সদরঘাটের দক্ষিণ নালাপাড়ায় মা–মেয়েকে জবাই করে খুনের দায়ে অভিযুক্ত বেলাল হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ সময় টিটু সাহা নামের অপর একজনকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রামের ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ সিরাজাম মুনীরার আদালত এই রায় ঘোষণা করেন।
এ সময় দণ্ডপ্রাপ্ত দুজন কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। রায়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে সরকার পক্ষের আইনজীবী দীর্ঘতম বড়ুয়া আজাদীকে বলেন, ১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে বিচারক এ রায় ঘোষণা করেছেন। দণ্ডিত বেলাল হোসেন কুমিল্লার মুরাদনগরের কোরবানপুর এলাকার মন মিয়ার ছেলে। তার সহযোগী টিটু একই এলাকার নেপাল সাহার ছেলে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ৭ মে সদরঘাটের দক্ষিণ নালাপাড়ায় নিজ ঘরে খুন হন মাংসের দোকানদার শাহ আলমের স্ত্রী নাছিমা বেগম ও তাদের ১০ বছর বয়সী মেয়ে রিয়া আক্তার পাল্গুনী। এ ঘটনায় শাহ আলম সরদঘাট থানায় মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, দক্ষিণ নালা পাড়ার মোবাশ্বের মিয়ার ছয় তলা ভবনের চতুর্থ তলায় পরিবার ও খালাতো ভাই বেলাল হোসেনকে নিয়ে থাকতেন শাহ আলম। প্রতিদিনের ন্যায় তিনি মাংসের দোকানে কাজ করছিলেন। দোকানে তাকে সহযোগিতা করতেন খালাতো ভাই বেলাল হোসেন। হঠাৎ ফোন পেয়ে তিনি বাসায় গিয়ে দেখেন স্ত্রী নাছিমা বেগম ও মেয়ে পাল্গুনী মৃত পড়ে আছে। তাদেরকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। বাসা থেকে লুট হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার টাকা, ৪ ভরি স্বর্ণালংকার ও দুটি মোবাইল ফোন।
সূত্র জানায়, অজ্ঞাত ব্যক্তিতের আসামি করেই মামলা করেছিলেন শাহ আলম। কিন্তু পুলিশের তদন্তে উঠে আসে শাহ আলমের খালাতো ভাই বেলাল হোসেনের নাম। একপর্যায়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে হাজির করা হলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে বেলাল জবানবন্দিও দেয়। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, প্রতিদিনের ন্যায় শাহ আলম দোকানে কাজ করছিলেন। পরিকল্পনা মতো সুযোগ বুঝে আমি ১০ টার দিকে বাসায় যায়। ভাবি নাছিমাকে আলমিরার চাবি দিতে বলি। কিন্তু সে চাবি দিচ্ছিল না। এতে আমি ক্ষুব্দ হয়ে নাছিমাকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করি এবং ছুরিকাঘাত করি। পাশাপাশি গলাতেও ছুরি চালায়। চিৎকার শুনে ঘরে ঢুকে পড়ে পাল্গুনী। তখন তাকে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে জবাই করি। এরপর টাকা ও স্বর্ণের সাথে নিয়ে সটকে পড়ি। নাছিমার কাছে কয়েক লাখ টাকা ও কিছু স্বর্ণ ছিল তা আমি জানতাম। আদালতসূত্র জানায়, তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবর বেলাল হোসেন ও টিটু সাহার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় পুলিশ। এরপর ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই তাদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক।