এই জনদুর্ভোগের দায় কার?

দিলরুবা আক্তার চৌধুরী | রবিবার , ৭ জুলাই, ২০২৪ at ৮:৩৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের চাকতাই খালের একটা শাখা চকবাজারে অবস্থিত। বর্তমানে এটাকে খাল বললে ভুল হবে। বিশাল এক ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা যায় সংশ্লিষ্ট সকলের অদূরদর্শিতা ও সচেতনতার অভাব। জানি না কী করে রাস্তার উপর কাঁচা বাজার বসে? রাস্তার দুধারে কাঁচা বাজার বসাতে পঁচা সবজি দোকানদাররা রাস্তায় ও খালে ফেলে ফলে একদিকে যেমন খাল ভরাট হয় অন্যদিকে রাস্তার উপর পঁচা সবজি পঁচে গলে দুর্গন্ধ তৈরী হয় ও জনগণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। একই অবস্থা চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের। এখানে যেমন আছে আড়ত তেমনি আছে রাস্তার দুধারে কাঁচা বাজার। যারফলে পঁচাগলা সবজি রাস্তায় ফেলে সারা বছরই মানুষ দুর্ভোগের শিকার। যেকারণে একদিকে পরিবেশ দূষিত হয়, নালা ও খাল ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতা তৈরী হয়, রোগজীবাণুর প্রাদুর্ভাব হয়। চকবাজারে আশেপাশের আবাসিক ভবনের গৃহস্থালীর ময়লা খালে ফেলে খাল ভরাট করছে। দুই একদিন পরপর সিটি কর্পোরেশনের ময়লা তোলার গাড়ি খাল থেকে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা তুলে বিশাল বিশাল ময়লার স্তুপ করছে, বাতাসে ভয়াবহ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছে। এসব নোংরা আবর্জনার মধ্যে অন্যান্য দ্রব্যের সাথে পচনহীন প্লাষ্টিকের বোতল ও পলিথিন ব্যাপক দৃশ্যমান। একদিকে সিটি কর্পোরেশন ময়লা তোলে আবার দুএকদিন পর আবার ভরাট হয়, এতে রাষ্ট্রীয় টাকার ব্যাপক অপচয় হচ্ছে। আর সাধারণ মানুষ যুগের পর যুগ এ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে চকবাজার ও বাকলিয়া এলাকায় অনেকগুলো সরকারিবেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে এবং ভুক্তভোগী সংশ্লিষ্ট সকলেই। বিশেষ করে বাকলিয়ায় চট্টগ্রামের একমাত্র সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় জলাবদ্ধতা থাকে। এই জনদুর্ভোগের দায় কার? দায় সংশ্লিষ্ট সবার। কারণ আমাদের দেশপ্রেম এখন তলানীতে। যারা ভবন থেকে ময়লা ও প্লাস্টিকের জিনিস খালে ফেলছেন তারা কি বোঝেন না এর পরিণতি কী? আর দোকানদার পচা সবজি পথে ও খালে ফেলে জনদুর্ভোগ তৈরী করছে তার জন্য কি তাকে এই অপকর্ম থেকে বিরত করার বা শাস্তির ব্যবস্থা হয়েছে? প্রতিনিয়ত সিটি কর্পোরেশন প্রচুর অর্থ ব্যয় করেও স্থায়ী সমাধান দিতে পারছে না তাই বলা যায় এই দুর্ভোগের জন্য সবাই দায়ী। জানি না কোনও সভ্য দেশে চলাচলের রাস্তার উপর কাঁচা বাজার স্থাপন করে জনদুর্ভোগ তৈরী করে কিনা? বারংবার রাস্তা কেটে পাঁচ ছয়মাস চলাচল বন্ধ রেখে অনেক দূর দিয়ে ঘুরে যাতায়াত করতে বাধ্য করে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ায় কেনো? একেবারে কি সমাধান করা যায় না? এর সাথে যুক্ত হয়েছে ব্যাটারিচালিত সারি সারি গাড়ির লাইন যা যানজট তৈরী করে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছে। এসব অব্যবস্থাপনা দেখার কি কেউ নেই? এর থেকে পরিত্রাণের সহজ উপায় পথ ও খালের পাড় থেকে কাঁচা বাজার তুলে দেওয়া। জনসচেতনতা তৈরী করে মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা। প্রয়োজনে ক্যামেরা বসিয়ে বিদেশের মতো দায়ী ব্যক্তিদের জরিমানার ব্যবস্থা করা। পথের উপর ভাসমান দোকানধারদের অন্যত্র স্থানান্তর করা। সরকারি অর্থের অপচয় বন্ধ করে স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করা। পরিশেষে বলবো, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত হোক জনতা / দুর্ভোগ থেকে মুক্তির উপায় জন সচেতনতা।’

লেখক: উপাধ্যক্ষ, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, চট্টগ্রাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমার্কিন মুল্লুকে চট্টগ্রামের ছেলে ইশরাকের গল্প
পরবর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে