একই যুবক-যুবতীর তিনবার বিয়ে

পুত্রবধূর মামলায় শ্বশুর কারাগারে

হাবীবুর রহমান | রবিবার , ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

একজন যশোরের ফারহানা ইয়াসমিন। অন্যজন চট্টগ্রামের আব্দুল আহাদ মর্তুজা। এক, দুইবার নয়, এ যুগল বিয়ে করেছেন তিনতিনবার। গতকাল চট্টগ্রামের মেট্রো আদালতে এ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, তিনবার বিয়ে হলেও ফারহানাকে ঘরে তুলছিল না আহাদ মর্তুজার পরিবার। কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে ফারহানা তাই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে চলে আসেন এবং আহাদ মর্তুজার বাড়ির সামনে যান। সেখানে শ্বশুর মর্তুজা সিদ্দিক চৌধুরী, শাশুড়ি রহিমা বেগম ও স্বামী আব্দুল আহাদ মর্তুজা মারধর করেন বলে অভিযোগ ফারহানার। আরো জানা গেছে, ফারহানার শ্বশুর মর্তুজা সিদ্দিক চৌধুরী মারসা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

আদালত সূত্র জানায়, স্বামীর অধিকার পেতে ফারহানা গত শুক্রবার নাসিরাবাদ হাউজিংয়ের রোড নং ৯ এর ৫ নং বাড়ির সামনে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর তিনি নগরীর পাঁচলাইশ থানায় গিয়ে স্বামী আব্দুল আহাদ মর্তুজা, শ্বশুর মর্তুজা সিদ্দিক চৌধুরী ও শাশুড়ি রহিমা বেগমের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। তখন থানা পুলিশ শ্বশুর মর্তুজা সিদ্দিক চৌধুরীকে ডেকে নেয় এবং ফারহানার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখায়।

আদালত সূত্র আরো জানায়, গ্রেপ্তার পরবর্তী গতকাল মর্তুজা সিদ্দিক চৌধুরীকে আদালতে হাজির করা হলে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহ তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সাথে ফারহানা ইয়াসমিনকে হাটহাজারীতে অবস্থিত সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীন সেইফ হোম(নিরাপদ হেফাজত) পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী শফিউল আজম।

মর্তুজা সিদ্দিক চৌধুরীর আইনজীবী জিয়া হাবিব আহসান আজাদীকে বলেন, মক্কেলের পক্ষে আমরা জামিন চেয়ে আবেদন করেছি। আগামীকাল (আজ) শুনানি হতে পারে। তিনি বলেন, যুগলের তিনবার বিয়ে হয়েছে। যুবতী ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজের শরীরে আঘাত করেছেন, এমন চিহ্ন রয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, ফারহানা ইয়াসমিন যশোরের শার্শা থানার যাদবপুর এলাকার মো. জিল্লুর রহমানের মেয়ে। থানায় করা মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, আব্দুল আহাদ মর্তুজার সাথে ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কাজী অফিসের মাধ্যমে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক রেজিস্ট্রিকৃতভাবে তার বিয়ে হয়। বাবা মর্তুজা সিদ্দিক চৌধুরী এই বিয়ে মেনে না নেওয়ায় ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পারিবারিকভাবে তাদের দ্বিতীয়বারের মতো বিয়ে হয়। পরবর্তীতে বাবা, মায়ের চাপে আহাদ মর্তুজা ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তাকে তালাক দেন। জোরপূর্বক তার কাছ থেকে স্বাক্ষর নেওয়া হয়।

এজাহারে বলা হয়, তালাকের পর আহাদ মর্তুজা নানা প্রলোভন দেখিয়ে এবং বাবা, মার পরামর্শে একই বছরের ১ জুলাই তৃতীয়বারের মতো তাকে ফের বিয়ে করেন। দেনমোহর ধরা হয় এক কোটি টাকা। এর কিছুদিন পর ঘরে তোলার কথা বললে ফের সমস্যা সৃষ্টি হয় উল্লেখ করে ফারহানা বলেন, ঘরে তোলার কথা বলায় আহাদ মর্তুজা তাকে বিভিন্ন ধরনের কটূক্তি করতে থাকেন। একপর্যায়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ জন্য তিনি গত শুক্রবার দুপুরে নাসিরাবাদের বাসার সামনে যান। সেখানে তাকে পথরোধ করে এলোপাথারি মারধর করা হয়। হত্যার উদ্দেশ্যে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত করা হয়। গলা চেপে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করা হয়। শোর চিৎকার করলে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যায় বলে এজাহারে উল্লেখ করেন ফারহানা ইয়াসমিন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভাসানচরে গ্যাসের আগুনে দগ্ধ ৯ রোহিঙ্গা, এক শিশুর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধপ্রবাসী বন্ধুর পাঠানো স্বর্ণের লোভ সামলাতে না পেরে…