখে উদ্বোধন হবে। প্রতিটি বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হয়েছে। ১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হয়েছে। বিনামূল্য কোভিড১৯ টিকা দেওয়া হয়েছে। পায়রা বন্দর, পায়রা সেতুও দৃশ্যমান। রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র গঠিত। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর। ৫০০ থেকে ৬০০ আধুনিক মডেল মসজিদ নির্মাণ।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ। ৭০ হাজার পরিবারকে গৃহ প্রদান। কওমি মাদ্রাসায় সনদের স্বীকৃতি। বিধবা, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের ভাতা নিশ্চিতকরন। দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ বড় একটি মাইলফলক। সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, যার মাধ্যমে অতি সমপ্রতি জাতিসংঘ কর্তৃক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা সম্মাননা পেলেন। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। কূটনীতি ও সমুদ্রজয়ে মাইলফলক স্পর্শ করেছে। অমিত সম্ভাবনার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। সহজ সারল্যে ভরা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন। মেধামনন, কঠোর পরিশ্রম, সাহস, ধৈর্য, দেশপ্রেম ও ত্যাগের আদর্শে গড়ে উঠেছে তাঁর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাঁর অবদান আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ইতোমধ্যে তিনি শান্তি, গণতন্ত্র, স্বাস্থ্য ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নয়ন এবং দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে সৌভ্রাতৃত্ব ও সমপ্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য ভূষিত হয়েছেন মর্যাদাপূর্ণ অসংখ্য পদক ও পুরস্কারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযানবাহন চলাচলে আইনের যথাযথ প্রয়োগ চাই
পরবর্তী নিবন্ধজাতীয় মাছ